ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৩ মাসে খেলাপী ঋণ কমেছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা হিসাব দেয়নি ফারমার্স ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৮ মার্চ ২০১৮

৩ মাসে খেলাপী ঋণ কমেছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা  হিসাব দেয়নি ফারমার্স ব্যাংক

রহিম শেখ ॥ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। ব্যবসা-বাণিজ্যেও কিছুটা গতি ফিরেছে। উদ্যোক্তারা নতুন করে বিনিয়োগে আসছেন। এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের শেষ প্রান্তিক থেকেই ব্যাংকের ঋণ চাপ বেড়েছে। গত বছরের শেষ সময়ে বিপুল অঙ্কের ঋণ পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত ও আদায় জোরদার করার ফলে ফের এক অঙ্কে নেমেছে খেলাপী ঋণ। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ফারমার্স ব্যাংক বাদে এ খাতে খেলাপী ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা; যা এ সময় পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ২২ শতাংশ। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ খাতে খেলাপী ঋণ ছিল ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা বা ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ হিসাবে গত তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপী ঋণ কমছে ৬ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা। তবে শেষ তিন মাসে কমলেও গত এক বছরের ব্যবধানে এ খাতে খেলাপী ঋণ বাড়ছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, গত বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খেলাপী ঋণ বাড়লেও শেষ প্রান্তিকে তা কমেছে। ফারমার্স ব্যাংকের চিত্র পাওয়া গেলে এ খাতে মোট খেলাপী ঋণের পরিমাণ আরও কিছুটা বাড়লেও তা এক অঙ্কেই থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। জানা গেছে, গভীর সঙ্কটে থাকা ফারমার্স ব্যাংক তাদের খেলাপী ঋণের (সিএল) বিবরণী বাংলাদেশ ব্যাংকে এখনও দাখিল করেনি। এতে সার্বিক ব্যাংকিং খাতে ডিসেম্বর প্রান্তিকের খেলাপী ঋণের সমন্বিত বিবরণী এখনও চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে ফারমার্স ব্যাংক বাদে এ খাতে খেলাপী ঋণের যে হিসাব তৈরি করা হয়েছে তাতে শেষ তিন মাসে খেলাপী ঋণ কমছে। সূত্র বলছে, ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলো তাদের অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাই সেখানে ভাল অবস্থান দেখাতেই বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে থাকে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে অন্যতম হলো- খেলাপী ঋণ পুনঃতফসিল বা নবায়ন। আর বছরের শেষ সময়ে এসে এই সুবিধা দেয়া-নেয়ার প্রবণতাও বাড়ে। এছাড়া শেষ সময়ে ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদার করা হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবসা-বাণিজ্যকে গতিশীল করতে ব্যাংকগুলোকে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দিয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় অধিকাংশ ব্যবসায়ীর ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ করেছে। এ সময়ে কিছু ঋণ অবলোপনও হয়ে থাকতে পারে। এসব কারণেই খেলাপী ঋণ কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ফারমার্স ছাড়া দেশের ৫৬টি ব্যাংক মোট ঋণ বিতরণ করেছে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপী হয়ে পড়েছে ৭৩ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ২২ শতাংশ। এক বছর আগে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এ খাতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ছিল ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ খাতে খেলাপী ঋণ ছিল ৫১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ ছিল। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ২৫ শতাংশ। তিন মাস আগে এই ছয়টি ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ছিল ৩৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা বা ২৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ সময়ে সরকারী মালিকানার দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপী ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ২৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তিন মাস আগের এই ব্যাংক দুটি খেলাপী ঋণ ছিল ৫ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা বা ২৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে বেসরকারী খাতের ৩৮টি ব্যাংকের খেলাপী ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। তিন মাস আগে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ খাতের ৩৯টি ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ছিল ৩৩ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ। অন্যদিকে, ডিসেম্বর শেষে বিদেশী খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১২২ কোটি টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। তিন মাস আগে বিদেশী ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণ ছিল ২ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। এদিকে, বেসরকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে আলোচিত ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ছিল ৩৭৮ কোটি টাকা। যা ওই সময় পর্যন্ত ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ ছিল। অক্টোবর শেষে ডিসেম্বরে এই তিন মাসেও এই ব্যাংটির খেলাপী ঋণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়বে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
×