তুমি তো জানো
তুমি তো জানো, এই শহরে একদিন নিঃস্ব দুপুর কেঁদে উঠেছিল। পরাজিত প্রেমের মতো সবান্ধব হতে চেয়েছিল গম্ভীর প্রেমিক। এই শহর এখন বড়ো ক্লান্ত নির্ঘুম রাতের মতো কিংবা অলস স্বপ্নের মতো; তুমি তো জানো।
এই যে বাসগুলো, ট্রাক-রিক্সাগুলো- তারাও জানে সুবর্ণ শহরের অলিগলিগুলো কত নিষ্ঠুর; রোদ্দুরগুলো কত হিং¯্র। তুমি তো জানো, এই শহরে একদিন নিঃস্ব দুপুর কেঁদে উঠেছিল।
.
বাহুমূলপীড়িত কম্পন
তোমার বাহুমূলের অতি নিবিড়ে সন্ধ্যাতারার মতো শতবর্ষীয় প্রেম দেখতে পেয়েছিলাম, যা অঙ্কুরোদগম হয়ে জোরালো স্বপ্নের মতো তীব্র কম্পন সৃষ্টি করেছিল আমার হৃদযন্ত্রে, উদ্যত পেশীকোষে। এমনই প্রবল যাঞ্চা ও ঝঞ্ঝায় আর সুচিন্তিত কামনায় পুরোটি দিবস-রাত মধ্য দিবাকরের মতো আমি জ্বলেছিলাম, কামনায়, প্রচণ্ড দাপুটে কামনায়।
.
কামনা
তারচেয়ে ভালো তুমি ঘুমিয়ে পড়ো, হে রজনীসন্ন্যাসী, অলুকপাড়ায় সূর্য নামে যখন। রমণীর মুখ চেয়ে কাটানো যায় যখন কয়েক প্রশস্ত রাত্রি এবং অনাহারে কাটানো যায় কয়েক তুচ্ছ মাঝারি জীবন। ফুসফুসের কষ্টে ভোগা রজনী, তৃষ্ণাতুর বালকের গড়াগড়ি করা। এ—সবই জরাজীর্ণ মূর্তির সবল পরশ্রীকাতর কামনার ফসল।
.
কত রোশনাই জ্বেলে
কত রোশনাই জ্বেলে, পথে পথে কত নতুনের আহ্বান। স্তব্ধ ঝিঁঝির ডাক।
দেশলাই থেমে থেমে জ্বলেছে কত বিনিদ্র রাত।
অসুস্থ সকালে পাশাপাশি বসে খেয়েছি কি কখনো উষ্ণতার চা?
বর্ষপঞ্জির হিসেব রাখো তো ঠিকঠাক?
সায়াহ্নের অপরাধমাখা আলো-আঁধারে পার্কের জলরঙা বেঞ্চে বসা উৎসাহী মুখ কি দেখি নি কখনো?
দেখেছি তো ফুলেভরা জারুলেরও উল্লাস,
মাধবীলতার বেয়ে ওঠা। আরও কত কী!
অবিবেক মানুষের দ্বারস্থ হয়েছি কত নিরাকার বিষয় নিয়ে।
তবু কেউ কি চেয়েছে ফিরে ভদ্র সসম্মানে?
.
নদীর ঘাটে
কত হাসি নিভে যায়, কত ফুল ঝরে যায় আঁচলের পাড়ে;
কত প্রেম চুকে যায়, কত চুমু থেমে যায় নদীর ঘাটে।
তবু আসে তবু যায় কত বেহায়া;
মনের পর্দায় দেখো বাজে বেহালা।
চা কফি দুধ ঘি আয় খেয়ে যা;
তৃণ ঘাস বুনো হাঁস তবে দেখে যা।
ভোরের মাঝি এখন পাল তুলে বায়;
একমুঠো পানি গালে ভেজা কাক যায়।
আম-বনে হাওয়া লেগে পাখিরা গায়;
কাঁচা আম খসে পড়ে আমাদের গাঁয়।
নিমের ডগায় আজ পাখিরা নাচে;
পুবের আকাশে এখন লাল রবি হাসে।
সবুজ ডাঙার শেষে কে এখন গায়;
জারুলের থোকা ফুল পড়ে পড়ে হায়।
পাহাড়ের চুড়োয় এ-দিন কে বাঁশি বাজায়;
ময়ূরের মতন আমার মনটা নাচায়।
আকাশেতে মেঘ করে পথেঘাটে ধুলো;
এখানে ওখানে ভাসে শিমুল তুলো।
.
