ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষাধিক বোরো চাষী বিপাকে

কাজ শেষ না করেই ঠিকাদার বিল নিয়েছে কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ১০ মার্চ ২০১৮

কাজ শেষ না করেই ঠিকাদার  বিল নিয়েছে কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ গৌরনদী ও মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার জনগুরুত্বপূর্ণ একটি খালের মধ্যে স্লুইস গেটের নির্মাণ কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এক কোটি দশ লাখ টাকার বিল তুলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন ধরে স্লুইস গেটের কাজ ফেলে রাখায় গৌরনদী ও কালকিনি উপজেলার লক্ষাধিক কৃষককে বোরো চাষে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিল তুলে নেয়ার পর সাত বছর অতিবাহিত হলেও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বোরো মৌসুমে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে গৌরনদীর খাঞ্জাপুর, দক্ষিণ মাগুরা চতলা খালের (বেবাইজ্জার খাল) বাকাই গ্রামে স্লুইস গেট নির্মাণের জন্য বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ২০১০-১১ অর্থবছরে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা। দরপত্রের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কার্যাদেশ দেয়া হয় মেসার্স আমিন এ্যান্ড কোম্পানী লিমিটেড নামের খুলনার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমিন এ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বভার গ্রহণ করে বরিশালের ঠিকাদার আব্দুস সালাম, জামাল হোসেন ও বদরুল আলম কাজ শুরু করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ কাজ শেষ করে ২০১৩ সালে প্রথম চলতি বিল হিসেবে এক কোটি ১০ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করে। পরবর্তীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয় চলতি বিল হিসেবে ২৬ লাখ টাকার বিল পাওয়ার আবেদন করেন। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, এখনও প্রকল্পটির ব্লক বসান, মাটির কাজ, চ্যানেল কর্তন, এপ্রোচ সড়ক ও রডের কিছু কাজসহ ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার কাজ বাকি রয়েছে। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক কোটি দশ লাখ টাকা বিল তুলে নিয়েছে এবং ২৬ লাখ টাকার বিল পরিশোধের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রভাবশালীদের দিয়ে কর্মকর্তাদের ওপর চাঁপ সৃষ্টি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয় চলতি বিলের ২৬ লাখ টাকা নেয়ার পাঁয়তারা করলেও বিগত সাত বছর ধরে কাজ না করে অসমাপ্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, স্লুইস গেটের কাঠামো নির্মাণ করে জলকপাট বসান হয়েছে। লোহার জলকপাট বসানোর পরে দীর্ঘদিন তা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় মরিচা ধরে বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্লুইস গেটের দুই দিকের চারপাশে ব্লক বসান কাজের কিছুই করা হয়নি। শুধু উইং ওয়াল নির্মাণ করে ফেলে রাখা হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, ঠিকাদার ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ কাজ করে বিগত সাত বছর ধরে লাপাত্তা। এ কাজ সম্পন্ন না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কৃষকদের দুর্ভোগের কথা জানিয়ে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে একাধিকবার লিখিতভাবে আবেদন করার পরেও তারা ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করেননি। স্থানীয়দের অভিযোগ, গৌরনদী ও কালকিনির সীমান্তবর্তী বাকাই স্লুইস গেট নির্মাণাধীন প্রকল্পটি এখন কৃষকের মরণফাঁদ। কাজ শেষ না করায় গত সাত বছর ধরে তা সাধারণ কৃষকদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। খালের মধ্যে বাঁধ দিয়ে স্লুইস গেট নির্মাণ কাজ করায় পানি চলাচল বন্ধ রয়েছে। যে কারণে বোরো মৌসুমে সেচ সঙ্কটের কারণে বোরো আবাদি জমিতে পানি সরবারহে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া সাধারণ পথচারীসহ ১০ গ্রামের মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বদরুল আলম মোবাইল ফোনে বলেন, এলাকাবাসীর অসহযোগিতার কারণে সঠিকভাবে কাজটি শেষ করা সম্ভব হয়নি। এক কোটি দশ লাখ টাকার বিল নেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যতটুকু কাজ করেছি ততটুকু বিল নিয়েছি। গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম সাধারণ কৃষকদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, স্লুইস গেটটির নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় কৃষকদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বিল প্রদানের কথা স্বীকার করে বলেন, ঠিকাদারকে বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও কাজটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে রয়েছে। কৃষকের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন ৫০ ভাগ কাজ শেষ করা হয়েছে।
×