ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্গীতের তরঙ্গে অটিজম চিকিৎসা

প্রকাশিত: ০৭:৫৯, ৯ মার্চ ২০১৮

সঙ্গীতের তরঙ্গে অটিজম চিকিৎসা

সমবেত যন্ত্রসঙ্গীতের সময় বাদক ও শ্রোতাদের মনে এক সমন্বয় সৃষ্টি হয়। এই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে অটিজিমের চিকিৎসা সম্ভব হবে, বিজ্ঞানীরা এমন তথ্যই দিয়েছেন। ইয়োহানা সেঙার গান শুনতে সে বড়ই ভালবাসেন। বাদ্যযন্ত্র বাজানোর সময় শিল্পীর মনের মধ্যে ঠিক কী ঘটে, তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানতে চান তিনি। কারণ বাজানোর সময় মস্তিষ্কের মধ্যে সমন্বয় চাই। উদ্দেশ্য এক হলে তবেই ঐকতান সম্ভব।এই গবেষক মনে করেন, দুটি মস্তিষ্কের সমন্বয় তখনই ঘটে, যখন তারা একসঙ্গে কিছু করতে চায়। তখন যেন পরস্পরের মধ্যে একটা নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। দুই মস্তিষ্কের মধ্যে সংযোগের ফলে যেন তা একটি মস্তিষ্কে পরিণত হয়। তিনি বললেন, ‘ডাক্তারের চেম্বারে অথবা টেলিভিশনের পর্দায় প্রায় সবাই গ্রাফের রেখা দেখেছে। আসলে সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও এমন তরঙ্গ কল্পনা করতে পারলে আপনি হয়ত বুঝতে পারবেন, দুই গিটার-বাদকের মনের মধ্যেও একই রকম রেখা তৈরি হচ্ছে। তবে দুজনেরই মস্তিষ্কে তরঙ্গের ওঠানামা যে একেবারে একই সঙ্গে হতে হবে, তা কিন্তু নয়। তার পরেও বলতে হবে, যে দুজনের মনেই প্রায় একই রকম রেখার বিন্যাস দেখা যায়। দুই গিটার বাদকের সঙ্গে বাকি যারা আছেন, তারাও কি টের পান যে দুজনের মস্তিষ্কই যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে? সঙ্গীতশিল্পী ভিওলা ভাইসার মনে করেন, ‘কিছু প্রক্রিয়া, যেমন সঙ্গীতের দ্রুত বা ধীর গতিÑ এ সব আস্তে আস্তে নিজের অজান্তেই ঘটতে থাকে। তাঁর এক সতীর্থ ডানকান টেলরের মত হলো, ‘যখন আমরা একসঙ্গে বাজনা বাজাই তখন আমাদের মস্তিষ্কে ঠিক কী ঘটে? এটা আমি সত্যি জানতে চাই।’ . বাদক ও শ্রোতাদের মনে তরঙ্গের সমন্বয় গবেষকরা দেখেছেন, ডুয়েট বাজানোর সময় মস্তিষ্কের তরঙ্গের সমন্বয় ঘটে। সেঙার এবার জানতে চান, দুই শিল্পী আলাদা ধ্বনিতে বাজালেও তাদের তাল একই থাকে কিনা। কারণ তখন মস্তিষ্ককে নতুন করে বার বার সমন্বয় করতে হয়। একজন তাল দেন। কিন্তু সঙ্গীত শুরু হওয়ার আগেই দুটি মস্তিষ্কেই একই রকম তরঙ্গের সৃষ্টি হয়, যা সত্যি অবাক করার মতো ঘটনা। ইয়োহানা সেঙার বললেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, যে দুরকম সমন্বয় ঘটেÑ একদিকে নিজের মস্তিষ্কের ভেতরে এবং অন্যদিকে দুটি মস্তিষ্কের মধ্যে। এখানে সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো, সমন্বয়ের এই প্রক্রিয়া গোটা জলসাজুড়ে সমান থাকে না। সঙ্গীতের বিশেষ কিছু অংশ এলে দুই বাদকের মধ্যে সমন্বয়ের মাত্রা শক্তিশালী হয়ে ওঠে, বিশেষ করে যখন দুজনকেই একই তাল দিতে হয়। আমরা ধরে নিতে পারি, সেই সব সময়ে দুজনের মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত জরুরী হয়ে ওঠে। তখন মস্তিষ্ক সমন্বয় করতে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে।’ অনেক সঙ্গীতশিল্পী একসঙ্গে সঙ্গীত পরিবেশন করলেও একাধিক মস্তিষ্কের মধ্যে এক নেটওয়ার্কের সৃষ্টি হয়। গবেষণাগারে এই কনসার্টের সময় শ্রোতাদের মস্তিষ্কেও সেন্সর লাগানো হয়েছে। তাদের মস্তিষ্কও বাদকদের নেটওয়ার্কে অংশ নিচ্ছে, এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে। . দুই মনের সমন্বয় খেলাধুলা বা আড্ডার সময়ও মানুষের মস্তিষ্কের মধ্যে এমন সমন্বয়ের উদাহরণ দেখা যায়। এ বিষয়ে আরও জ্ঞান লাভ করলে গবেষকরা হয়ত নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির দিশা দেখাতে পারেন। মাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক উলমান লিন্ডেনবুর্গার বললেন, ‘যে সব মানুষ কিছুটা বিভ্রান্ত এবং অদ্ভুত সঙ্কেত পাঠায় বলে বাকিদের সঙ্গে ঠিকমতো ভাবের আদান-প্রদান করতে পারে না, তাদের হয়ত আমরা সাহায্য করতে পারি। ঠিক কোথায় কী পরিবর্তন করলে তারা স্বাভাবিকভাবে বাকিদের সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে পারবে, তাও হয়ত স্থির করতে পারি। যেমন অটিস্টিক শিশু বা অস্বাভাবিক আতঙ্কগ্রস্ত মানুষের যোগাযোগের ক্ষমতার উন্নতি করা তখন সম্ভব হয়ে উঠতে পারে।’ ইয়োহানা সেঙারের কাজ এই লক্ষ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। বহু বছরের মৌলিক গবেষণার কতটা প্রয়োজন রয়েছে এবং বাস্তবেও তা কতটা কাজে লাগে, ইয়োহানা সেঙারের এই উদ্যোগ তারই উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত। সূত্র : বিবিসি, ডয়েচ ভেলে
×