ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মহেশখালীর কাঞ্চনে কূপ খনন করতে যাচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি

এবার উচ্চ চাপ এলাকা অতিক্রম করে তেল গ্যাস অনুসন্ধান

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১০ মার্চ ২০১৮

এবার উচ্চ চাপ এলাকা অতিক্রম করে তেল গ্যাস অনুসন্ধান

রশিদ মামুন ॥ দেশে প্রথম উচ্চ চাপ এলাকা অতিক্রম করে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কূপ খনন করা হচ্ছে। মহেশখালীর কাঞ্চনে ভারতীয় কোম্পানি ওয়েল এ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস কর্পোরেশন (ওএনজিসি) বাংলাদেশে প্রথম এ ধরনের কূপ খনন করতে যাচ্ছে। পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এ তথ্য জানান। দ্বিতীয়মাত্রার জরিপে ধারণা করা হচ্ছে কাঞ্চনে উচ্চ চাপ এলাকা অতিক্রম করলে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে এর আগে যেসব কূপ খনন করা হয়েছে তার একটিও উচ্চ চাপ এলাকা অতিক্রম করা হয়নি। ফলে এই স্তরের নিচে কি রয়েছে তার কোন তথ্য নেই পেট্রোবাংলার কাছে। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চ চাপ এলাকা অতিক্রম করার ওপর জোর দিচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের তেল গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের কোন অভিজ্ঞতা নেই। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, উচ্চ চাপ এলাকার নিচে কি রয়েছে তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি। দুর্ঘটনার ভয়ে উচ্চ চাপ এলাকার নিচে কূপ খনন করা হয়নি। এখন সময় এসেছে অভিজ্ঞ তেল গ্যাস কোম্পানিকে দিয়ে হাই প্রেসার জোনের নিচের অবস্থা আমাদের জানতে হবে। পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা বলেন, উচ্চ চাপ এলাকায় সাধারণত পানি এবং গ্যাস থাকে। এসব খুব উচ্চ চাপে সংরক্ষিত থাকে। এখানের উচ্চচাপে থাকা পানি লবণাক্ত হয়ে থাকে। এই জোনে কূপ খনন করতে গেলে যে মাড ব্যবহার করা হয় তা লবণাক্ত পানির সঙ্গে মিশে নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য উচ্চ চাপ এলাকা অতিক্রম করতে হলে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হয়। সূত্র বলছে, এর আগে ১৯৮৬-৮৭ সালে ফেঞ্চুগঞ্জে উচ্চ চাপ এলাকা অতিক্রম করা হয় বলে জানা গেছে। ফেঞ্চুগঞ্জ-২ নাম্বার কূপটি ৪ হাজার ৯৭৭ মিটার গভীর পর্যন্ত খনন করা হয়। দেশের সব থেকে গভীর গ্যাস কূপ এটি। এখানে তিনটি স্তরে গ্যাস পাওয়া যায়। বলা হয় ওই কূপটি উচ্চ চাপ এলাকাকে অতিক্রম করে। যদিও কূপটি ৫ হাজার ৫০০ মিটার পর্যন্ত খনন করার পরিকল্পনা ছিল। বাপেক্স গঠনের আগে পেট্রোবাংলার তত্ত্বাবধানে ফ্রান্সের পরামর্শক ওই কূপ খননে পেট্রোবাংলাকে সহায়তা করে। বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মর্তুজা আহমদ ফারুক চীশতি বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জ-২-এ কূপ খনন করার সময় আমি সেখানে ছিলাম। আমাদের পরিকল্পনা ছিল ৫ হাজার ৫০০ মিটার পর্যন্ত খনন করার কিন্তু আমরা তা পারিনি। তিনি বলেন, উচ্চ চাপ এলাকা অতিক্রম করতে হলে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। না হলে অগ্নিকা-ের আশঙ্কা থেকে যায়। তিনি বলেন, এজন্য সাধারণত যে ক্ষমতার রিগে কূপ খনন করা হয় তার চেয়ে বেশি ক্ষমতার রিগে কূপ খনন করা হয়। এছাড়া চাপ কমানোর জন্য যে ধরনের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করতে হয় তা করতে হবে। তিনি বলেন, উচ্চ চাপ এলাকা অতিক্রম করে কূপ খনন কঠিন হলেও করা যাবে না তা ঠিক নয়। জানতে চাইলে ওএনজিসির কান্ট্রি ম্যানেজার কাঞ্চনে তার কোম্পানির কূপ খনন নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে কোন কথা বলতে সম্মত হননি। ওএনজিসি অগভীর সাগরে এই ব্লক ইজারা নিলেও এখানে বাপেক্সের ১০ ভাগ অংশীদারিত্ব রয়েছে। বাপেক্সের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি ওএনজিসির বিভিন্ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে ছিলেন। তারা উচ্চচাপ এলাকা অতিক্রম করে এর আগেও কূপ খনন করেছে। সেখানে গ্যাস পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনাও দেখছেন তারা বলে জানান ওই কর্মকর্তা। পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, সাধারণত আমাদের দেশে দুই হাজার হর্স পাওয়ার ক্ষমতার রিগে কূপ খনন করা হয়। কিন্তু উচ্চ চাপ এলাকায় কূপ খনন করতে হলে আরও বেশি ক্ষমতার রিগ দরকার হয়। ওএনজিসি ২ হাজার ৫০০ হর্স পাওয়ার ক্ষমতার রিগ আনছে। এখানে কূপ খনন করে উচ্চ চাপ এলাকা অতিক্রম করতে হলে ১৫ হাজার পিএসআই চাপ সহ্য করতে হবে। সাধারণত বাংলাদেশে ৫ হাজার মিটারের নিচে হাই প্রেসার জোন রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে কাঞ্চনে তা চার হাজার ২০০ মিটারের নিচে রয়েছে । অগভীর সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসির সঙ্গে উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) সই করে পেট্রোবাংলা। অগভীর সাগরের চার ও নয় নম্বর ব্লকে তেল গ্যাস অনুসন্ধান করছে ওএনজিসি। কক্সবাজারের নিচে প্রায় দুই হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে এক একটি ব্লক ভাগ করা হয়েছে। এখানে দ্বিতীয়মাত্রার ভূকম্পন জরিপ শেষ করেছে ওএনজিসি। প্রসঙ্গত এর আগে সাঙ্গু থেকে গ্যাস তোলা হয়েছে। এছাড়া গভীর সমুদ্রে মার্কিন কোম্পানি কনোকো ফিলিপস গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানায়। তবে সরকারের কাছে পিএসসির বাইরে গিয়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। সরকার ওই প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় কনোকো ফিলিপস কূপ খনন করার আগেই ব্লক দুটি ছেড়ে দেয়। এর বাইরে ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পরও পেট্রোবাংলা সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে কিছু করে উঠতে পারেনি।
×