ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উনের সঙ্গে বৈঠকে রাজি ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১০ মার্চ ২০১৮

উনের সঙ্গে বৈঠকে রাজি ট্রাম্প

উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন তার দেশের পারমাণবিক কর্মসূচী নিয়ে আলোচনার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এক বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এই দুঃসাহসী কূটনৈতিক উদ্যোগ যদি সফল হয় তবে দৃঢ়চেতা ও জেদী মেজাজের এমন দুই নেতাকে কাছাকাছি নিয়ে আসবে- যারা এতদিন পরস্পরকে যুদ্ধের হুমকি দিয়ে এসেছেন। খবর নিউইয়র্ক টাইমস। উত্তর কোরীয় নেতার পক্ষে চুং ইউয়িং ইয়ং নামে দক্ষিণ কোরিয়ার একজন কর্মকর্তা ট্রাম্পকে এই আমন্ত্রণ জানান এবং হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। দক্ষিণ কোরীয় দূতও সাংবাদিকদের জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কিম জং উনের বৈঠক দুই মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চুং ইয়োই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে ফেরার পথে সাংবাদিকদের জানান যে, কিম জং উন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যথাশীঘ্র বৈঠকের জন্য তার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে একটি স্থায়ী অপারমাণবিক চুক্তিতে পৌঁছার লক্ষ্যে ট্রাম্পও আগামী মে মাসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে পরে এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প, উত্তর কোরীয় নেতার সঙ্গে তার বৈঠক সম্পর্কে এই মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, কিম দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনা করেছেন কিন্তু তাতে পরমাণু কর্মসূচী বন্ধ করার কথা উল্লেখ করা হয়নি। এই টুইটার বার্তায় ট্রাম্প আরও বলেন, ‘এই সময়ের মধ্যে আশা করি উত্তর কোরিয়া কোন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাবে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, পরিস্থিতির অগ্রগতি হচ্ছেÑ তবে কোন চুক্তিতে না পৌঁছা পর্যন্ত দেশটির ওপর-আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে পরিকল্পনা অনুযায়ী বৈঠকের প্রস্তুতিও চলবে।’ চুং ইয়োই ইয়ং, যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে বৈঠকের বিষয়ে আলোচনার জন্য এখন ওয়াশিংটন রয়েছেন। মূলত তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুনজায়ে ইনের একজন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। চুং গত সোমবার উত্তর কোরিয়া সফরের সময় কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাতকালে তিনি ট্রাম্পকে আলোচনা বৈঠকে আমন্ত্রণের কথা জানান। চুং বলেন, উত্তর কোরীয় নেতা এ সময় একথাও বলেন যে, চলতি মাসের প্যারা অলিম্পিক গেমস শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার যে পূর্ব নির্ধারিত যৌথ সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হবেÑ এ বিষয়টিও তিনি অবহিত। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে চলা উত্তেজনা ও বাগ্যুদ্ধের পর দু’দেশের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে এই মুখোমুখি বৈঠকের খবরকে এক ঐতিহাসিক তাৎপর্য এনে দিয়েছে। ট্রাম্প এর আগে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার কোন সম্ভাবনা নেই বললেও কিমের আমন্ত্রণকে ‘অসাধারণ অগ্রগতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ‘ক্ষমতায় থাকা কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট-এর আগে কখনই উত্তর কোরিয়ার কোন শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন নি। ট্রাম্প ও কিমের মধ্যে এই বৈঠকের সম্ভাবনা কূটনৈতিক অঙ্গনে তুমুল আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের প্রায় পুরো সময় এই দুই রাষ্ট্রের মধ্যে তীব্র বাগ্যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। কেউ বলেন, পারমাণবিক বোতাম আমার হাতের কাছেই থাকে। অপর জন বলেন, আমার পারমাণবিক বোতাম ওর চেয়ে অনেক বড়। এমনকি জাতিসংঘ ফোরামে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন- দেশটিকে ‘ফায়ার এ্যান্ড ফিউরি’ দিয়েই জবাব দেয়া হবে। শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিকে কিম জং উনের বোনসহ সে দেশের প্রতিযোগিদের যোগদান এবং প্রেসিডেন্ট মুন জায়েইনের নীরব কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বর্তমান অগ্রগতি- এক ঐতিহাসিক তাৎপর্য এনে দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে খেয়ালি ও হঠকারী বলে অনেকে সমালোচনা করেন। তবে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি যে যথেষ্ট দক্ষ এটি এবার প্রমাণ হয়ে গেল। কারণ দক্ষিণ কোরীয় দূতের (চুং) সঙ্গে তার সাক্ষাতের পূর্ব নির্ধারিত সময় ছিল শুক্রবার। কিন্তু ট্রাম্প যখন জানলেন যে চুং হোয়াইট হাউসের ওয়েস্ট উয়িং (প্রশাসনিক কার্যালয়) এ আছেনÑ তখন তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ডেকে পাঠান এবং কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন। তিনি এত দ্রুততার সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, হোয়াইট হাউসের অনেক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারাও তা আগে থেকে জানতে পারেন নিÑ তাই তারা এক হতবুদ্ধিকর অবস্থার মধ্যে পড়ে যান। ট্রাম্প নিজে চুং কে এ বিষয়টি হোয়াইট হাউসে অবস্থানরত সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করে দেয়ার অনুমতি দেন। প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল দু’টি চির বৈরী দেশের মধ্যে বিদ্যমান শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি অবসানের পূর্বাভাস। ট্রাম্প নিজেও এতটা প্রফুল্লচিত্ত ছিলেন যে, প্রেসিডেন্টের ঘোষিত ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়াম শিল্পের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপ নিয়ে এক অনুষ্ঠান তিনি বর্জন করেন। এছাড়া পর্নতারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টি তিনি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে গেছেন। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ও আলোচনা অনুষ্ঠানের খবরে। বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে দক্ষিণ পূর্ব এশীয় দেশগুলোর মধ্যে নতুন আশাবাদের সঞ্চার হয়েছে। দক্ষিণ কোরীয় নাগরিকদের সর্বস্তরে উচ্ছল আনন্দ ও স্বস্তির চিত্র দেখা গেছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এই খবরে দু’দেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন এবং আলোচনা প্রক্রিয়ায় তার দেশের ভূমিকা রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। অপর দিকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার প্রতি কালক্ষেপণ না করে দ্রুত আলোচনা শুরুর আহ্বান জানান।
×