ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টেকনাফ পাহাড়ে আগুন দিল কারা- নানা জল্পনা

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১০ মার্চ ২০১৮

টেকনাফ পাহাড়ে আগুন দিল কারা- নানা জল্পনা

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ টেকনাফে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে আগুন দিয়ে বনবিভাগের বিপুল টাকার ক্ষতি সাধন করা নিয়ে ব্যাপক জল্পনা চলছে। এ ঘটনায় দু’রকমের বক্তব্য পাওয়া গেছে। কেউ বলছে বনের কাঠ রোহিঙ্গারা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পাহাড়ে আগুন দিয়েছে। কেউ বলছে সশস্ত্র রোহিঙ্গা দুই ডাকাত গ্রুপের কোন্দলে পাহাড়ে অবস্থান করা ডাকাতদের তাড়াতে আগুন দেয়া হয়েছে পাহাড়ে। স্থানীয়রা বলেন, একই সঙ্গে পাহাড়ে প্রায় ৪০ স্থানে আগুন দেয়ার পেছনে রোহিঙ্গারাই দায়ী। কেননা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে যাচ্ছে তাই করে বেড়াচ্ছে। ডাকাতি-খুন, অপহরণ ও ছিনতাইসহ এমন কোন বেআইনী কাজ নেই যা রোহিঙ্গারা করতে পারেনা। তারা রেশন বা ত্রাণ সামগ্রী পাচ্ছে দেশী বিদেশী এনজিওর কাছ থেকে। তবে জ্বালানি হিসেবে তারা তুষের লাকড়ি পেলেও তা বিক্রি করে দিচ্ছে একই ঠিকাদারের কাছে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের কী ক্ষতি হচ্ছে তা মোটেও ভাবেনা। গত ছয়মাস আগে রোহিঙ্গার স্রোত অনুপ্রবেশ করার পর অন্তত শতাধিক পাহাড় ও গাছগাছালি কেটে ধ্বংস করে দিয়েছে। বর্তমানেও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে হয়ত রোহিঙ্গারা বনে আগুন দিয়ে দণ্ডায়মান গাছ পুড়ে ফেলেছে। আবার কেউ বলছে রোহিঙ্গা ডাকাত সর্দার আবদুল হাকিমকে স্থান ছাড়া করতে পাহাড়ে আগুন দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা ডাকাত সর্দার আবদুল হাকিমের সহযোগীকে ক্যাম্পে অপর রোহিঙ্গা ডাকাত দল হত্যা করেছে। তারা হাকিম ডাকাতকেও খুঁজতে সশস্ত্র অবস্থায় পাহাড়ে ঢুকেছে। সেখানে তাকে না পেয়ে হয়ত তারা পাহাড়ে আগুন দিয়েছে। স্থানীয়রা বলেন, এমন সময়ে আগুন দেয়া হয়েছে, যখন পাহাড়ে পাতা শুকনো থাকে। বেলা সাড়ে ১১টায় কড়া রোদে পাহাড়ী বনের পাতা শুকনা থাকায় আগুনের লেলিহান শিখা বাতাসে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ স্থানীয় লোকজন চেষ্টা চালায়। টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল হাসান বলেন, হঠাৎ করে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় লোকালয়ের কিছু অঞ্চল ঝুঁকিতে ছিল। তবে আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছে। ওখানে কারা এবং কেন আগুন দিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে পৌর এলাকার পাহাড় থেকে শুরু করে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আগুন জ্বলতে শুরু করে। শতাধিক একরের বেশি বনাঞ্চলসহ লোকালয়ের দিকে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে ওই আগুন। এতে বহু গাছপালা, সবজি ক্ষেত পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। আগুনে হাজার হাজার চারা গাছ, বন্য প্রাণীসহ শত শত উপকারভোগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রণয় চাকমা সরেজমিন বন পরিদর্শন করেছেন। সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ বছর ধরে মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা আবদুল হাকিম ডাকাত নেটং পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে এলাকায় ডাকাতি, খুন-গুম ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। তাকে ধরতে গত এক মাস ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা আন্দোলন ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল। উপজেলা পরিষদ ঘেঁষে পুরান পল্লান পাড়ায় ওই হাকিম ডাকাতের বসতবাড়িতে এলাকাবাসী হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সকালে কিছু মানুষ পাহাড়ে ঢুকে রোহিঙ্গা ডাকাত সর্দার আবদুল হাকিমের আস্তানা খুঁজতে থাকে। ওই ব্যক্তির আস্তানা উচ্ছেদের জন্য হয়তো আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। টেকনাফ উপজেলা পরিষদের পশ্চিমে সংরক্ষিত ৯০ একরের বাগানের প্রায় আড়াই একর বনাঞ্চলের ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করেন তিনি।
×