ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিদাহাস ট্রফিতে কাল মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৭ মার্চ ২০১৮

নিদাহাস ট্রফিতে কাল মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত

মিথুন আশরাফ ॥ শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফি শুরু হয়ে গেছে। তিনজাতির এ ট্রফিতে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা ও ভারত নিজেদের মিশন শুরু করে দিয়েছে মঙ্গলবার। বাংলাদেশের মিশন শুরু হওয়ার বাকি আছে। আজ একদিন টুর্নামেন্টে বিরতি। বৃহস্পতিবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে রাত সাড়ে সাতটায় ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশ মিশন শুরু করবে। ট্রফিতে তিন দলের মধ্যে ভারত সেরা। একথা সবদলের ক্রিকেটার, কোচের মুখ থেকেই বের হচ্ছে। টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়েও তিন দলের মধ্যে ভারতই সবার ওপরে। আছে তিন নম্বরে। শ্রীলঙ্কা যেখানে আট নম্বরে আছে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। এই র‌্যাঙ্কিং দেখেই টি২০তে বাংলাদেশের অবস্থান বোঝা যায়। ভারতের বিপক্ষে যে বাংলাদেশ কঠিন পরীক্ষার মুখেই পড়বে তাও বোঝা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল তো ভারতকে ফেভারিটই বলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ফেবারিট যদি বলতে হয় অবশ্যই ভারত। ওরা যে ছন্দে আছে...।’ সত্যিই তাই। টি২০তে ভারত তুখোড় ছন্দে আছে। সর্বশেষ ৭ ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটি ম্যাচে হেরেছে ভারত। সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে জেতা কতটা কঠিন তা সবদলই বোঝে। কিন্তু ভারত সেখানে গিয়ে সিরিজ জিতেছে। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, টি২০তে কতটা শক্তিশালী দল ভারত। আবার বাংলাদেশ দলে নেই সাকিব আল হাসান। স্বাভাবিকভাবে ভারতই ফেভারিট হয়ে মাঠে নামবে। অবশ্য তামিম একটি বিষয় মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘টি২০তে অন্তত ফেবারিট তত্ত্ব খাটে না।’ কারণ তামিমই জানালেন, ‘টি২০ এমন একটা ফরমেট নিজের দিনে ভাল খেললে আপনি যে কোন দলকেই হারাতে পারেন। এক-দুই ওভারে ম্যাচ বদলে যেতে পারে। টি২০ হচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের মতো। নিজের দিনে যে কোন দলকে হারানো যেতে পারে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘এই সংস্করণে যে কোন দল বা যে কোন খেলোয়াড় সব ছবি বদলে দিতে পারে। একজন খেলোয়াড় ছন্দে নেই, একটা ম্যাচে সে ছন্দ ফিরে পেতে পারে। দলের ক্ষেত্রেও তাই। যেভাবে চাচ্ছি আমরা হয়তো সেভাবে খেলতে পারিনি গত কিছুদিন। যদি প্রথম ম্যাচটা ভাল শুরু করতে পারি, চিত্রটা রাতারাতি বদলেও যেতে পারে।’ নিদাহাস ট্রফিতে প্রথম ম্যাচটিই ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে খেলতে হবে বাংলাদেশকে। এর আগে যে দলটির (ভারতের) বিপক্ষে টি২০তে কখনই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচের সবকটিতে হেরেছে। ২০০৯ সালে একবার, ২০১৪ সালে একবার, ২০১৬ সালেই তিনবার হেরেছে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের ২৩ মার্চে ব্যাঙ্গালুরুতে টি২০ বিশ্বকাপের খেলায় ভারতের বিপক্ষে জয়ের একেবারে কাছাকাছি চলে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১ রানের কষ্টের হার হয়। দুই দলের মধ্যে সর্বশেষ লড়াই হয় ২০১৬ সালেই। প্রায় দুই বছর পর আবার দুই দল টি২০তে লড়াই করতে নামবে। সেই লড়াইটি এবার শ্রীলঙ্কার মাটিতে