ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবর্তন আসেনি, বেড়েছে জটিলতা

পুরনো পথেই ট্রাম্প যুগে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৯ মার্চ ২০১৮

পুরনো পথেই ট্রাম্প যুগে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি সেকেলে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে বরাবর এমন খেদ প্রকাশ করে এসেছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে এমন জোর সম্ভাবনা দেখা দিলেও বাস্তবে সেটি হয় নি। ট্রাম্প যতই বিতর্ক সৃষ্টি করেন না কেন বিশ্লেষকদের মতে তিনি পূর্বসুরীদের পথ থেকে খুব দূরে যেতে পারেননি। ফরেন এ্যাফেয়ার্স। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, জমে থাকা ধুলি ঝেড়ে পররাষ্ট্র নীতিকে নতুন করে ঢেলে সাজাবেন। বলেছিলেন দেশের স্বার্থবিরোধী বাণিজ্যচুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিবেন তিনি। তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও এ ক্ষেত্রে ধরতে গেলে কোন গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনই করতে পারেননি ট্রাম্প। এখনও সেই ৯০ এর দশকের শীতল যুদ্ধ পরবর্তী ধারাতেই তা চলছে। ন্যাটো জোটের অবস্থাই ধরা যাক। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে ইউরোপিয়ান মিত্রদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ ছিল, তারা ন্যাটোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দিতে গড়িমসি করছে। এক্ষেত্রে ট্রাম্পের ওয়াদা ছিল তিনি নির্বাচিত হলে পূর্ব ইউরোপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোকে পর্যাপ্ত অর্থ দেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এক্ষেত্রে এখনো পূর্বসুরীদের পথেই হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা নীতি এবং পেন্টাগনের নতুন জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিতেও রাশিয়া এবং চীনের ক্ষেত্রে পূর্বের অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রেও মার্কিন নীতির কোন রদবদল হয়নি। এখনও যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তার মিত্র দেশ ইসরাইল, মিসর, জর্ডান, ও সৌদি আরবের স্বার্থ প্রশ্নে একচোখা নীতিতেই আছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের বিরুদ্ধে বারাক ওবামার রেখে যাওয়া যুদ্ধ পরিকল্পনার সঙ্গে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে কুর্দি, সিরীয়, ইরাকী, তুর্কীসহ স্থানীয় নানা জটিল সমস্যার মধ্যে পড়ে খাবি খাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। সন্ত্রাস দমন প্রশ্নে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বেড়েছে। আফগানিস্তান পরিস্থিতি হয়েছে আরও বেশি উত্তপ্ত। গত কয়েক মাসে তালেবানসহ বিভিন্ন জঙ্গী গ্রুপ বড় ধরনের কয়েকটি হামলা চালিয়েছে। ইরানের সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তিটিকে বারংবার যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের নিকৃষ্টতম চুক্তি হিসেবে মূল্যায়ন এবং অসংখ্যবার এ থেকে বেরিয়ে যাবার হুমকি দিলেও এখনও এটি থেকে বেরিয়ে যাননি ট্রাম্প। এর বিরুদ্ধে খড়গহস্ত থাকার পরও কেন তিনি এ চুক্তি বাতিল করেননি, কারণ এ থেকে বেরিয়ে যাবার পরবর্তী পরিস্থিতি যে আরও খারাপ পরিণতি বয়ে আনবে তা বেশ ভালই বুঝে ট্রাম্প প্রশাসন। চুক্তিটির সমালোচনা করে এ থেকে এখন আসলে সন্মানজনকভাবে পালানোর পথই এখন খুঁজে পাচ্ছেন না ট্রাম্প। ইসরাইলের রাজধানী জেরুজালেম প্রশ্নে ট্রাম্পের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় নিউইয়র্ক টাইমসে টমাস ফ্রিডম্যান লিখেছেন, এ থেকে ওয়াশিংটন কেবল সমালোচনা ছাড়া আর কিছুই পায়নি। এতে কেবল এটিই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে ফিলিস্তিন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র যে ইসরাইলের পক্ষে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শান্তি প্রক্রিয়া, কারণ ট্রাম্পের ঘোষণায় এর কবর রচিত হয়েছে। উত্তর কোরিয়া প্রশ্নে ট্রাম্প রীতিমতো ভাড় বনে গেছেন। তিনি ভেবেছিলেন চীনের সাহায্যে তিনি উত্তর কোরিয়াকে বাগে আনতে পারবেন। তবে সে আশায় গুড়েবালি পড়ায় ট্রাম্প এবং তার উপদেষ্টা সামরিক ব্যবস্থা নেয়ার একের পর এক হুমকি ধামকি শুরু করেন। ফল হলো উল্টো, ট্রাম্পের হুমকি ধামকি উত্তর কোরিয়ার কিমকে তার দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন প্রশ্নে আরও যুক্তি ও শক্তি যুগিয়েছে। বাণিজ্যসহ গোটা বিশ্বের তাবৎ সব ইস্যুতে সমস্যার সমাধান না করে নানা বিতর্কিত কাজের মাধ্যমে মূলত যুক্তরাষ্ট্রকেই একঘরে করে ফেলেছেন ট্রাম্প।
×