ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণের বর্ষপূর্তি বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতায় পালিত

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৮ মার্চ ২০১৮

 বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণের বর্ষপূর্তি বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতায় পালিত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন, স্মৃতিচারণ, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, কনসার্ট, শোভাযাত্রা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা এবং আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সব ধরনের ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণের ৪৭তম বর্ষপূর্তি পালিত হলো। গত ৩০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ায় এবার ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়। বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় গৌরবের অনন্য দিন ঐতিহাসিক ৭ মার্চ দিবসটি উপলক্ষে বুধবার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে সর্বস্তরের জনতার ঢল নামে। বঙ্গবন্ধুর সেই জগৎখ্যাত ভাষণকে স্মরণ করে ধানম-িতে অবস্থিত তাঁর প্রতিকৃতি ফুলে ফুলে ভরে যায়। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী এবং সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। এবার ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণকে জাতীয়করণের দাবি উঠেছে সর্বত্র। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে বুধবার প্রথম প্রহর থেকে সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়ে মাইকে বাজানো হয় বঙ্গবন্ধুর সেই অবিনাশী ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ সকাল সাড়ে ছয়টায় ধানম-ির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। দেশের সব ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, থানা, উপজেলা, মহানগর ও জেলাসমূহের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ একযোগে প্রচার এবং দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সকাল সাতটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানম-ি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে স্বাধীনতার এই মহান স্থপতির প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানান। শেখ হাসিনা প্রথমে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তিনি বাঙালী জাতির এই মহানায়কের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের পক্ষ থেকে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আরেকটি পুষ্পস্তবক জাতির পিতার প্রতিকৃতির বেদিতে তুলে দেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, সাহারা খাতুন, ওবায়দুল কাদের, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ড. হাছান মাহমুদ, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, অসীম কুমার উকিল, সুজিত রায় নন্দী, আফজাল হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবছর এই ঐতিহাসিক দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হলেও জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় এবছর উজ্জীবিত জাতি ভিন্নমাত্রায় দিবসটি উদযাপন করেছে। স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা আর শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে বাঙালী জাতি মূর্ত করে তোলে ইতিহাসের সেই অমর দিনটিকে। দিবসটিতে ক্ষুধা-দারিদ্র্য-সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সর্বস্তরের মানুষ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত ও সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট রহমত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, মৎস্যজীবী লীগ, যুব শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, মোটরচালক লীগ, ওলামা লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, জাতীয় বিদ্যুত শ্রমিক লীগ, বাকশাল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু লেখক সমিতি, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ, জাতীয় গীতিকবি পরিষদ, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ), বঙ্গবন্ধু আদর্শ মূল্যায়ন ও গবেষণা সংসদ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সংসদ, মুক্তিযুদ্ধ প্রজš§, ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী, সোনালী ব্যাংক এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন, ঢাকা প্রবাসী সংহতি পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমি, সোনার বাংলা যুব পরিষদ, রেলওয়ে শ্রমিক লীগ, ঢাকাস্থ টুঙ্গীপাড়া সমিতি, হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিল্পী গোষ্ঠী, সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা কৃষিবিদ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ, নাগরিক কমিটি, আইন সমিতি, শিশু-কিশোর যুব সাংস্কৃতিক জোট, নির্মাণ শ্রমিক লীগ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড, মুক্তিযোদ্ধা সমাজকল্যাণ পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা উত্তরসূরি ফোরাম, আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু আইন পরিষদ, যুব সাংস্কৃতিক জোটসহ অসংখ্য দল ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ৭ মার্চ উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। সভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেন। এদিকে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ’ উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর সার্কিট হাউজ রোডে অবস্থিত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (ডিএফপি) উদ্যোগে ডিএফপি চত্বরে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐহিত্য হিসেবে ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’ অন্তর্ভুক্তি উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে বুধবার ‘বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক উৎসব‘-এর আয়োজন করা হয়। শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের জাতীয় চিত্রশালা প্লাজায় আর্টক্যাম্পে শিল্পীরা ছবি আঁকেন। আর্টক্যাম্পের উদ্বোধন করেন শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী। ‘বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক উৎসব’ উদ্বোধন করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ওপর আলোচনা সভার আয়োজন করে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালের সভাপতিত্বে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন।
×