ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি হাওড়ে বাঁধ নির্মাণ

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৭ মার্চ ২০১৮

নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি হাওড়ে বাঁধ নির্মাণ

নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ, ৬ মার্চ ॥ হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ নিয়ে উদ্বেগ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ‘হাওড় বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও অন্দোলন’। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বাঁধ নির্মাণে নীতিমালা লঙ্ঘন, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ ও যথাসময়ে বাঁধের নির্মাণকাজ সমাপ্ত না করাসহ ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি প্রধানমন্ত্রী কাছে তুলে ধরা হয়েছে। স্মারকলিপিতে হাওড়ের সার্বিক অবস্থা নিয়ে তিন পৃষ্ঠায় বাঁধের বাস্তবচিত্র উপস্থাপন করা হয়। এ সময় সংগঠনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, প্রভাষক চিত্ত রঞ্জন তালুকদার, উপদেষ্টা বিকাশ রঞ্জন চৌধুরী ভানু, সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মালেক হোসেন পীর, ডাঃ মুর্শেদ আলম, অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালেহীন চৌধুরী শুভ প্রমুখ। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাওড়ের সকল ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ সমাপ্ত করার কথা থাকলেও কোন বাঁধের কাজই ওই সময়ের মধ্যে সমাপ্ত করা হয়নি। এমনকি জেলার তাহিরপুর, শাল্লা, দিরাই ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার প্রায় ১৮টি পিআইসি এখনও ভাল করে কাজই শুরু করেনি। বাঁধের ৫০ মিটার দূর থেকে মাটি এনে বাঁধ নির্মাণের বিধান থাকলেও বেশির ভাগ পিআইসি বাঁধের গোড়া থেকে মাটি উত্তোলন করে বাঁধ নির্মাণ করছে। বাঁধের নিচের লেভেল ওপরের লেভেলের তিন গুণ হওয়ার কথা থাকলেও বাঁধের ওপরের লেভেল ঠিকটাক রেখে গ্রাউন্ড লেভেল সরু করা হয়েছে। বোরো ফসল রক্ষায় আবশ্যক অনেক হাওড়ে বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা না হলেও প্রভাবশালীদের ইশারায় তাদের স্থানীয় অনুসারীদের অবৈধ আর্থিক সুবিধা দিতে অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারী অর্থ অপচয় করা হচ্ছে। হাওড়ের বোরো ফসল রক্ষাবাঁধের টাকা দিয়ে শহররক্ষা বাঁধ, গ্রামের যাতায়াতের রাস্তা, কোনো দিন কাজে আসবে না এমন রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি বাঁধে আবশ্যিকভাবে দুরমুজ করার কথা থাকলেও, কোন বাঁধেই তা করা হচ্ছে না। বাঁধে দুরমুজ করার জন্য সরকার অতিরিক্ত ২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এ টাকা অপচয় ও আত্মসাত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক। পুরনো অনেক বাঁধে মাটির প্রলেপ দিয়ে বাঁধটিকে একেবারে নতুনের মতো অবয়ব দেয়া হচ্ছে। ওইসব বাঁধে মাটির পুরো টাকা ধরা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মাটির বদলে অনেক স্থানে দুর্বল বালির বাঁধ দেয়া হচ্ছে। আগাম বন্যা হলে ওইসব বাঁধ কিছুতেই পানির চাপ সামলাতে পারবে না। বৃষ্টির পানি যাতে বাঁধের মাটি কেটে নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য বাঁধে ঘাস লাগানোর কথা থাকলেও কোন বাঁধে ঘাস লাগাতে দেখা যায়নি। এখাতে বরাদ্দকৃত টাকা পুরোটাই অপচয় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পতে বরাদ্দের পরিমাণ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাম, পদবিসংবলিত সাইনবোর্ড টাঙানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও জনগণকে অন্ধকারে রাখতে বেশির ভাগ বাঁধে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়নি। স্মারকলিপিতে বলা হয় নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি দিয়ে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে পুরো জেলায় বাঁধ নির্মাণে আরও অনেক অসঙ্গতি বেরিয়ে আসবে।
×