ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘অগ্রযাত্রায় অদম্য নারী’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী চুমকি

ধাপে ধাপে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১০ মার্চ ২০১৮

 ধাপে ধাপে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সম্প্রতি একটি সংস্থার রিপোর্টে এসেছে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ বেড়েছে। এই রিপোর্টের কড়া সমালোচনা করেছেন নারী ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। তিনি বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দেব, বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ কোনভাবেই বাড়েনি। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ অনেক কমে যাচ্ছে এবং সকলের মধ্যে সচেতনতা আসছে। শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক সেমিনার ও সম্মাননা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ‘অগ্রযাত্রায় অদম্য নারী’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দৈনিক ভোরের কাগজ। আন্তর্জাতিক ওই সংস্থার রিপোর্ট বাল্যবিবাহের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই চ্যালেঞ্জটা আমরা গ্রহণ করছি। শুধু আমরা নয়, আমাদের বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে। বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য আমরা একযোগে কাজ করে যাচ্ছি। অনেক রিপোর্টে দিয়ে ফেলে ইন্টারন্যাশনাল বা দেশের মধ্য থেকে, কিভাবে রিপোর্ট দেয় জানি না। বাল্যবিবাহ বেড়ে গেছে, ইত্যাদি। আমি চ্যালেঞ্জ দেব, বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ কোনভাবেই বাড়েনি। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ অনেক কমে যাচ্ছে এবং সকলের মধ্যে সচেতনতা আসছে। ১৮ বছর সবার মাথার ভিতর ঢুকে গেছে। এক সময় মানুষ জানতোই না যে ১৮ এর নিচে বিয়ে হলে তা আইনগতভাবে দ-নীয়। কিন্তু এখন সবাই জানে। তিনি বলেন, অল্প বয়সে কারও বিয়ে দেয়া হলে পেপারেও চলে আসে। এগুলো কি আমাদের সচেতনতার অংশ নয়? আমাদের জেলা উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনে যারা আছেন, কেন একেকটা এলাকা কেন বাল্যবিাবহ শূন্য করার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হচ্ছেন, কারণ সরকার এ ব্যাপারে কমিটেড বলে এটা সম্ভব হচ্ছে। উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে এ ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়নকে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করা বা উন্নয়নে তথ্য সঠিকভাবে প্রচার না করার জন্য এ ধরনের রিপোর্ট আসতে পারে। আমরা এ ধরনের রিপোর্ট একসেপ্ট করি না। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে এবং চ্যালেঞ্জ যেগুলো আছে, সেগুলো মোকাবেলায় আমাদের সরকার দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত পাঁচ বছর আগের উদাহরণ তুলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পাঁচ বছর আগে আমি যখন দেখেছি নারী দিবস আসছে তখন মেয়েরা শুধু কান্নার কথা, বেদনার কথা বলতো। কিন্তু এখন আমরা দেখছি শুধু অর্জন। বিভিন্ন স্তরে নারীদের এই যে উন্নয়ন, তা দ্বারা বোঝা যায়, ধাপে ধাপে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার সবচেয়ে বড় একটা উপহার। যিনি সত্যি এ দেশকে ভাল বেসেছেন। দেশের উন্নয়নের কোন শ্রেণীকে আরও বেশি এগিয়ে নিতে হবে, তিনি সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। যার কারণে আজকে নারীর ক্ষমতায়নকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের উন্নয়নের মধ্যে তিনি নিয়ে এসেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সকল স্তরে এখন নারীদের দেখতে পাচ্ছি। এই দেখতে পারাটা, এই সংখ্যাটা এখন আমরা আরও বেশি ডিমান্ড করছি। যেহেতু সরকার সুযোগ দিচ্ছে, আমাদের প্রত্যাশাও বেশি থাকছে। আমরা বলছি সেনাবাহিনীতে কেন আরও বেশি নারী নেই। কেন কোর্ট আমরা আরও বেশি নারী দেখছি না। আমরা নারীর বেশি অংশগ্রহণ আশা করছি। কেন ওই জায়গা নেই তা বলছি না। কারণ প্রতিটি জায়গায় নারীদের অবস্থান আমরা দেখতে পাচ্ছি। এসময় প্রতিমন্ত্রী ৭ মার্চে বাংলামোটরে নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৭ মার্চের মিটিংটা বাংলামোটরে হয়নি। মিটিংটা সোহরাওয়ার্দীতে হয়েছে। ঘটনাটা ঘটেছে বাংলামোটরে। ঘটনাটা সিসি ক্যামেরায় দেখা হচ্ছে। শনাক্ত করা হচ্ছে। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যে কেউ এটার সাথে সম্পৃক্ত থাকুক তাকে ছাড় দেয়া হবে না। আমি তার গলার সুরে সুর রেখে বলতে চাই, এই সরকারের সময় এটাই আমরা বিশ্বাস করি যে, অন্যায় যে করবে কোন ভাবেই যেন পার না পায়। নারীর সাথে সহিংসতার সাথে কারও সম্পৃক্ততা প্রমাণ হলে তার বিচারটা যখন হবে তার রায়টাও আমার প্রতিটি পেপারের প্রথম পাতায় দেখতে চাই। বিচারের জন্যে এভাবে কেন আমরা চিন্তা করব। কেন আমাদের নারীরা নির্যাতনের শিকার হবে। যেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দক্ষ হাতে নারীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।’ ৭ মার্চের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘সচেতনতা শুধু সরকারেরই থাকবে, জনগণের থাকবে না, তা না। দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে একটি ঘটনা ঘটলে আশপাশের মানুষ কি করেছে? তারা কি কিছুই দেখে নি। কেউ কি ছিল না। এটাই আমার কাছে বিস্ময় লাগে। তাই সকল মানুষকেই কিন্তু সচেতন হবে হবে। নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, নারীকে মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য এই অনুষ্ঠানে ৬ নারীকে সম্মাননা দেয়া হয়। তারা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা ফুরকান বেগম, ভাষাসংগ্রামী চেমন আরা, অর্থনীতিতে লুনা সামসুদ্দোহা, চিকিৎসায় প্রফেসর ডাঃ সাইবা আক্তার, ক্রীড়ায় জহোরা রহমান লিনু ও সাহসিকতায় সাহেদা সুলতানা। সমাজকর্মী এ্যারোমা দত্ত বলেন, নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে আরও শক্তিশালী হতে হবে। এ বছর নির্বাচনের বছর। তাই আমি চাইব নারীরা ভোট দিবে এবং ভোটে দাঁড়াবে। নারীরা আরও বেশি বেশি সংসদে আসুক, স্থানীয় সরকারে আসুক। সম্মাননা পাওয়ার পর লুনা সামসুদ্দোহা বলেন, আইটি সেক্টরে অনেক বাধা পেরিয়ে আমরা এই স্থানে এসেছি। এখন নারীরা প্রযুক্তিতে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছে।
×