হবে। দুই দলের জন্য যেটি ‘নিরপেক্ষ ভেন্যু’। এই ভেন্যুতে এখন বাংলাদেশ বাজিমাত করতে পারলেই হয়। তাহলে গত সিরিজগুলোতে যে দল বিধ্বস্ত হয়েছে সেই অবস্থা দূর হয়ে আবার ধারাবাহিক বাংলাদেশকে মিলতে পারে। নিরপেক্ষ ভেন্যুতে টি২০তে এর আগে দুই দল একবারই মুখোমুখি হয়েছে। সেটি ২০০৯ সালে নটিংহ্যামে। ম্যাচটিতে বাংলাদেশই হেরেছিল। শ্রীলঙ্কার মাটিতে এর আগে দুই দল তিনবার (ওয়ানডেতে) লড়াই করে। তিনবারই হারে বাংলাদেশ। ১৯৯৭, ২০০৪ ও ২০১০ সালে হারে বাংলাদেশ। দুই দলের মধ্যে শ্রীলঙ্কার মাটিতে সর্বশেষ লড়াই হয় ২০১০ সালে। প্রায় আট বছর পর শ্রীলঙ্কার মাটিতে দুই দল মুখোমুখি হচ্ছে। এবার টি২০তে। প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার মাটিতে দুই দল টি২০তে পরস্পরের বিপক্ষে খেলবে। শ্রীলঙ্কায় টি২০তে ভারতের অবস্থা খুবই ভাল। ভারত আটবার শ্রীলঙ্কার মাটিতে টি২০ খেলেছে। সাতবারই জিতেছে। শুধু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০১২ সালে হেরেছে। এছাড়া স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনবার, আফগানিস্তান, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিতেছে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে বাংলাদেশের অবস্থা সেই তুলনায় কাহিল। পাঁচটি টি২০ খেলে মাত্র একটি জয়। নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তানের কাছে হারের পর শ্রীলঙ্কার কাছে দুই ম্যাচে হেরেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ গত বছর এপ্রিলে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার মাটিতে সর্বশেষ ম্যাচটি জিতেছে বাংলাদেশ। ভারতকে হারানোর জন্য এই ম্যাচটিই বাংলাদেশকে প্রেরণা দিতে পারে। সেই প্রেরণা বাংলাদেশ নিতেও চায়। বাংলাদেশ দলের ভারপ্রাপ্ত কোচ কোর্টনি ওয়ালশই যেমন বলেছেন, ‘আমি মনে করি আমাদের ভাল সুযোগ আছে। অবশ্যই আমরা দুই দলের (ভারত ও শ্রীলঙ্কা) বিপক্ষে আন্ডারডগ হয়ে মাঠে নামব। তবে পুরো টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলতে পারলে ফাইনাল খেলার যথেষ্ট সুযোগ আছে। আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে ক্রিকেট খেলতে হবে। আমি সবাইকে এটাই বলেছি। সেই সঙ্গে আরও বলেছি খেলাটা পুরোপুরি উপভোগ করতে। চাপে ভেঙ্গে পড়া যাবে না। উপভোগ করলে এমনিতেই চাপকে জয় করা সম্ভব। আমি চাই সবাই চাপহীনভাবে মাঠের কাজগুলো ঠিকঠাক মতো করুক।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমরা শ্রীলঙ্কাতে শেষ টি২০ জিতেছি। ওটা মাশরাফির শেষ ম্যাচ ছিল। আমরা পুরনো স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে চাই। ওখানেই ফোকাস করার চেষ্টা করছি। বিশ্বের সেরা দুটি দলের বিপক্ষে আমাদের লড়তে হবে। যে কারণে আমাদের কোয়ালিটি ক্রিকেট খেলতে হবে। মাঠে যারা ভাল পরিকল্পনা করবে ও তার সফল বাস্তবায়ন করবে তারাই জিতবে।’ শ্রীলঙ্কায় মঙ্গলবার থেকে ট্রফি শুরু হয়েছে। চলবে ১৮ মার্চ পর্যন্ত। ভারতের বিপক্ষে বৃহস্পতিবার ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশ দলের টুর্নামেন্টের মিশন শুরু হবে। এরপর ১০ মার্চ স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা, ১৪ মার্চ আবার ভারত, ১৬ মার্চ শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের লক্ষ্য ১৮ মার্চের ফাইনালে খেলা। সেই শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ খেলতে হলে শুরুটা ভাল করা জরুরী। বাংলাদেশের সেই শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই বৃহস্পতিবার নিদাহাস ট্রফির মিশন শুরু করছে বাংলাদেশ।
×