দুজনের নির্বাসিত পথচলা
বাদলপোকা উড়ে গেল। ভেসে ভেসে চললো সন্ধ্যার উড়ন্ত মেঘ।
থেমে গেল সব কোলাহল, যা আমাদের ঘিরে নৃত্যগীতের মতো পরিবেশিত ছিল।
আমরা ভুলে যাই
অতীতের অনেক গল্প;
জ্বলন্ত কয়লার বিরহবিষাদ, কেরোসিনের আত্মদান।
ভুলে যাই যে একদিন
চোখের সবুজাভ চাহনিতে ভরে যেত
আমাদের দিনমান, নীলাভ দিনলিপি।
অবশেষে ক্লান্ত পথিকের মতো
আমরা স্থির হয়ে যাই শতবর্ষী
হিজলের ছায়ায়,
তার বিস্তৃত শেকড়ে।
বুঝতে দেরি হয় না যে আমরা আজ
দারুণ পথিক,
ঘরবাড়িহীন, কাঙাল ঘুড়ির
মতো আমাদের শূন্যে নিবাস। সুবিশাল জলাশয়
আর সুউচ্চ পাহাড় ঘেঁষে আমরা হেঁটে যাই।
ব্যথার চৌকি আমাদের আশ্রয় হয়।
তারকাখচিত ভোরের সূর্যে
একে অন্যের মুখ চেয়ে সুদীর্ঘ পথ পার করি দিই।
প্রশ্ন করি একে অন্যকে,
এটি আমাদের প্রকৃষ্ট সময় নয় কি? শান্তির ব্রিজে দু’দণ্ডের জন্যে মিলনের
আনন্দ খুঁজি,
খানিকের মুখ চাওয়াচাওয়ি, হাওয়ায় উড়া
আঁচলের পাশে একদা
আমরা স্বর্গ আবিষ্কার করি।
প্রজাপতি উড়া ভেজা হাওয়ায় আকস্মিক সুন্দরীতমা নীলিমায়
চেয়ে চেয়ে ভাবি, সত্যি পৃথিবীটা অনেক সুন্দর, অনেক সুখের দুজনের নির্বাসিত পথচলা।
.
নগ্ন
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান
রাত্রির কাছে ফিরে যাবো মেয়ে
ফিরে যাবো মৈথুনে, নির্ঘুম জ্যোৎ¯œায়
দীর্ঘপথ উড়ে উড়ে
দু দ- দাঁড়াব নিশ্চুপ
তোমার ঠোঁটের বারান্দা ঘেঁষে একবার
জানি, মহুয়া বনে লেগে আছে গভীর চুম্বন
সাঁই সাঁই উড়ছে প্রেয়সীর অবাধ্য চুল
অথচ অথৈ সাগরে চোখ পেতে দেখি
ভেসে যায় বেহুলার দেহ
সাথে অভাগা লখিন্দর সাপে কাটা
আর কামুক মন আমার
রাত্রির কাছে ফিরে যাবো মেয়ে
ফিরে যাবো মৈথুনে, নগ্ন শুভ্রতায়...
.
কাঠঠোকরা
ইকবাল পারভেজ
আমার দেহে ঠুকরে ঠুকরে অনবরত
গর্ত করে কাঠঠোকরা
বাসা বানায়
ব্যথায় নীল হই আমি
তুমি খোঁজো সুখের বাস
জমা রাখো সোনালি ডিম
তারপর ডিমগুলি পাখি হয়
এবং উড়ে যায়...
আমি অসংখ্য ভাল বাসার গর্ত নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি
অতঃপর শূন্য গর্তে সাপেরা এসে বাসা বাঁধে।
শীর্ষ সংবাদ: