ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জনদুর্ভোগ চরমে

কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সড়ক চলাচলের অযোগ্য

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৮ মার্চ ২০১৮

কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সড়ক চলাচলের অযোগ্য

এমএ রকিব কুষ্টিয়া থেকে ॥ দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের ৩২টি জেলার সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া-ঈশ্বরর্দী মহাসড়ক দুটি বর্তমানে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সড়ক দুটির ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ৪৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খান-খন্দক ও বড় বড় গর্ত। কোথাও কোথাও সড়কের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে গেছে। এর ফলে এক সময়ের পাথর-বিটুমিনের মহাসড়ক এখন ধুলো-বালিতে পূর্ণ অজপাড়া গাঁয়ের কোন মেঠোপথের রুপ ধারণ করেছে। ধুলো-বালি থেকে পরিত্রাণ পেতে যাত্রী ও পথচারীদের চলাচল করতে হচ্ছে নাকে কাপড় দিয়ে। তাছাড়াও সড়ক দুটি হয়ে উঠেছে যেন এক ‘মরন ফাঁদ’। মাঝে মধ্যেই ভারি যানবাহন ভেঙ্গে মুখ থুবড়ে পড়ছে। দীর্ঘ যানজট সৃষ্টিসহ বাড়ছে দুর্ঘটনা, ঝরে পড়ছে তরতাজা প্রাণ। দীর্ঘদিন যাবত মহাসড়ক দুটির ভয়াবহ এই বেহাল দশা অবস্থা হলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্তাদের টনক নড়ছে না। এদিকে দায়সারা ও ক্রুটিপূর্ণ সংস্কার কাজে গত দুই অর্থ বছরে সরকারের গচ্চা গেছে কোটি কোটি টাকা। সড়কে এই দুরবস্থা ও জনদূর্ভোগের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজ করেছে চাপা ক্ষোভ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সড়ক বিভাগের কর্তাদের সময়োপযোগী পদক্ষেপের অভাব, গাফিলতি, অপ্রতুল অর্থ বরাদ্দ এবং দায়সারা ও ক্রুটিপূর্ণ সংস্কারের ফলে গত দুই বছরে গুরুত্বপূর্ণ কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া-ঈশ্বরর্দী মহাসড়ক বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। ওই দুই মহাসড়কসহ কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগের আওতাধীন ২শ’ ৬১ কিলোমিটারের পুরোটাই বর্তমানে যানবাহন চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া-ঈশ^রদী মহাসড়ক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। গত ২০১৪/১৫ ও ২০১৬/১৭ অর্থ বছরে মহাসড়ক দুটি মেরামতের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। তবে অপর্যাপ্ত বরাদ্ধে দায়সারা সংস্কারে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে সংস্কারের পরপরই ভারি যানবাহনের অব্যাহত চাপ ও বর্ষায় বৃষ্টির পানিতে মহাসড়কের সংস্কারকৃত কাজগুলো ধুয়ে-মুছে বিলীন হয়ে যায়। এদিকে যান চলাচলের অযোগ্য এই মহাসড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। গত দুই বছর যাবত পর্যায়ক্রমে সড়কের এই বেহালদশা সৃষ্টি হলেও কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দের যেন মাথা ব্যাথা নেই। সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের এমপি মাহবুব-উল আলম হানিফের নির্বাচনী এলাকার মানুষ সড়কের এই বেহাল দশা ও জনদুর্ভোগে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অতি সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের উদ্যোগে কুষ্টিয়ায় মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা কালবিলম্ব না করে মহাসড়ক দুটি মেরামতের জোর দাবি তোলেন। সড়কের এই দুরবস্থায় পথচারী, যানবাহনের যাত্রী, চালক ও মহাসড়ক সংলগ্ন বসতবাড়ির মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সূত্র জানায়, সম্প্রতি ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মহাসড়ক দুটির অধিক ক্ষতিগ্রস্ত ৪৩ কিলোমিটারের মধ্যে ২৬ কিলোমিটার সংস্কারের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হলেও টেন্ডারে কোন ঠিকাদারই অংশগ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে পুনঃটেন্ডার আহ্বানের পর তা এখন সড়ক বিভাগের খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রকৌশলীর দফতরে মূল্যায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগের একটি সূত্র জানায়, টেন্ডার অনুমোদন সাপেক্ষে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া ঈশ^রদী মহাসড়কের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ২৬ কিলোমিটার মজবুতীকরণ করা হবে। তবে এই সংস্কার কাজটিও সাময়িক। ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়ক দুটি পুনঃনির্মাণের মাধ্যমে টেকসই করতে অন্তত ১শ’ কোটি টাকার প্রয়োজন বলে কর্মকর্তারা জানান। বাস-মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেন লাভলু বলেন, আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। করুণ দশায় পরিণত মহাসড়ক দুটিতে প্রতিদিন দুর্ঘটনা, গাড়ি বিকলসহ যন্ত্রাংশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। সত্বর মেরামত কাজ শুরু না হলে গাড়ি চলাচল বন্ধ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। সড়ক বিভাগ কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, মহাসড়ক দুটির অধিক ক্ষতিগ্রস্ত অংশ সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রকৌশলীর দফতর থেকে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে টেন্ডার উন্মুক্ত ও অনুমোদনের পর সংস্কার কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান।
×