ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লায় বিস্ফোরণ

আহত রিয়াজুলের জঙ্গী সম্পৃক্ততা সামনে রেখে চলছে তদন্ত

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১০ মার্চ ২০১৮

আহত রিয়াজুলের জঙ্গী সম্পৃক্ততা সামনে রেখে চলছে তদন্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ৯ মার্চ ॥ কুমিল্লায় রহস্যজনক বিস্ফোরণে আহত কলেজ ছাত্র রিয়াজুল ইসলামের সঙ্গে জঙ্গী সম্পৃক্ততার বিষয়টি মাথায় রেখেই তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব, পিবিআই ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। কিন্তু ঘটনার দুদিন পেরিয়ে গেলেও শুক্রবার পর্যন্ত এ বিস্ফোরণের কোন কূল-কিনারা খুঁজে পায়নি তারা। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিয়াজুলসহ পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে রিয়াজুল কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। আহত রিয়াজুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার উলুকনগর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। গত বুধবার মধ্য রাতে বুড়িচং উপজেলার নাজিরা বাজার সংলগ্ন ঘোষনগর এলাকায় এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে বুড়িচং থানায় রিয়াজুলকে এজাহার নামীয় আসামি করে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। এদিকে শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি ড. এস.এম মনির-উজ-জামান বিপিএম-পিপিএম। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত বিস্ফোরণের আলামতগুলো শুক্রবার ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের নাজিরা বাজার সংলগ্ন ঘোষনগর এলাকার হলি কেয়ার স্কুলের সঙ্গে ৪ তলা বাসার নিচ তলার একটি রুমে থাকতো কুমিল্লা সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণীর প্রথম বর্ষের ছাত্র রিয়াজুল (১৭) ও তার খালাত ভাই সোহাগ (১৪)। বাড়ির মালিক তাদের নানা হাজী আবদুল জলিল পরিবার নিয়ে থাকতো পাশের একটি ইউনিটে। গত বুধবার রাত আনুমানিক ২টার দিকে রিয়াজুলের রুমে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ওই রুমের থাই গ্লাসের জানালা ও স্টিলের দরজা ভেঙ্গে যায়। ওই বাসার ২য় তলার মাসুদ নামে এক ভাড়াটিয়া জানান, মধ্য রাতে বিকট শব্দে পুরো বিল্ডিং কেঁপে ওঠে। দরজা খুলে বাইরে গিয়ে নিচতলায় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন দেখতে পাই। বিস্ফোরণে রিয়াজুলের রুমে থাকা কাপড়ে আগুন লেগে যায়। এসময় বাড়ির অন্যান্য ভাড়াটিয়া ও স্থানীয়রা এগিয়ে আসে এবং আগুন নিভিয়ে রুমে থাকা রিয়াজুল ও সোহাগকে উদ্ধার করে। বিস্ফোরণে সোহাগ বেশি আহত না হলেও রিয়াজুলের দুই হাত ও মুখের বেশকিছু অংশ ঝলসে যায়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ময়নামতি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি ড. এস.এম মনির-উজ-জামান বিপিএম-পিপিএম। গত ২দিন ধরে পুলিশ ঘটনাস্থলটি ঘিরে রেখে বিস্ফোরণের রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় আটককৃতরা হচ্ছে-আহত কলেজ ছাত্র রিয়াজুল, তার নানা হাজী আবদুল জলিল, মামা আলমগীর, ফুফাতো ভাই রায়হান ও খালাত ভাই সোহাগ। কিন্তু শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত আহত রিয়াজুলসহ আটককৃতরা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কোন তথ্য নিশ্চিত করে না বলায় বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে পুলিশ সাংবাদিকদের কোন তথ্য জানাতে পারেনি। কুমিল্লা পুলিশ সুপার মোঃ শাহ আবিদ হোসেন বিপিএম সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিক তদন্তে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে আহত রিয়াজুলের সঙ্গে জঙ্গী সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়টি সামনে রেখে তদন্ত চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, বোমা বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরণের আলামতগুলো সংগ্রহ করে শুক্রবার দুপুরে ঢাকায় নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় বুড়িচং থানার এসআই শাহাদাৎ হোসেন বাদী হয়ে রিয়াজুলকে এজাহার নামীয় আসামি করে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে শুক্রবার বিকালে বুড়িচং থানায় মামলা হয়েছে। সন্ধ্যায় পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি ড. এস.এম মনির-উজ-জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, আমরা ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। বিস্ফোরণের আলামত পরীক্ষা ও তদন্ত শেষে ঘটনার বিষয়টি জানা যাবে।
×