ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এএফসি কাপ বাছাইয়ে আবাহনীর দুর্ভাগ্যজনক হার

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৮ মার্চ ২০১৮

এএফসি কাপ বাছাইয়ে আবাহনীর দুর্ভাগ্যজনক হার

রুমেল খান ॥ মালদ্বীপের কোন ক্লাব দল ঢাকায় খেলতে এলে বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর প্রাধান্য বিস্তার করে ভাল খেলে হেরে যাওয়াটা যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে অমোঘ নিয়তির মতো। গত ২৩ জানুয়ারি ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এএফসি কাপ প্লে-অফ বাছাই ম্যাচে বাংলাদেশের সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব ০-১ গোলে হেরে গিয়েছিল মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টস ক্লাবের কাছে। ওই ম্যাচে প্রতিপক্ষের পোস্টে চারবার বল লাগিয়েও গোলবঞ্চিত ছিল সাইফ। বুধবার সাইফের মতোই দশা হলো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের। তারাও এএফসি কাপের ‘ই’ গ্রুপের খেলায় ০-১ গোলে হেরেছে মালদ্বীপের আরেক ক্লাব নিউ রেডিয়েন্ট ক্লাবের কাছে। আবাহনীর দুভার্গ্য- ম্যাচে তারা তিন-তিনটি গোল করলেও একটি গোলও বৈধতা পায়নি। প্রতিটি গোলই নষ্ট হয়েছে ‘অফসাইড’ নামের আইনের কবলে পড়ে। ফলে হেরে হতাশার অনলে দগ্ধ হতে হয়েছে ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’কে। আগামী ১৪ মার্চ ভারতে বেঙ্গালুরুতে গিয়ে এ্যাওয়ে ম্যাচে মোকাবেলা করবে ভারতের বেঙ্গালুরু এফসির। আবাহনীর সবচেয়ে বড় ভয় ছিল ‘দক্ষিণ এশিয়ার মেসি’ খ্যাত আলী আশফাককে। তবে আশফাককে মোটামুটি আটকাতে পারলেও আকাশী-নীলদের সবচেয়ে বড় সর্বনাশটা করেছেন রেডিয়েন্টের মিডফিল্ডার আলী ফাসির। ৫৮ মিনিটে বাঁপ্রান্ত থেকে কোনাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন রেডিয়েন্টের খেলোয়াড় আলী ফাসির (১-০)। এ্যাসিস্ট করেন আরেক সতীর্থ মিডফিল্ডার মোহাম্মদ উমায়ের। ৬৪ মিনিটে সর্বনাশের চূড়ান্ত ধাপে উপনীত হয় এই আসরে দ্বিতীয়বারের মতো খেলা আবাহনীর। তাদের নির্ভরযোগ্য নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে চিজোবা লালকার্ড পেয়ে বহিষ্কৃত হন। দক্ষিণ কোরিয়ান রেফারি কিম হি গন বাজে ফাউল করার অপরাধে সানডেকে দ্বিতীয়বারের মতো হলুদ কার্ড দেখালে দশজনের দলে পরিণত হয় আবাহনী। তারপরও খেলা শেষ হবার আগ পর্যন্ত সমানতালেই লড়ে গেছে তারা। কিন্তু ভাগ্য আর সহায় হয়নি। শুধু তাই নয়, তিন-তিনবার প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়েও গোলবঞ্চিত হতে হয়েছে সাইফুল বারী টিটুর শিষ্যদের। ৪৫ মিনিটে সানডের পাসে বক্সে বল পেয়ে নাইজেরিয়ান এ্যালিসন উদুকা, ৪৯ মিনিটে অপর নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড এমেকা ডার্র্লিংটন এবং ৯০ মিনিটে নাবিব নেওয়াজ জীবন গোল করলেও প্রতিবারই তা বাতিল হয়ে যায় লাইন্সম্যানের ঝা-া উত্তোলন এবং বেরসিক রেফারির বাঁশিতে। আগেরদিন ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করার আশ্বাস দিয়েছিলেন আবাহনীর কোচ সাইফুল বারী টিটু। কিন্তু জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারবেন সেই নিশ্চয়তা দেননি। তার সেই কথাই রাখলো তার ‘সুযোগ্য’ শিষ্যরা। ম্যাচ শেষে রেডিয়েন্টের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুসেন বলেন, ‘এ্যাওয়ে ম্যাচে তিন পয়েন্ট পেয়ে খুবই খুশি হয়েছি। টুর্নামেন্টের শুরুটা খুব ভাল হয়েছে। ম্যাচের প্রথম বিশ মিনিট একটু নিয়ন্ত্রণ নিতে কষ্ট হয়েছে। আবাহনী ফিজিক্যাল গেম খেলেছে। বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ায় পরবর্তীতে সমস্যা হয়নি। ফুটবল ক্যাসিনো না। এখানে ভাগ্যের কিছু নেই। পরিশ্রম করে অর্জন করতে হয়। আবাহনীর রাইট উইং ফুটবলার খুবই ভাল খেলেছে। মাঠ নিয়ে খুব বেশি বলব না। তবে এটুকুই বলবোÑ আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য আরও ভাল মাঠ প্রয়োজন। ১০ জন হয়ে যাওয়ার পর আবাহনী কঠিন সময় পার করেছে। ফ্রি কিক ছাড়া আমাদের বক্সে তেমন বল আনতে পারেনি।’ ম্যান অব দ্য ম্যাচ আলী ফাসির বলেন, ‘৯০ মিনিট কঠিন পরিশ্রম করে ম্যাচ জিততে পারায় সন্তুষ্ট।’ উল্লেখ্য, আলী ফাসিরের এএফসি কাপে এটা ছিল পঞ্চম গোল। আবাহনীর কোচ সাইফুল বারী টিটু বলেন, ‘যাই খেলা হলো রেজাল্ট আমাদের বিপক্ষে, এটাই বাস্তবতা। আমরা চেষ্টা করেছিলাম পরিবর্তনের। সেটা হলো না এ জন্য হতাশ খানিকটা। আন্তর্জাতিক ম্যাচে যদি গোল না করতে পারেন তাহলে জেতা সম্ভব না। সানডে দুইজনকে কাটিয়ে বক্সে প্রবেশ করলে কেন বারের ওপর দিয়ে মারলো, তা বোধগম্য নয়। সানডের লালকার্ডের পরই মূলত ম্যাচ থেকে আমরা ছিটকে যাই। হার কাটিয়ে এখন ব্যাঙ্গালুরুর ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।’
×