ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নীলফামারীতে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন শুরু শুক্রবার

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৭ মার্চ ২০১৮

নীলফামারীতে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন শুরু শুক্রবার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংস্কৃতির আলোয় সাস্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী উচ্চারণে শুক্রবার থেকে নীলফামারীতে শুরু হবে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন। এবারের সম্মেলনে অংশ নেবে সারা দেশের সাত শতাধিক শিল্পী, সংগঠক ও সংস্কৃতিকর্মী। তিন দিন ব্যাপী সাঁইত্রিশতম এ সম্মেলনের আয়োজন করছে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ্্। রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সপ্তত্রিংশ এ বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে নীলফামারী হাই স্কুল মাঠে। শুক্রবার বিকেলে তিন দিনের সম্মেলন উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। প্রধান অতিথি থাকবেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশ্বজিৎ ঘোষ। রবীন্দ্রপদক দিয়ে গুণী-সম্মাননা জানানো হবে রাজশাহীর প্রবীণ উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিল্পী মঞ্জুশ্রী রায় ও রংপুরের লোকসঙ্গীত শিল্পী উপেন্দ্রনাথ রায়কে। তিন দিনের সপ্তত্রিংশ বার্ষিক অধিবেশনে সহায়তা দিচ্ছে সংস্কৃতি ও বেঙ্গল গ্রুপ লিমিটেড। মঙ্গলবার সকালে ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে সাঁইত্রিশতম রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি সন্্জীদা খাতুনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন পরিষদের চার সহ-সভাপতি আবুল হাসনাত, মিতা হক, মইনুদ্দিন নাজির, সভাপতি লাইসা আহমেদ লিসা এবং সম্পাদকম-লীর সদস্য লিলি ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন দেশের নানা অঞ্চলের সাত শতাধিক শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠক। শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটায় সম্মেলনের উদ্বোধন হবে। তিন দিনেরই সান্ধ্য-অধিবেশন সাজানো হয়েছে গুণীজনের সুবচন রবিরশ্মি, আবৃত্তি, পাঠ, নৃত্য ও গান দিয়ে। সপ্তত্রিংশ অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন শনিবার বিকাল চারটায় অনুষ্ঠিত হবে ‘মানবিক সমাজ গঠন’ বিষয়ক সেমিনার। এ বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করেছেন ড. আতিউর রহমান। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সন্জীদা খাতুন। আলোচনায় অংশ নেবেন অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম ও অধ্যাপক দেবীপ্রসাদ রায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রকর্মের প্রদর্শনীর পাশাপাশি সম্মেলনে থাকবে পরিষদের শাখাগুলোর এ যাবৎকাল পর্যন্ত পরিচালিত কার্যক্রমের উপস্থাপনা। বার্ষিক অধিবেশন উপলক্ষে যথারীতি প্রকাশিত হবে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির নানা দিক নিয়ে বিশিষ্টজনদের লেখা প্রবন্ধের সংকলন ‘সঙ্গীত সংস্কৃতি’। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ১৯৭৮ সালে যাত্রা শুরু করে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ্। কাজ শুরু হয়েছিল জাহিদুর রহিম স্মৃতি পরিষদ্ নামে। দেশব্যাপী বৃহত্তর পরিসরে কর্মকা- পরিচালনা করার লক্ষ্য নিয়ে পরবর্তীকালে বাঙালীর চিরকালের সঙ্গী রবীন্দ্রনাথের নাম যুক্ত করে সংগঠনের নাম করা হয় জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ্। এই পরিষদের মূল লক্ষ্যটি হচ্ছে বাঙালীর আপন সংস্কৃতির চর্চা ও প্রসার। কিন্তু বিগত কয়েক দশকে নানা অশুভ ঘটনার ফলে বাঙালী সংস্কৃতির নির্বিঘœ বিকাশ এবং মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাংলাদেশের মৌলিক ভাবাদর্শ ঘা খেয়ে চলেছে। স্বাধীন দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা যখন আত্মতুষ্ট, তখন পাকিস্তান আমলের মতোই ধর্মের উগ্রবাদী ব্যাখ্যা নিয়ে ধূর্ততার সাথে পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হয়েছে সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতিবিনাশী শক্তি, তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে চলেছে, প্রভাবিত করছে সমাজের ধর্মবিশ্বাসী সরল মানুষদের। ধর্মবিশ্বাস ও জাতি পরিচয়ের মধ্যে জীবনাচারের ক্ষেত্রে কোনটিকে প্রাধান্য দেবে তা নিয়ে তারা দ্বিধাগ্রস্ত। রবীন্দ্রনাথ তার নানা রচনা ও ভাষণে সমাজে মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন, সমাজের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের ক্ষত সারিয়ে তুলবার পরামর্শ রেখেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, রবীন্দ্রনাথের কর্ম ও জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজে মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠা এবং বাঙালী সংস্কৃতির নির্বিঘœ যাত্রা নিশ্চিত করা সম্ভব। ডাক এসেছে সবাই মিলে শাশ্বত মানবযাত্রার অংশী হতে। গৃহকোণে বসে ব্যক্তিগত কাজে নিরত থাকবার দিন নয় এখন। সকল চিত্তকায়া একাগ্র করে অন্ধকার পেরিয়ে কেবল এগিয়ে-চলা এবার। মুক্তির অভিযাত্রায় শরিক হব আমরা। বিঘœজয়ী গান গাইতে গাইতে বিপুল ভবিষ্যতের পথে ছুটে চলবার আকাক্সক্ষাই এখন সত্য। শত নারীর শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ‘মাধবীলতা’ ॥ শত নারীর ক্যানভাসে চিত্রিত হয়েছে বহুবিধ বিষয়। সেসব ছবি নিয়ে শুরু হলো মাধবীলতা শীর্ষক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। বিশ্ব নারী দিবস উদ্যাপনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার থেকে এই প্রদর্শনী শুরু হলো শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ১নং গ্যালারিতে। যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা)। ইউডা চারুকলা বিভাগের প্রাক্তন ও বর্তমান শতাধিক নারী শিক্ষার্থী শিল্পীর চিত্রকর্মে সজ্জিত হয়েছে প্রদর্শনী। মঙ্গলবার বিকেলে একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব সুরাইয়া বেগম। সম্মানীয় অতিথি ছিলেন ইউডার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক মুজিব খান। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। ১২ মার্চ পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। শুক্রবার প্রদর্শনী বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। জলরং প্রদর্শনী ‘ওয়েভস আব কালার’ ॥ মঙ্গলবার থেকে শুরু হলো ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটারকালার সোসাইটি আয়োজিত ১ম ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটারকালার বিয়েনাল। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় চার দিনের ‘ওয়েভস আব কালার’ শীর্ষক জলরং চিত্রপ্রদর্শনী দিয়ে সাজানো হয় এ শিল্প আয়োজন। এদিন সকালে তুরস্কের বিখ্যাত জলরং শিল্পী এবং ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটারকালার সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী আতানুর দোগানের ছবি আঁকার মাধ্যমে বিয়েনালটির সূচনা হয়। এরপর দেশী-বিদেশী প্রায় ছয়জন শিল্পী একে একে ছবি এঁকে দেখান আমন্ত্রিত শিল্পী এবং শিল্পরসিকদের। বিকেল চারটায় অনুষ্ঠিত হয় ‘ওয়েভস আব কালার’ শীর্ষক প্রথম আন্তজার্তিক জলরং প্রদর্শনী। বৈভবময় এ শিল্প-আয়োজনে প্রদর্শিত হচ্ছে প্রায় ৪৫ দেশের ৫ শ’ শিল্পীর জলরংয়ে আঁকা ছবি। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন তুরস্কের বিখ্যাত জলরং শিল্পী আতানুর দোগান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয় দলীয় নৃত্য, একক নৃত্য এবং সংগীতের মাধ্যমে। এরপর বিজয়ী শিল্পীদের মাঝে সনদপত্র এবং পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। সর্বমোট ১২টি ক্যাটাগরিতে দেশী-বিদেশী ২৭ জন শিল্পীকে পুরস্কার এবং সনদপত্র দেয়া হয়। প্রদর্শনীটি আগামী ৯ মার্চ পর্যন্ত চলবে। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণের ইউনেস্কো স্বীকৃতির বক্তৃতা ॥ ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ উপলক্ষে মঙ্গলবার বাংলা একাডেমি ‘৭ই মার্চের ভাষণের ইউনেস্কো-স্বীকৃতি ও এর তাৎপর্য’ শীর্ষক একক বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করে। বিকেলে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ বিষয়ে একক বক্তৃতা করেন অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ। স্বাগত ভাষণ দেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ফেরদোসী প্রিয়ভাষিণীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালন করা হয় এবং সভার পক্ষ থেকে অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। একক বক্তৃতায় অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু অতি কৌশলে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। কারণ তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের নেতা হিসেবে বিশ্বে চিহ্নিত হতে চাননি। তিনি চেয়েছেন মাইনরিটি হিসেবে পাকিস্তান নিজে থেকে বিচ্ছিন্ন হোক, সেই পরিস্থিতিটা তিনি কৌশলে সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী যাতে নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর প্রতিশোধমূলক আচরণ না করতে পারে, সেজন্য বঙ্গবন্ধু তাঁর ৭ই মার্চের ভাষণে অনানুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন। ইউনেস্কো-স্বীকৃতি আমাদের গর্বিত করেছে। এই ভাষণ যেন আগামী প্রজন্ম শোনে এবং হৃদয়ঙ্গম করতে পারে সেই ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। ‘বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক উৎসব’ ॥ আজ বুধবার ঐতিহাসিক সাতই মার্চ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক উৎসব’ দিনব্যাপী আর্টক্যাম্পের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এতে অংশ নেবেন ৪৭ জন বিশিষ্ট শিল্পী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তন এলাকায় সকাল ১০টায় আর্টক্যাম্পের সূচনা হবে। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার সেমিনার কক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
×