ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উৎপলকান্তি বড়ুয়া

শিয়ালের ইনবক্স

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১০ মার্চ ২০১৮

শিয়ালের ইনবক্স

চারপাশে সবাই এসে ভিড় করেছে। হরিণ, ঘোড়া, হাতি, জেব্রা, খরগোশ, বিড়াল, ভালুক ও শিয়াল সকলে। রাজা মুখ তুলে তাকায়। বনের রাজা সিংহ। রাজা সবার ওপর নজর বুলিয়ে নেয় একবার। তার ভারিক্কি কথার ধরন বজায় রেখে বলল, ও, তোমরা দেখি সবাই এসেছ। খুব ভাল। তো বল দেখি তোমরা কেন এসেছ? কি কারণ? আমাকে কি করতে হবে? আমি কি করতে পারি তোমাদের জন্য? আমি বলি কি, এ বারের মতো শিয়ালকে ক্ষমা করে দিলে হয় না? বিড়াল সবার আগে কথা বলে ওঠে। ছোট্ট ধবধবে সাদা খরগোশ বলে ওঠে- রাজা মহাশয়, আপনিই তো বলে থাকেন, ক্ষমা মহত্বের লক্ষণ। নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলে, তাকে ক্ষমা করে দিতে হয়। হাতি তার কুলার মতো কান দুটো দু’পাশে নেড়েচেড়ে লম্বা শূরটা সামনের-ওপরের দিকে খানিকটা তুলে বলল, হ্যাঁ মহাশয়। আপনি তো মহান। আপনি চাইলে সব পারেন। এবারের মতো শিয়ালকে ক্ষমা করে দিন রাজা মহাশয়। সঙ্গে সঙ্গে হরিণ, ঘোড়া, জেব্রা, খরগোশ ও ভালুক একই সঙ্গে হাতির কথায় সায় দিয়ে বলে ওঠে, হ্যাঁ রাজা মহাশয়, এবারের মতো শিয়ালকে ক্ষমা করে দিন। আমরা তার পক্ষ থেকে কথা দিচ্ছি, সে আর কোনদিন এমন ভুল করবে না। সে নিজেই তার ভুলের জন্য অনুতপ্ত। সবার পেছন থেকে ঘোড়া সামনে দু’কদম এগিয়ে কথাগুলো বলল বনের রাজা সিংহের উদ্দেশে। জেব্রা কিছু একটা বলতে যাবে, ঠিক এ সময়য়ে বনের রাজা সিংহ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, তোমরাই বল, শিয়াল যে অপরাধটা করেছে, তাকে কি ক্ষমা করা যায়। সে কি ক্ষমার যোগ্য? রাজা মহাশয়, শিয়াল ভুল করে অপরাধটা করেছে। সে তার ভুলের জন্য ক্ষমাও চেয়েছে। তার ভুল বুঝতে পেরে সে আরেকবার সুযোগ দেয়ার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করছে। আপনি যদি সে সুযোগ প্রদান করেন- সবিনয়ে বলল এবার জেব্রা। বাঘ তড়াস করে লাফিয়ে উঠে বলল,- শিয়ালের সাহস কত! সে বিড়ালের ই-মেলের ইনবক্সে লিখে জানিয়েছে তার ষড়যন্ত্রের কথা। বিড়ালকে লিখতে ভুল করে আমার ইনবক্সে তার মেসেজটা পাঠিয়েছে বলেই না আমি সত্যিটা মানে, শিয়ালের ষড়যন্ত্রে কথা জানতে পারলাম। জেব্রা বলল,- হ্যাঁ হুজুর আমাদের সবারই ইনবক্সেও শিয়াল সে ষড়যন্ত্রের কথা লিখেছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে তার সঙ্গে দেখা করে, তাকে বোঝালাম, দেখ-তুমি যা বলছ, যা করতে চাচ্ছ তা মোটেই ভাল না। শত হলেও সিংহ আমাদের বনের রাজা। বংশপরম্পরায় উনিই একমাত্র বনের রাজা হওয়ার অধিকার এবং ক্ষমতা রাখেন। তখন শিয়াল নিজে তার ভুল বুঝতে পারে। জেব্রার কথা শেষ হতে না হতেই হরিণ, ঘোড়া, হাতি, খরগোশ, বিড়াল, ভালুক একসঙ্গে বলে ওঠে, আমরা সবাই শিয়ালকে বুঝিয়েছি। সে তার নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে সিংহ হুজুর। সে অনুতপ্ত