ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রদল নেতা গ্রেফতার

বিএনপির অবস্থান কর্মসূচী পন্ড হৈ-হট্টগোলে

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৯ মার্চ ২০১৮

 বিএনপির অবস্থান কর্মসূচী পন্ড হৈ-হট্টগোলে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদল সভাপতি মিজানুর রহমান খানকে গ্রেফতারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে হৈ-হট্টগোলের মধ্যে পন্ড হয়ে যায় বিএনপির অবস্থান কর্র্মসূচী। বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচী ৪৫ মিনিট চলার পর পন্ড হয়ে যায়। এ ঘটনার প্রতিবাদে দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অবস্থান কর্মসূচীতে পুলিশের বাধা এবং নেতাকর্মীদের আটকের প্রতিবাদে আগামীকাল শনিবার ঢাকা মহানগরীর থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করার ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচীতে পুলিশী হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। সংবাদ সম্মেলনে সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলেন কিন্তু বাস্তবে গণতন্ত্রবিরোধী কাজ করে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে সরকার অশান্তি সৃষ্টি করছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সাধারণ পোশাকে ঢুকে বিশৃঙ্খলা এবং সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে নেতাকর্মীদের আটক করেছে। তিনি বলেন, আমাদের চোখের সামনে সব ঘটনা ঘটলো। এতটুকু সৌজন্যবোধ দেখায়নি পুলিশ। আমাদের কর্মসূচী যেন শেষ না হয় সেভাবেই তারা আক্রমণ করে। ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী জনসভায় যে বক্তব্য রেখেছেন তা থেকে প্রমাণিত হয় গণতন্ত্র শুধু তাদেরই জন্য। এই দেশটা যেন তাদেরই। এখানে অন্য কারও কোনও অবস্থান নেই। আমরা দুঃখ ও হতাশার নিয়ে বলছি, এই সরকার যে ব্যবস্থা চালু করল তাতে আবারও গণতন্ত্রে ফিরে আসা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। তারা ঠিকই জনসভা করছেন, অথচ আমাদের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। আজও বিএনএকটি প্রতিদল ডিএমকার্যালয়ে জনসভার অনুমজন্য গিয়েছিল। কিন্তু তারা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন পেলে জানাবেন বলে দিয়েছেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ছাত্রদলের একজন নেতাকে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে তা শুধু হিটলারের সময়ে হয়েছে। এর আগে ৬ মার্চ বিএনপির মানববন্ধন শেষে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুকে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে পিস্তল উচিয়ে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়ার পর থেকে আমাদের প্রতিটি কর্মসূচী শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হচ্ছে। এটা দেখে আওয়ামী লীগের গাত্রদাহ হয়েছে। তাই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে হামলা করে অশান্তি সৃষ্টি করছে। যারা আমাদের দল পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তাই আমরা আগামী ১০ মার্চ শনিবার ঢাকা মহানগরের থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা পালন করব। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আদালতের কাছে যেতেও ভয় পাই। কারণ আমরা দেখ, বর্তমান সরকার আদালতের ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই সেখানে যাব কী যাব না তা ভেবে দেখতে হবে। তিনি বলেন, আমরা শান্তপূর্ণভাবে কর্মসূী পালন করতে চাই। বুধবার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করে। সরকারের কোন উস্কানিতে পা না দিয়ে ধৈর্য ধরে শান্তপূর্ণভাবে আন্দোলন কর্মসূী চায়ে যেতে বলেছেন তিনি। তার নির্দেশে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছ। তারপরও সরকারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা বাসদস্যরা তাদের সভায় ঢুকে নেতাকর্মীদের মতো বসে থাকে। অনেক সময় সরকারের পক্ষে স্লোগানও দিতে দেখা যায়। বলেন, যে প্রক্রিয়ায় আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, কোনও স্বাধীন দেশে এভাবে কাউকে গ্রেফতার হতে দেখিনি। আমরা এটাকে হিটলার কিংবা অন্যান্য শাসকদের আক্রমণ ও অত্যাচারের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। সকাল ১১টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন শুরু করে বিএনপি। তবে কর্মসূচী চলাকালে সাদা পোশাকে পুলিশ হাজির হলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। ৪৫ মিনিট চলার পর পুলিশের বাধায় পন্ড হয় বিএনপির অবস্থান কর্মসূচী। এ সময় ছাত্রদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান খানসহ তিন জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাক্কাধাক্কির মধ্যে ফুটপাতে বসা মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির কয়েকজন নেতাকে পড়ে যেতে দেখা যায়। বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এ সময় মাইকে বলতে থাকেন, পুলিশ ভাইয়েরা আপনারা এসব কী করছেন, আমাদের কর্মসূচী শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে দিন। এক পর্যায়ে নেতাকর্মীদের দৌড়াদৌড়ির মধ্যে মাইক নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি ধিক্কার জানাচ্ছি, নিন্দা জানাচ্ছি। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, দায়ী ব্যক্তিদের আমি অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। বিএনপির অবস্থান কর্মসূচী ঘিরে সকাল ১০টা থেকেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কাছাকাছি পুলিশের সাঁজোয়া যান ও জল কামানের গাড়িও রাখা হয়। বিএনপির এ কর্মসূচীর কারণে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কের এক পাশে যান চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় অন্য পাশ দিয়ে উভয়মুখী চলাচলের ব্যবস্থা করে পুলিশ।
×