ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তির পরও টালবাহানা কেন?

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৭ মার্চ ২০১৮

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তির পরও টালবাহানা কেন?

হাসান নাসির/এইচএম এরশাদ ॥ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি রাখাইনে সেনা তৎপরতা বাড়ানোর প্রেক্ষিতে মিয়ানমার সরকারের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। জান্তা প্রভাবিত এ দেশটি রোহিঙ্গাদের আদৌ ফিরিয়ে নেবে কিনা সেটা এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। কেননা, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দফায় দফায় আলোচনা, সীমান্তে পতাকা বৈঠকে আশ্বাস দেয়া হলেও বাস্তবে অগ্রগতির লেশমাত্র নেই। বরং সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে বাঙ্কার খনন ও সেনা টহল অব্যাহত রয়েছে। শুধু তাই নয়, সীমান্তে শক্তি সমাবেশ বৃদ্ধির ফলে মিয়ানমারের উদ্দেশ্য নিয়েও এখন চলছে নানা বিশ্লেষণ। জনমনে একটি কমন প্রশ্নÑ মিয়ানমার আসলে কী চায়? প্রত্যাবাসনে সমঝোতা স্মারক চুক্তি হওয়ার পরও তা টালবাহানা কেন? জিরো লাইনে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদেরও যাচাই বাছাই ছাড়া ফিরিয়ে নিতে সমস্যা কী? সীমান্তের ওপার থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, পতাকা বৈঠকের পর উত্তেজনা প্রশমিত হলেও রাখাইন প্রদেশে সেনা তৎপরতা ঠিকই চলমান রয়েছে। সেনারা রয়েছে প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভীতি বজায় রাখার কৌশলে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও বলছে, দেশটির সেনাবাহিনী এমন পরিস্থিতি জিইয়ে রাখতে চায়, যাতে করে রোহিঙ্গারা নিজ ভূমে ফিরে যেতে সাহসী না হয়। বার্তা সংস্থা এপির বরাতে ফক্স নিউজ জানিয়েছে, মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সহকারী মহাসচিব এন্ড্রু গিলমোর এক বিবৃতিতে বলেছেন, মিয়ানমার সরকার এখন যা করছে তা মূলত জাতিগত নির্মূল অভিযান। সীমান্তে সেনাবাহিনীর ভূমিকা বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার ইচ্ছাকে নিবারিত করবে। যে পরিস্থিতি বজায় রয়েছে তাতে করে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে পারে না। তিনি জানান, চার দিন বাংলাদেশে অবস্থান করে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন রাখাইন প্রদেশে গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অপহরণ এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমে তাদের দেশান্তরী হতে বাধ্য করা হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এহেন আচরণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দেশটি আসলেই আগ্রহী কিনা তা নিয়ে তিনি সন্দেহ পোষণ করেন। সীমান্তে বাঙ্কার খনন অব্যাহত ॥ নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে বাঙ্কার খনন অব্যাহত রেখেছে মিয়ানমার। শুক্রবার দুই দেশের মধ্যে পতাকা বৈঠকের পর সৃষ্ট উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হলেও রবিবার থেকে ঠিকই সেনা টহল আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত তিন দিন ধরে মিয়ানমার সেনা ও বর্ডার গার্ড পুলিশকে বাঙ্কার খনন ও কাঁটাতারের বেড়া সংস্কার করতে দেখা গেছে। সীমান্তে নতুন নতুন বাঙ্কার তৈরি করছে তারা। এপারে রোহিঙ্গা ঠেলে দিয়ে ওপারে উল্লাস ॥ মিয়ানমার থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়ে দেশটির প্রশাসন উল্লাস করছে। আর বাংলাদেশে আশ্রিত ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বড়ই আপদ দেখা দিয়েছে বাংলাদেশে। ওই রোহিঙ্গারা প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে চলছে। এলাকার ও স্থানীয়দের নানা সমস্যার সমাধানে সময় দেয়া দূরের কথা, শুধু রোহিঙ্গা সমস্যা সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শুক্রবার মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) ও বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) মধ্যে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে সীমান্তে সেনা টহল দেয়া এবং ফাঁকা গুলি ছোড়ার ক্ষেত্রে বিজিবিকে পূর্বাবহিত করার শর্ত রয়েছে। কিন্তু সেই শর্ত উপেক্ষা করে সীমান্তের শূন্যরেখায় মিয়ানমার এখনও সেনা টহল চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বিজিবিও এখন বসে নেই। সীমান্তে মিয়ানমারের সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবিও সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। রোহিঙ্গাদের দাবি নিয়ে মিয়ানমারে হৈ চৈ ॥ নিজ দেশে ফিরতে বাংলাদেশে আশ্রিত ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার দেয়া ৮দফা দাবি নিয়ে হৈ চৈ পড়েছে মিয়ানমারে। মিয়ানমারের স্থানীয় বাসিন্দা রাখাইন যুবকরা এ বিষয়ে দেশটির উচ্চ পর্যায়ে স্মারকলিপি দিয়েছে। এতে তারা উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নাগরিকত্ব ও অন্যান্য অধিকার দাবি করেছে। রাখাইন দখল করার বিষয়ে ওই রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা রয়েছে। আমরা আমাদের জাতিগত জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ তাদের রাখাইনের ভূমি নিয়ে যাওয়ার রাজনৈতিক এজেন্ডা রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসছেন আদামা দিয়েং ॥ গণহত্যা বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত আদামা দিয়েং বুধবার এক সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশে আসছেন। এসময় তিনি কক্সবাজারে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। পরিদর্শনকালে জাতিসংঘ দূত রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মিয়ানমারে নির্যাতনের বর্ণনা শুনবেন এবং মিয়ানমারে যে গণহত্যা হয়েছে তা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করবেন। ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা আটক ॥ শহরের বাজারঘাটা মসজিদ মার্কেট থেকে ৩০ হাজার ইয়াবাসহ আরও দুই জনকে আটক করেছে র‌্যাব কক্সবাজার ক্যাম্পের সদস্যরা।
×