ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় পার্টির (জা) আলোচনায় ফখরুল

খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১০ মার্চ ২০১৮

খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে যারা নির্বাচনের কথা ভাবছেন তারা অলিক স্বর্গে বাস করছেন। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) আয়োজিত ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি ও অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা সরকারী টাকায় ৭ মার্চ উদযাপন করলেন। খুব ভাল কথা। কিন্তু আমাদের কেন সভা করতে দিচ্ছেন না? আপনারা বলছেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ছাড়া করতে দেবেন না। অথচ আমাদের প্রতিটি সমাবেশই শন্তিপূর্ণ। এসব করে বেশি দিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াসহ সকল রাজনীতিকদের মুক্তি দিতে হবে। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, যে মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে সে মামলাটি সম্পূর্ণ জাল নথির ওপর ভিত্তি করে দায়ের করা। এ ধরনের মামলায় সাজা হওয়ার পরই জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সে অধিকারে হস্তক্ষেপ করে খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হয়নি। এর একটিই উদ্দেশ্য, সেটি হচ্ছে নির্বাচন থেকে বিএনপিকে দূরে রাখা, ২০ দলীয় জোটকে দূরে রাখা। যাতে করে আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারও ক্ষমতায় যেতে পারে। মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে এখন কোন গণতন্ত্র নেই, মানুষের ন্যূনতম অধিকার নেই। গণতন্ত্র ও অধিকার ফিরিয়ে আনতে দুর্বার আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন করেই গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। একই সঙ্গে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে জনগণের সরকার ফিরিয়ে আনতে হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়াকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে। মুক্তি দেয়া না হলে দেশের কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার আমরা আমাদের নেত্রীর মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ কর্মসূচীর মধ্যে অতর্কিত প্রবেশ করে এক ছাত্র নেতাকে বিবস্ত্র করে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। সেই ছেলে নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। কিন্তু আমার দুঃখ এই যে, আমি তাকে রক্ষা করতে পারিনি। ফখরুল বলেন, এই সরকার আজ দেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। যেভাবেই হোক, ভয়াবহ দুঃশাসন চালিয়েও তারা ক্ষমতায় থাকতে চায়। এখানে গণমানুষের কোন অধিকার নেই। জীবনের নিশ্চয়তা নেই। এ সঙ্কট শুধু বিএনপির নয়, এ সঙ্কট সমগ্র জাতির। ফখরুল বলেন, সরকার যা চাচ্ছে নির্বাচন কমিশন সেটাই বাস্তবায়ন করছে। এ কমিশন বসানোই হয়েছে আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার জন্য। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এটি একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। আবারও সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন দেয়া হবে। কিন্তু এখন তিনি সেটা ভুলে গেছেন। এখন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আবার বলা হচ্ছে সংবিধানের আলোকেই নির্বাচন হবে। কোন সংবিধানের আলোকে নির্বাচন? যে সংবিধান বারবার সংশোধন করে পরিবর্তন করা হয়েছে, সে সংবিধানের আলোকে? আসলে বর্তমান সরকারের একটাই উদ্দেশ্য, চিরকাল ক্ষমতায় থাকতে হবে। এক সময় তারা চিরকাল ক্ষমতায় থাকতে বাকশাল গঠন করেছিল। আয়োজকে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. টিআইএম ফজলে রাব্বি চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট এমএ রকীব, জাগপা সভাপতি রেহানা প্রধান, এনপিপি মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, ডিএল সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএমএম আলম, আহসান হাবিব লিংকন, নওয়াব আলী আব্বাস খান, রুহুল আমিন খান, কাজী জাফরের মেয়ে কাজী জয়া প্রমুখ। এ সরকারের পতন আসন্ন- মওদুদ ॥ এ সরকারের পতন আসন্ন বলে মন্তব্য করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, যখন কারও পতন সামনে আসে, তখন তারা বিরোধী মতের ওপর দমন-নিপীড়ন-নির্যাতন করে। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মওদুদ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মানুষের ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করা হবে। এরপর যে সরকার গঠন হবে, সেটি হবে জনগণের সরকার। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছে, তাদের পতন ঘনিয়ে আসছে। আর সে জন্য তারা বেপরোয়া হয়ে গেছে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে পুলিশ দিয়ে হামলা করছে। কারণ তারা জানে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দেশের মানুষ তাদের আর ভোট দেবে না। তিনি বলেন, সরকার বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটকে ভয় পায়। কারণ বিএনপির সঙ্গে জনগণ আছে। মওদুদ বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে হামলা করে সব অঙ্গসংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবারও আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে হামলা করে এক ছাত্রনেতাকে ধরে নিয়ে গেছে। মনে রাখবেন, এভাবে বিএনপিকে দুর্বল করা যাবে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি নির্বাচনে যাবে। আর বিএনপিসহ সব গণতান্ত্রিক শক্তি যখন রাজপথে মেনে আসবে, তখন দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ পাল্টে যাবে। আগামী সপ্তাহে খালেদা জিয়া সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা এম এ বাশারের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সভাপতি এম সাইদুর রহমানের পরিচালনায় এ আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, নির্বাহী কমিটির সদস্য খালেদা ইয়াসমীন, এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিম প্রমুখ। দেশের মানুষ আগে এতটা বর্বরতা দেখেনি- খসরু ॥ বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে বার বার যেভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে দেশের মানুষ আগে এমন বর্বরতা দেখেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। শুক্রবার দুপুরে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীত পাশে বিএমএ ভবনের সামনে ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
×