ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধা তালিকা থেকে শূন্য পদে নিয়োগ

সরকারী চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কার হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৯ মার্চ ২০১৮

সরকারী চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কার হচ্ছে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী চাকরিতে কোটার শূন্যপদে মেধা তালিকায় থাকা শীর্ষ প্রার্থীদের নিয়োগের সিদ্ধান্তে কোটা ও সাধারণ প্রার্থীদের কেউ বঞ্চিত হবেন না বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য দিয়ে বলেছেন, কোটা পদ্ধতি সংস্কারের কোন পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই। যারা এ পদ্ধতি রাখতে চান তারা মনে করেন, কোটার সুবিধা নেবেন। আরেক পক্ষ মনে করেন আমরা মেধাবী, বঞ্চিত হচ্ছি। সরকার আছে নিজস্ব ধারায়। এখন যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এটা দুইটার একটা সহজ সমাধান। এতে কোন পক্ষই বঞ্চিত হচ্ছে না। এর আগে ৬ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে কোটা সংরক্ষণ শিথিল করার বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বলা হয়, সরাসরি সরকারী চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধা তালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করা হবে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সব সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার কোন পদ যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা সম্ভব না হলে সেসব পদ মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ করতে হবে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ২০১০ সালের আদেশে মিডওয়াইফের ছয়’শ পদ ও সিনিয়র স্টাফ নার্সের চার হাজার পদ পূরণে মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসরণ সংক্রান্ত নির্দেশনা শিথিল করা হয়েছে। এখন এই পদগুলোতে মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া হবে। এ নিয়ে কোন কোন পক্ষের উদ্বেগ প্রকাশের প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান সাংবাদিকদের সামনে বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, কোটা নিয়ে আছে দুটি পক্ষ। এখন যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাতে মেধাবীরা মর্যাদাও পাচ্ছেন আবার কোটা পদ্ধতির প্রতিও সম্মান অক্ষুণœ আছে। এটা সবার জন্য গ্রহণযোগ্য একটা ব্যবস্থা। জারি করা প্রজ্ঞাপন কোটা পদ্ধতি সংস্কার বা কোটা কমিয়ে আনতে সরকারের পরিকল্পনার অংশ কিনা- জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, বর্তমানে বিসিএসসহ সব সরকারী চাকরিতে বিভিন্ন ধরনের কোটার জন্য ৫৭ ভাগ পদ সংরক্ষিত আছে। এই কোটা কমিয়ে আনার কোন পরিকল্পনাও সরকারের নেই। তবে মঙ্গলবারের (৬ মার্চ) প্রজ্ঞাপনে যে আদেশ দেয়া হয়েছে, তাতে এমনিতেই হয়ত কোটা ১০ শতাংশ কমে আসবে। সিনিয়র সচিব আরও বলেন, আমি আরেকটু স্পষ্ট করে বলি, এতে কোন ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নেই। কেউ হয়ত ভাবতে পারে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সংস্কার হয়ে গেছে, এখন মুক্তিযোদ্ধাদের গুরুত্ব কম দেয়া হচ্ছে অথবা অন্য কোন পদ পশ্চাৎপদ শ্রেণীকে গুরুত্ব কম দেয়া হচ্ছে, এটি কিন্তু সেটি নয়। ব্যাখ্যাটি হচ্ছে, তাদের জন্য পদ সংরক্ষিত আছে, থাকবে। কোটায় অতিরিক্ত নিয়োগ দেয়া হচ্ছে- বলে যে অভিযোগ সেটি নিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, এটা সঠিক নয়। কোটায় যারা নিয়োগ পাবে তাদের প্রার্থীর সংখ্যা সেই পরিমাণে নেই। নতুন সিদ্ধান্তে মেধাবীরাই বেশি নিয়োগ পাবে। সরকারী চাকরিতে কোটার শূন্যপদে মেধা তালিকায় থাকা শীর্ষ প্রার্থীদের নিয়োগের সিদ্ধান্তে কোটা ও সাধারণ প্রার্থীরা বঞ্চিত হবেন না। মেধাবীরা মর্যাদাও পাচ্ছে আবার কোটা পদ্ধতির প্রতিও সম্মান অক্ষুণœ আছে। অর্থাৎ সেখান থেকেও সরকার সরে আসেনি। কাজেই মনেকরি এটা সবার জন্য গ্রহণযোগ্য একটা ব্যবস্থা। সরকারী চাকরিতে শূন্যপদের সংখ্যা জানতে চাইলে ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, সরকারী চাকরিতে নিয়োগ একটি চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমানে ১৪ লাখ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। প্রতিদিনই তাদের মধ্য থেকে তিন-চার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে যাচ্ছেন। অনেকে ব্যক্তিগত বা অন্য কারণেও চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। ফলে প্রতিদিনই সরকারী পদ শূন্য হচ্ছে। ফলে সুনির্দিষ্টভাবে সরকারী চাকরিতে শূন্যপদের সংখ্যা বলা যাবে না। জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘টেকনিক্যাল’ কিছু জটিলতা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারী চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি একটু জটিল ও সময় সাপেক্ষ। ফলে প্রতিদিনই পদ খালি হলেও টেকনিক্যাল কারণে জনবল নিয়োগ দেয়া সম্ভব নয়। তবে কোটা শিথিল হওয়ার ফলে এখন নিয়োগ কিছুটা হলেও সহজ হবে। চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা বৃদ্ধির প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা আলোচনার বাইরে আছে। এই রকম কোন বিষয় সরকারের আলোচনায় নেই। এর আগে কোটা পদ্ধতি সংস্কার বা বাতিল না করে এ পদ্ধতির সংস্কারের সুপারিশ করেছিলেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরাও। ‘রাষ্ট্র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করতে পারে না’ এমন মন্তব্য করে বিশেষজ্ঞরা কোন কোন কোটার পরিমাণ কমানোসহ কোটা সমন্বয়ের সুপারিশ করেন।
×