ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাটের বহুমুখীকরণ শীর্ষক সেমিনার

নতুন প্রবৃদ্ধির চালক হতে পারে পাট

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৮ মার্চ ২০১৮

 নতুন প্রবৃদ্ধির চালক হতে পারে পাট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাট শিল্পের উন্নয়নে পাটের বহুমুখীকরণের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে। সেই সঙ্গে দেশে-বিদেশের পাটের বাজার পুনরুজ্জীবিত করতে ‘জুট পাল্প পেপার এ্যাক্ট’ জরুরী বলে মনে করছেন পাট সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজনরা। পাট বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে বহুমুখী পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে যেখানে পাট থেকে ২৫০টির মতো বিচিত্র পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। পাট নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, রফতানি নীতি ও শিল্পনীতিতে বহুমুখী পাট পণ্য খাতকে আগামী দশ বছর বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন। বুধবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘পাট শিল্পের উন্নয়নে পাটের বহুমুখীকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারে পাটের উন্নয়নে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নানা পরামর্শও তুলে ধরেন। পাটের মেশিনারি পরিবর্তন করে নতুন হওয়ার প্রয়োজন বলে জানান। পাট বীজের মান সবল হওয়া, দক্ষ বাজার ব্যবস্থাপনা ও সরকারের পলিসিতে ঐক্যতার কথাও উঠে আসে সেমিনারে। ডিসিসিআই সিনিয়র সভাপতির সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআই স্পেশাল কমিটির আহ্বায়ক মোঃ রাশেদুল করিম মুন্না। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, বিশ^ব্যাপী গ্রীন প্রডাক্ট, ন্যাচারাল প্রডাক্ট চাহিদা জোরালো হচ্ছে। প্লাস্টিকের যুগ সীমিত হতে যাচ্ছে। সরকারের রফতানি ও শিল্প নীতিতে এ খাতকে বিশেষ অগ্রাধিকারের কথা বলেন। একই সঙ্গে পাটকে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য হিসেবে অতি দ্রুত তালিকাভুক্তির কথাও বলেন। পাট শিল্প বহুমখীকরণের কিছু চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরলেও এর উন্নয়নে কিছু প্রস্তাবনা রাখেন। প্রস্তাবনার মধ্যে অন্যতম দক্ষ জনবল উন্নয়নে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা। সেই সঙ্গে সরকার ঘোষিত জুট প্যাকেজিং এ্যাক্ট প্রয়োগ ও কার্যকরীভাবে অব্যাহত রাখা। উন্নত মানের বীজ স্থানীয়ভাবে উৎপান করা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর মেশিনারির ব্যবস্থাসহ আরও একাধিক উন্নয়ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন তার প্রবন্ধে। সেমিনারে প্রধান অতিথি বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, পাটের বিরুদ্ধ ষড়যন্ত্র নতুন নয়। এক সময় পাট ছিল প্রধান অর্থকরি ফসল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে পাটের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময় পাটকলকে আধুনিক করার পরিবর্তে বন্ধ করে দেয়ার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২০০২ সালে বিএনপি আমলে দেশের ও এক সময়ের বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজীকে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে গোল্ডেন হ্যান্ডসেকের মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার পাটের হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে উদ্যোগ নেন। পাটের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেন। বর্তমানে আরও নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। বীজের কথা উল্লেখ করে মির্জা আজম বলেন, আমাদের দেশে উৎপাদিত পাটের ৯০ ভাগ বীজ ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। বিভিন্ন সময় পাটকল বন্ধ হওয়ার কারণে বীজ উৎপাদনে কৃষককে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এর ফলে বর্তমানে পাটের বীজের ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভরতা রয়ে গেছে। পাটকে কৃষিজাত পণ্য হিসেবে যে স্বীকৃতির বিষয়টি আটকে আছে খুব দ্রত সময়ে এবার তা সমাধান হবে আশাবাদী বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত বছর পাট দিবসে ১৩৫টি পাটের বহুমখী পণ্য তালিকা পেয়েছি আর এবছর ২৪০টি। বহুমুখী পণ্যের ক্ষেত্রে গবেষণা দরকার বলেও মনে করেন তিনি। গবেষণা হলে সব কিছুরই উৎপাদন বৃদ্ধি পায় বলেও জানান। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির যে অবস্থানে দাঁড়িয়েছে তা কিছু প্রবৃদ্ধি চালিত। নতুন প্রবৃদ্ধির চালক তৈরি করতে হবে। পাটকে ঘিরে নতুন প্রবৃদ্ধির চালক চিন্তা করা সম্ভব। অতীতে কি ছিল কি হয়েছে এসব চিন্তা না করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি। ড. হোসেন জিল্লুর রহমান আরও বলেন, মধ্যম আয়ের দেশে যেতে পাট নতুন অর্থনৈতিক চালক হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। সম্ভাবনাময় হিসেবে অনেক কিছুই হারিয়ে গেলেও পাটের ক্ষেত্রে তা হবে না বলেও মনে করেন তিনি। সেই সঙ্গে পলিসির জায়গায় আরও ভাল কাজ করার কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, কয়েক দশক পূর্বেও পাটশিল্প বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্প ছিল। তবে বর্তমানে এর ব্যবহার আবার বাড়ছে বলেও জানান তিনি। আবুল কাসেম খান বলেন, বিশে^র ৬০টি দেশে চাহিদা সৃষ্টি করেছে পাটজাত পণ্য। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পাটজাত পণ্য হতে ৯৬২.৪২ মিলিয়ন ডলার রফতানি আয় হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশে^র মোট পাটের ৩৩ শতাংশ উৎপাদন করে এবং কাঁচাপাটের ৯০ শতাংশ রফতানি করে। অথচ ভারত বিশে^র মোট উৎপাদনের ৬০ শতাংশ উৎপাদন করলেও রফতানি করে ১২ শতাংশ। অর্থাৎ ভারত স্থানীয়ভাবে পাটের বহুমুখীকরণের ওপর ব্যাপক গুরুত্বারোপ করছে। তিনি বলেন, পাল্প, পেপার এবং রেয়ন ভিত্তিক পাট শিল্পের ওপর গুরুত্ব দেয়া হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে। সেই সঙ্গে সোনালি আঁশের ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত হবে, কর্মসংস্থান হবে বলে জানান তিনি। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মোঃ মাহমুদুল হাসান, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. এ এফ এম আকতারুজ্জামান, পাটকল কর্পোরেশনের উপদেষ্টা (গবেষণা) বাবুল চন্দ্র রায়। পরবর্তীতে উন্মুক্ত আলোচনায় বিশিষ্টজনরা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।
×