ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়নের লক্ষ্যে ধারাবাহিকতা

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১০ মার্চ ২০১৮

উন্নয়নের লক্ষ্যে ধারাবাহিকতা

গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। গণতন্ত্র বহাল থাকলে উন্নয়ন হয় দেশের, পক্ষান্তরে গণতন্ত্রবিরোধীরা ব্যাহত করে উন্নয়ন। তবে গণতন্ত্রকে আহত করে গণতন্ত্রবিরোধীরা নিজেদের আখের গোছানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। যদিও তাতে শেষ রক্ষা হয় না, তারা নিক্ষিপ্ত হয় ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে। এই গণতন্ত্রবিরোধীরা হতে পারে সামরিক স্বৈরশাসক, কিংবা ছদ্মবেশী গণতন্ত্রী। বাংলাদেশ তাদের প্রথম প্রত্যক্ষ করে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যাকা-ের পর। এখনও সেই অপশক্তি সক্রিয় বলেই গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়, উন্নয়নে নেমে আসে সাময়িক স্থবিরতা। কিছুকাল আগে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমালোচকদের উদ্দেশ করে বলেছেন, গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা আছে বলেই দেশের এত উন্নয়ন হচ্ছে। এ বক্তব্যে কোন যুক্তিশীল মানুষ দ্বিমত পোষণ করবেন না। এইসঙ্গে এ সত্যও উচ্চারণ করতে হবে গণতন্ত্রের সুরক্ষা এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য দেশপ্রেমিক দায়িত্বশীল সরকারেরও ধারাবাহিকতা বাঞ্ছনীয়। ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের অমূল্য দলিল ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে বুধবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসমুদ্রে সভাপতির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে কিছু কথা বলেন যা সময়োপোযোগী ও অতীব দরকারী। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতির সঙ্গে বিগত সরকারগুলোর কর্মকা-ের তুলনামূলক বিচার করার জন্য দেশবাসীর প্রতি তিনি আহ্বানও জানান। সম্প্রতি রোমে এক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে আবারও দুর্নীতিবাজ এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিচার চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হতেই হবে। যারা দুর্নীতি, সন্ত্রাস করবে এবং জঙ্গীবাদে জড়াবে তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। দেশের শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এটা প্রয়োজন। আর আমরা দেশে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। আমরা দেশকে উন্নত এবং জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চাই। আর এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আমরা দুর্নীতি, জঙ্গীবাদ ও স্বজনপ্রীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অপসারণ করতে পারব। বর্তমান সরকার সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি কমিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছে। এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য দুর্নীতিবাজদের বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বলাবাহুল্য, সুনীতির পক্ষে দেশকে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে হলে দুর্নীতির শেকড় উপড়ে ফেলতে হবে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে একটা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। আজকের বাংলাদেশ জাতির পিতার সেই লক্ষ্য সামনে নিয়ে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সারাবিশ্বের সম্মান পেতে যাচ্ছি অতি শীঘ্রই। বর্তমান সরকারের সময়ে মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছেন সরকারপ্রধান। আর সে জন্য যে সরকারের ধারাবাহিকতাও জরুরী, সেটি বলাবাহুল্য। আশা করা যায় দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের গূঢ়ার্থ অনুধাবনে সমর্থ হবেন এবং দেশের জন্য কল্যাণজনক পথরেখার পক্ষেই থাকবেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাংলার মানুষ ভুল করে না।
×