ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনৈতিক কারণে ত্বকী হত্যার বিচার শুরু করা হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ৯ মার্চ ২০১৮

রাজনৈতিক কারণে ত্বকী হত্যার বিচার শুরু করা হচ্ছে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ত্বকীকে কারা হত্যা করেছে তা নারায়ণগঞ্জের সবাই জানে। কীভাবে হত্যা করেছে তাও সবাই জনে। তারপরও শুধু রাজনৈতিক কারণে ত্বকী হত্যার বিচার কাজ শুরু হচ্ছে না। সন্ত্রাস নির্মূলে ত্বকী মঞ্চের এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই ত্বকী হত্যার বিচার দাবি জানিয়েছেন আলোচকরা। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ৫ বছর শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। সেই স্বপ্ন আজ দেউলিয়া হয়ে গেছে। তাই তো ত্বকী হত্যার মতো ঘটনাগুলোর বিচার হচ্ছে না। তিনি বলেন, রাষ্ট্র আজ নিপীড়নকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। খুনীরা চিহ্নিত হওয়ার পরও গত পাঁচ বছরে নারায়ণগঞ্জের কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়া এর বড় প্রমাণ। তিনি বলেন, দেশের ভবিষ্যত কিশোররা আজ ভীষণভাবে বিপদগ্রস্ত। রাষ্ট্র কিশোরদের বিকশিত ও জ্ঞান চর্চার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারছে না উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় আগামী নির্বাচনের আগেই ত্বকী হত্যার বিচার দাবি করেন অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ। তিনি বলেন, পাঁচ বছর হয়ে গেল। কিন্তু ত্বকী হত্যার বিচার হলো না। সরকার মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও উন্নয়নের কথা বললেও গোপনে খুনী ও মাফিয়াদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। কামাল লোহানী বলেন, দেশে স্পর্শকাতর কোন হত্যাকা-ের বিচার হচ্ছে না। রাষ্ট্রের উদাসীনতার কারণে প্রগতিশীলতা চর্চাকারী লোকজন আতঙ্কে রয়েছে। রাষ্ট্র ত্বকী, তনু, সাগর রুনীর মতো হত্যার বিচার চায় না। এই রাষ্ট্র চায় এ জাতি অন্ধকারে থাকুক, প্রেমের কথা বলে বন্ধু বন্ধুকে হত্যা করুক, কিশোররা অপরাধ করুক, মাদক সেবন করুক এটাই রাষ্ট্র চায়। তিবলেন, এটা নির্বাচনের বছর। আর এ নির্বাচনের আগে যেন এসব হত্যার বিচার হয়। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে ত্বকীর পিতা ররাŸ বলেন, ত্বকী হত্যার বিচার কাজ রাজনৈতিক কারণে শুরু হচ্ছে না। ত্বকীকে কারা হত্যা করেছে তা নারায়ণগঞ্জের সবাই জানে। কীভাবে হত্যা করেছে তাও সবাই জনে। তারপরও তার বিচার কাজ শুরু হচ্ছে না কেন? কারণ এর পিছনে রাজনৈনেতারা কাজ করছে উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সদস্য সচিব হালিম আজাদ তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেলে পাঠাগারে যাওয়ার পথে নারায়ণগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে অপহরণ করা হয়। ওই রাতেই ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। র‌্যাব-১১ এর কার্যালয়ে চিঠি দেন। এর দু’দিন পর ৮ মার্চ সকালে শীতলক্ষ্যা নদীর খালের পাড় থেকে ত্বকীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ৮ মার্চ রাতেই ত্বকীর বাবা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় দ-বিধি ৩০২/৩৪ ধারায় আসামি অজ্ঞাত উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন। দীর্ঘ ৫ বছরেও ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে হালিম আজাদ বলেন, ত্বকী হত্যার তদন্ত কার্যক্রম থেমে আছে। কেন আছে? তা জানি না। ত্বকী হত্যার বিচার দাবিতে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা সভায় অংশ নেন বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, ড. শফিউদ্দিন আহমদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, সমকালের সহযোগী সম্পাদক অজয় দাস গুপ্ত, আবদুল মালেক রতন, শফিউদ্দিন আহম্মেদ ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদ অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন।
×