হুজুর। তাকে সত্যি ক্ষমা করে দিন। হাতি বলল- এ জন্যই না আমরা সবাই তার হয়ে আপনার দরবারে ক্ষমা চাইতে এসেছি হুজুর। তখনই হঠাৎ করে সিংহ রাজার সামনে গিয়ে দু’পা জড়িয়ে ধরে শিয়াল। বলে, হ্যাঁ হুজুর, আমি ভুল করেছি। আমাকে ক্ষমা করুন। আমি এমনটি ভুল আর কখনও করব না। আমাকে আরেকবার সুযোগ দিন। সিংহ রাজা বলল, আমি তো এটাই চেয়েছিলাম। শিয়াল ভুল করেছে। দোষ করেছে সে। ভুল বা দোষের জন্য ক্ষমা তো সে নিজেই চাইবে, তাই না? আমি বাঘের মুখে শিয়ালের ষড়যন্ত্রের কথাটা শুনেছি। কিন্তু এতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা সকলেই শুধু ওর পক্ষে সাফাই-সাক্ষী গাই ছো। যে দোষী, সে নিজের মুখেই ক্ষমা চাওয়া উচিত। এবং শেষ পর্যন্ত শিয়াল তাই করল। এতে আমি খুব খুশি হয়েছি। সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে। ভুল স্বীকার করেছে। সেজন্য আমি শিয়ালকে ক্ষমা করে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত হরিণ, ঘোড়া, হাতি, জেব্রা, খরগোশ, বিড়াল ও ভালুক হাততালি দিয়ে তাদের খুশি প্রকাশ করল। সবাই একই সঙ্গে সিংহ রাজাকে মাথা নিচু করে অভিবাদন জানাল। সিংহ রাজা বলল, দেখ আমি আমার বনের সবাইকে খুব ভালবাসি। আমি চাই, সবসময় বনের সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকুক। সকলে হাসি-খুশি, সুখ-শান্তিতে মিলে-মিশে বসবাস কর। জি হুজুর! আপনি মহান। আপনি মহৎ। -উপস্থিত সকলে সমস্বরে বনের সিংহ রাজার কথায় সায় দিয়ে বলে উঠল। বনের রাজা বলল, কিন্তু, শিয়াল একি করতে ছেয়েছিল? বনের সবাইকে আমার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে তৎপর হয়ে উঠল। তোমরাই বল এটা কি শিয়াল ভাল কাজ করেছে? ঘোড়া তার ঘাড়ের ঝুলানো কেশগুচ্ছ দুলিয়ে বলল, না রাজা মহাশয় শিয়াল মোটেই কাজটি ভাল করেনি। সে ভুল করেছে। তবে সে তার ভুলও বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়েছে। সে তার ভুলের জন্য অনুতপ্ত। সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে বলেই তো তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। সে নিজে ক্ষমা না চাইলে কিন্তু ক্ষমা করে দিতাম না। শিয়াল দু’হাত করজোর করে বলল, না রাজা মহাশয়, এ ভুল আমার আর কখনও হবে না। আর কখনও হবে না। সত্যি বলছি হুজুর, সত্যি। বনের রাজা সিংহ খুশি মনে শিয়ালকে কাছে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। বলে, এই তো চাই, আমার বনরাজ্যে এমনি সবাই ভাল, সুন্দর, সত্য ও সততা নিয়ে দিনযাপন করবে চিরকাল। হরিণ, ঘোড়া, হাতি, জেব্রা, খরগোশ, বিড়াল ও ভালুক একসঙ্গে হাততালি দিয়ে ওঠে। দখিনা সুবাতাস এসে দোল দিয়ে যায় বনের সবুজ গাছ তরুলতায়। সবার মুখে হাসি। খুশিতে মেতে ওঠে সবাই। বনের রাজা সিংহকে ঘিরে ওরা সবাই খুশিতে গেয়ে ওঠে- আমরা বনের সকল পশু/আমরা তো ভাই ভাই আমাদের এই মনের মাঝে/কোনোই বিভেদ নাই। আসুক যতই কাজল নিশি/বজ্র বাদল ঝড় ভয় করি না সিংহ রাজা/আছেন মাথার ’পর। অলঙ্করণ : প্রসূন হালদার
×