ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নারী দিবসে জামিনে মুক্তি পেলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত খুরশীদা

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৯ মার্চ ২০১৮

 নারী দিবসে জামিনে মুক্তি পেলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত খুরশীদা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রামু উপজেলার এক শিশুকে অপহরণের অভিযোগের মামলায় ২০ বছর আগে কারাগারে যাওয়া এক নারীকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। ১৯৯৮ সালে এক শিশুকে অপহরণের দায়ে মনোয়ারা বেগম ওরফে মোতাহেরা বেগম ওরফে খুরশীদা বেগমকে কারাগারে যেতে হয়। ঘটনার প্রায় তিন বছর পর যাবজ্জীবন সাজা হয় তার। কিন্তু দরিদ্র হওয়ায় মনোয়ারা কোন আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেননি। দীর্ঘ দুই দশক পর এক আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে মনোয়ার বেগম নামে কক্সবাজারের সেই নারীকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন বৃহস্পতিবার জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এম.ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন। একই সঙ্গে ওই নারী জামিনে বের হয়ে যদি তার আত্মীয় স্বজনকে না পায়, তাহলে তাকে সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের জন্য কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক এবং সমাজ সেবা অফিসারকে নির্দেশও দেয়া হয়েছে। আদালতে আবেদনকারী এ্যাডভোকেট ছিলেন ফজলুর রহমান। আর আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন এ্যাডভোকেট মোঃ শফিউল্লাহ। শুনানির এক পর্যায়ে আদালতে আইনজীবী শফিউল্লাহ বলেন, মনোয়ারা বেগম দরিদ্র, গরিব। তার উকিল নিয়োগের সামর্থ্য নেই। তখন আদালত বলেন, ‘বয়স কত ?’ জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘তখন ২৫ বছর ছিল, এখন ৪৫ হয়েছে। আদালত বলেন, বাবা মা আত্মীয়স্বজন আছে ? জামিন দিলে কই যাবে ? সে কি বিবাহিত ?’ আইনজীবী বলেন, ‘ঘর বাড়ি আছে। গরিব ও দরিদ্র তো। তাই হয়ত যোগাযোগ নেই।’ পরে আদালত বলেন, আজ তো নারী দিবস। কিন্তু তার দীর্ঘ কারাবাস বিবেচনায় তাকে জামিন দিলাম। আর জামিনে মুক্তির পর মনোয়ারা যদি মনে করে, তার সামাজিক পুনর্বাসন দরকার, তাহলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও সমাজসেবা অফিসার তাকে পুনর্বাসন করবেন।’ আদালত আরও বলেন, এ রকম যারা দীর্ঘ কারাবাসে আছে তাদের মুক্তির পর যদি সামাজিক পুনর্বাসন দরকার হয়, তাহলে সরকার সেটা করবেন বলে পর্যবেক্ষণ দিচ্ছি। আর আদালতের এ আদেশ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, আইন সচিব ও সমাজকল্যাণ সচিব বরাবরে পাঠাতে হবে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের রামু উপজেলার পূর্ব ধেচুয়া এলাকার জনৈক ইসমাইলের স্ত্রী এবং কাদির হোসেনের মেয়ে মনোয়ারা বেগম ওরফে মোতাহেরা বেগম ওরফে খুরশীদা বেগম ১৯৯৮ সালের ১৩ জুন কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলাংজা এলাকায় যান। জনৈক মোঃ আবুল কালামের বাড়িতে গিয়ে মনোয়ারা বলেন, ‘আমি আত্মীয়ের বাড়ি খুঁজতে আসছি। কিন্তু পাইনি। যদি রাত থাকতে দেন তাহলে ভাল হয়। এরপর তাকে কালামের বাড়িতে থাকতে দেয়া হয়। পরের দিন সকালে কালামের মেয়ে কক্সবাজার প্রিপারেটরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী রাজিয়া (৮) স্কুলে যায়। এদিকে সকালে মনোয়ারাও বিদায় নিয়ে বের হন। কিন্তু দুপুরের পর রাজিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে এক লোকের মাধ্যমে কালাম জানতে পারেন রাজিয়াকে পাচারের উদ্দেশ্যে মনোয়ারা অপহরণ করে নিয়ে যায়। ১৭ জুন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ব্রিজের গোড়ায় পুলিশের কাছে রাজিয়াসহ আটক হন মনোয়ারা।
×