ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাদপ্রদীপের আলোয় জাগিতোভা

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ৭ মার্চ ২০১৮

পাদপ্রদীপের আলোয় জাগিতোভা

সদ্যসমাপ্ত শীতকালীন অলিম্পিকে চমকে দিয়েছেন এলিনা জাগিতোভা। ফিগার স্কেটিংয়ের মহিলা এককে রোমাঞ্চকর পারফরম্যান্স উপহার দিয়েই স্বর্ণপদক জয়ের স্বাদ পান তিনি। সেই সঙ্গে ১৯৯৮ সালের পর সবচেয়ে কম বয়সী স্কেটার হিসেবেও স্বর্ণপদক জয়ের রেকর্ড গড়েন ১৫ বছরের এই রাশিয়ান তারকা। স্কেটিং এর নারী এককে তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের টারা লিপিন্সকি সর্বকনিষ্ঠ এ্যাথলেট হিসেবে স্বর্ণপদক জয়ের রেকর্ড গড়েছিলেন। তারপর এই কীর্তি গড়লেন রুশ তারকা। এবারের প্রতিযোগিতায় জাগিতোভা বিশ্ব রেকর্ড ৮২.৯২ পয়েন্টের পাশাপাশি পেয়েছেন মোট ১৫৬.৬৫ পয়েন্ট। স্বদেশী এবং অনুশীলন পার্টনার এভজেনিয়া মেদভেদেভাকে ১.৩১ পয়েন্টের ব্যবধানে হারান তিনি। ফ্রি-স্কেটিংয়ের এই ইভেন্টে তৃতীয় হয়ে ব্রোঞ্জপদক জিতে আলো কাড়েন কানাডার কায়েলিন ওসমোন্ডও। এর আগে ২০১৪ সালে রাশিয়ার সোচিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল শীতকালীন অলিম্পিক। সেবার ভয়াবহ ডোপিং কেলেঙ্কারির কারণে রাশিয়ান এ্যাথলেটদের নিষিদ্ধ করে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি। যে কারণেই দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংচ্যাংয়ে শীতকালীন অলিম্পিকে জাগিতোভা-মেদভেদেভারা অংশ নেন অলিম্পিক এ্যাথলেটস ফ্রম রাশিয়া বা ওএআর হিসেবে। ওএআর হলেন সেসব এ্যাথলেটস যারা রাশিয়ার নাগরিক তবে অলিম্পিকে রাশিয়াকে প্রতিনিধিত্ব করেন না। ক্রীড়ার মহাযজ্ঞে তারা দেশটির পতাকাও বহন করতে পারেননি। এমনকি তারা যখন আসরে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন তখনও বাজানো হয়নি রাশিয়ার জাতীয় সঙ্গীত। তাদের পদকও যোগ হবে না রাশিয়ার পদক তালিকায়। তাই ইতিহাস গড়েও নিঃসন্দেহে দুঃখ রয়ে গেল জাগিতোভার মনে। কেননা, পদক নেওয়ার সময় উঠেনি যে তার নিজের দেশের পতাকা। বাজেনি সঙ্গীতও। বরং অলিম্পিকের পতাকা ও সঙ্গীত বেজেছে তার পদক নেওয়ার সময়। তারপরও শীতকালীন অলিম্পিকে প্রথম স্বর্ণপদক জয়ের উচ্ছ্বাস দারুণভাবে ছুঁয়ে যায় তরুণ প্রতিভাবান স্কেটার জাগিতোভাকে। কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক জয়ের পর নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে রাশান তারকা বলেন, ‘আমি অলিম্পিক পদক জিতেছি সেটা বুঝতে একটু সময় লেগেছে। জানতাম এখানে ভুলের কোন মাশুল নেই। হাত কাঁপছিল, তবে শরীর ঠিকই মনে রেখেছিল যে অনুশীলনে বহুবার এমনটা হয়েছে আমার।’ কালক্রমে নতুন কেউ জায়গা দখল করে নেবে এটাই প্রকৃতির অমুঘ নিয়ম। পুরনোদের আড়ালে চলে যেতে হয় এক সময়। ‘বরফের রাজকুমারী’ হিসেবে দীর্ঘ ৪ বছর একক প্রাধান্য দেখিয়েছেন এভজেনিয়া মেদভেদেভাও। এই সময়ে তার সঙ্গে লড়াই করে পেরে ওঠেনি কেউ। কিন্তু অনুশীলন সতীর্থ ও বয়সে ছোট হলেও খুব ভাল বন্ধু এলিনা জাগিতোভা ক্রমেই জেগে উঠছিলেন মহীরুহ হয়ে। ভাগ বসাতে শুরু করেছিলেন মেদভেদেভার সিংহাসন। এবার নিজেই রাজকুমারীর আসনে আসীন হয়েছেন পিয়ংচ্যাংয়ে। নিষিদ্ধ রাশিয়াকে প্রথম একক স্বর্ণপদক এনে দেওয়ার এই স্মৃতি খুব সহজে ভুলতে পারবেন না তিনি। এ প্রসঙ্গে জাগিতোভা বলেন, ‘আমি চ্যাম্পিয়ন হয়েছি এটা কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এটা হজম হতে আমার বেশ সময় লাগবে।’ তার অবিশ্বাসের কারণ, বরাবরই মেদভেদেভাকে দেখেই নিজেকে অনুপ্রাণিত করে এসেছেন জাগিতোভা। আর মেদভেদেভা দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং একবারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন। ফ্রি-স্কেটে উভয়ে ১৫৬.৬৫ পয়েন্ট স্কোর করেছিলেন। কিন্তু সার্বিক স্কোরে এগিয়ে যান জাগিতোভা। তিনি বলেন, ‘আমি অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন এই অনুভূতিটা এখনও নিজের মধ্যে কার্যকর হয়নি। তবে যখন আমি জেনেছি যে আমি প্রথম হয়েছি, তখন অবশ্যই খুবই খুশি হয়েছি এবং সেই সঙ্গে একটা শূন্যতাও বোধ করেছি। সেই শূন্যতাটা আমার এতদিনের পরিশ্রমের ফল পেয়েছি সেটা সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে না পারার বিষয়টি। কিন্তু সে সব শতঘণ্টা ধরে করা পরিশ্রম বৃথা যায়নি। এই শূন্যতাবোধ ব্যাখ্যা করা কঠিন। ১০ বছর ধরে আমি স্কেটিং করছি। আমি সব উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়েই গেছি এবং অবশেষে এখন আমি অলিম্পিক স্বর্ণপদক অর্জন করেছি।’ এবার মেদভেদেভার পিয়ংচ্যাংয়ে অলিম্পিক স্বর্ণপদক হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনাই দেখছিলেন সবাই। এর কারণটাও খুব সুস্পষ্ট ছিল অনেকের কাছে। কেননা, গত অক্টোবরেই যে পা ভেঙ্গে যায় তার। এরপর দীর্ঘ আড়াই মাসেরও বেশি সময় স্কেটিং থেকে নির্বাসনে চলে যেতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু এই সময়ে তার কাছের বন্ধু এবং অনুশীলন সতীর্থ জাগিতোভা কেন্দ্রীয় মঞ্চে নিজেকে ভালভাবেই প্রতিষ্ঠিত করে নেন। যখন নিজের ইনজুরি আক্রান্ত অঙ্গের পরিচর্যায় ব্যস্ত ছিলেন মেদভেদেভা, সেই সময় জাগিতোভা নিজের পারফর্মেন্সকে আরও নিখুঁত করার জন্য অবিরাম অনুশীলন চালিয়ে গেছেন। সিনিয়র ক্যারিয়ারের প্রথম মৌসুমেই তিনি তারচেয়ে ফেবারিটদের হারিয়ে দিয়েছেন এবং জাপানে গ্রাঁ প্রিঁ ফাইনালে শিরোপা জিতেছেন। এরপর মেদভেদেভা-জাগিতোভা প্রথম লড়াইটা হয়েছে গত জানুয়ারির শেষভাগে। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপসে অবশ্যই বরফে ফিরে আসা মেদভেদেভা নিজের সেরাটা দিতে পারেননি। কিন্তু স্থায়ুচাপহীন জাগিতোভা ঠিকই আকর্ষণীয় নৈপুণ্য দেখিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এরপর দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংচ্যাংয়েও দেখালেন তার কারিশমা। তরুণ প্রতিভাবান এই স্কেটারের অসাধারণ পারফর্মেন্সে মুগ্ধ হয়েছে গোটা দুনিয়া।
×