ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মশকসঙ্গীত

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১০ মার্চ ২০১৮

 মশকসঙ্গীত

মশক নিধন যজ্ঞ এখনও শুরু হয়নি বা করেনি। শীতের শেষে বসন্তের মাতাল সমীরণে উষ্ণ আবহাওয়া হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে সর্বত্র গরমভাব নিয়ে এসেছে। বসন্ত মানেই শুধু ফুল ফোটা নয়, মশার প্রজননেও তার গূঢ় অবদান থাকে। ফলে এখন ঘরে, বাইরে, অফিসে, আদালতে, এমনকি পাবলিক পরিবহনেও মশারা জেঁকে বসে আছে, উড়ছে, ঘুরছে, হুল ফোটাচ্ছে। শুধু চিরাচরিত রাত্রিকালীন অভিযানেই মত্ত নয় তারা, দিবসের আলোতেও তাদের শাণিত আক্রমণ বেশ জোরালো। কামড় হানে এমনভাবে যে, আক্রান্তজন পীড়িত হয়ে পড়ে অনায়াসে। নিবৃত্ত করার সুযোগও মেলে না বরং মশারা উচ্চৈঃস্বরে গেয়ে ওঠে নিজস্ব সঙ্গীত। সম্মিলিত কণ্ঠে কখনও গেয়ে ওঠে। কখনও এককভাবে। সেই গান মনুষ্যকুলের কাছে নয় শ্রুতি মধুর। তবু সেই সুর বাজে কর্ণকুহরে। মশককুলের যন্ত্রণার মাত্রা এমনভাবে বেড়েছে যে, দিনের বেলায়ও কেউ কেউ ঘরে মশারি টাঙিয়ে তাতে দেহরক্ষা করতে সক্রিয় হয়। রাজধানী ঢাকাতে মশাদের অনুকূল পরিবেশ বেশ রমরমা। সর্বত্র তাদের বসবাস এবং প্রজনন ক্ষেত্র। বাসাবাড়িতে মশার কয়েল, বৈদ্যুতিক ব্যাট অথবা সিটি কর্পোরেশনের নিনাদিত শব্দাক্রান্ত ফগার মেশিনের ধোঁয়া- সবই তুচ্ছ মশক বাহিনীর কাছে। কামান দেগে মশা তাড়ানোর দিন আর নেই। বস্তি থেকে প্রাসাদসম ভবনে মশাদের এখন অবাধ যাতায়াত। নালা নর্দমায়, কালভার্ট, সড়কের খানাখন্দ, বাড়ির টব, আবদ্ধ স্থান- সবখানেই অবাধে বসবাস করছে তারা। মশার উৎপাত নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনও নয় তেমন তৎপর। বরং মশক বিস্তারে তাদের অবদান যথেষ্ট এবং ভয়াবহ বৈকি। মশার দাপট রুখবে সে সাধ্য বুঝি নেই কারও। প্রজননকালে মশকদের ডিম নিধন করা হয়নি বলে তারা অনায়াসে বংশ বিস্তার ঘটাচ্ছে। লাগামহীন তৎপরতায় তাই তারা বেশ গরীয়ান। দুর্দান্ত সাহসে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্তপানে। রক্তের নেশা এমনই যে মৃত্যুভয় পর্যন্ত তুচ্ছ হয়ে যায় তাদের কাছে। সাহসে বুকবেঁধে তাই গান গাইতে গাইতে রক্তপানে নিমগ্ন হয়ে পড়ছে এখন সর্বত্র। সিটি কর্পোরেশন অনেকটা মানহীন বা মশা নিধনে অক্ষম বা তুলনামূলক কম শক্তিশালী ওষুধ প্রয়োগ করে দায় শেষ করছে। যত অসুখ বিসুখ, ততই চিকিৎসা, ততই তার ব্যয়ভার। লাভজনক হয় রোগ নিরাময় কেন্দ্রগুলো সেই সঙ্গে ওষুধ বণিকরা। গত বছর মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়া মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভয়াবহ কষ্টের এই অসুখ। যার রেশ দীর্ঘদিন বহাল থাকে। মানবকুলের এই দুর্ভোগ লাঘবে সিটি কর্পোরেশন কী সব চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল বলে গণমাধ্যমে বেশ প্রচার চালিয়েছিল। প্রচারেই সার। বাস্তবে এই রোগবাহিত মশক নিধনযজ্ঞে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েনি। বরং জনগণকে হিতোপদেশ দিয়ে এসেছে, মশা থেকে দূরে থাকুন। কিন্তু চাইলেই তো আর দূরে থাকা যায় না। বরং মশা চুম্বকের মতো আকর্ষিত হয়ে মানবকুলের শরীর ছেদনে হামলে পড়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার দায়দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের হাতে থাকলেও তারা এ বিষয়ে কৃপা করতে আগ্রহী নয়। তাই এবার অসুখ বিসুখের মাত্রাও বাড়বে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর বাণিজ্য হবে রমরমা। মানুষের পকেট থেকে বেরিয়ে যাবে এন্তার পয়সা কড়ি। কর্তৃপক্ষ তখন হিতোপদেশ ছড়াবে ব্যাপক অর্থ ব্যয় করে। মশামুক্ত রাজধানী গড়ার স্বপ্ন দেখায় না কর্তৃপক্ষ। বরং মশাযুক্ত শহরে সহ্য ক্ষমতার পরীক্ষা দিতেই উৎসাহিত বোধ করে যেন! মশা ছিল, মশা আছে, মশা থাকবে এই নীতিতে অটল সিটি কর্পোরেশন আর না পারুক, অন্তত লোক দেখানো হলেও মশক নিধন অভিযান চালু করতে পারেন। তাতে জনগণের কোন উপকার না হোক, অন্তত তারা ভাবতে পারবে, কর্তৃপক্ষ জনসেবায় কতই না তৎপর। মশক সঙ্গীত শুনে শুনে বসন্ত, বর্ষা মৌসুম পার করে যেতে হবে জনগণের। হতে হবে সচেতন মশার বিরোধিতায়। এর বিকল্প নেই।
×