ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৩১ মার্চ ছাত্রলীগের সম্মেলন ॥ উৎসবের আমেজ

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৭ মার্চ ২০১৮

৩১ মার্চ ছাত্রলীগের সম্মেলন ॥ উৎসবের আমেজ

সোহেল তানভীর ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা অনুযায়ী আগামী ৩১ মার্চ উপমহাদেশের সর্ব বৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যেহেতু স্বাধীনতার মাসে সম্মেলনের ইচ্ছা পোষণ করেছেন তাই চলতি মার্চ মাসেই ছাত্রলীগের সম্মেলন হবে এটাই প্রত্যাশিত। সম্মেলন পেছানো হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, অতীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সম্মেলন পেছানো হয়েছিল। কিন্তু এখন পরিবেশ শান্ত এবং অনুকূলে রয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার ইচ্ছা বাস্তবায়নে চলতি ৩১ মার্চ ছাত্রলীগের সম্মেলন হবে। যদি প্রধানমন্ত্রীর বেঁধে দেয়া তারিখের হেরফের হয় তাহলে আমরা ধরে নেব এখনো ছাত্রলীগে সেই সিন্ডিকেটের তৎপরতা রয়েছে।’ এদিকে, সম্মেলনকে সামনে রেখে ছাত্ররাজনীতির আতুরঘরখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আড্ডার বিষয়বস্তু এখন ‘ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন’। কারা আসছে ছাত্রলীগের পরবর্তী শীর্ষ নেতৃত্বে- এমন প্রশ্ন এখন প্রতিটি নেতা-কর্মীর মাঝে। দিন-রাত মধুর ক্যান্টিনে সময় দিচ্ছেন পদ প্রত্যাশীরা। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ করছেন ছাত্রলীগের নেতারা। দিনরাত সর্বদা মধুর ক্যান্টিন থাকছে সরগরম। সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে গত ১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিজয় মিছিল বের করে ছাত্রলীগের একটি অংশ। মিছিলে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করে আসা সক্রিয় সিন্ডিকেটবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তুলে স্লোগান দিতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের। তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে আগামীর ছাত্রলীগ হবে সম্পূর্ণরূপে সিন্ডিকেটের কালোছায়া মুক্ত, ছাত্রবান্ধব নেতৃত্ব সমৃদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে লালনকারী এবং বিএনপি জামাতের মদদপুষ্ট হাইব্রিড মুক্ত। গত ৬ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মার্চ মাসের মধ্যে ছাত্রলীগকে সম্মেলন করার তাগিদ দেন। তিনি বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার ইচ্ছা চলতি বছরের মার্চ মাসে (স্বাধীনতার মাস) ছাত্রলীগ সম্মেলন করুক। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ৩১ মার্চ সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেন। ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানান। তবে জানুয়ারি পেরিয়ে মার্চ এলেও সম্মেলনের প্রস্তুতিতে অগ্রগতি দেখাতে পারেনি ছাত্রলীগ। রেওয়াজ অনুযায়ী জাতীয় সম্মেলনের পূর্বে সংবাদ সম্মেলনের কথা থাকলেও এখনও তা করা হয়নি। প্রস্তুতি কমিটি গঠনসহ সম্মেলন আয়োজনে অন্যান্য প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে ‘ঢিলেমি’। প্রধামন্ত্রীর তারিখ নির্ধারণের পরেও ছাত্রলীগ নেতাদের এমন আচরণে সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী বলছেন, ২৯তম সম্মেলন ঠেকাতে একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা চাচ্ছেন না ৩১ মার্চ সম্মেলন হোক। সম্মেলন ঠেকাতে সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছেন বলেও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের অভিযোগ। তবে, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেছেন, সম্মেলন যথাসময়ে হবে। আমরা সম্মেলন সফল করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি আরেফিন সিদ্দিক সুজন বলেন, সম্মেলন সফল করার জন্য ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রস্তুতি প্রয়োজন আছে। আমাদের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় আগামী ৩১ মার্চ আমরা সম্মেলন করতে যাচ্ছি। স্বার্থক্ষুণœ হবার ভয়ে সিন্ডিকেট সম্মেলন চাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন এই ছাত্রলীগ নেতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স জনকণ্ঠকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার ইচ্ছায় আগামী ৩১ মার্চ ছাত্রলীগের সম্মেলন হবার কথা। আমরা যেকোন মূল্যে নেত্রীর ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত রয়েছি। আশাকরি যোগ্য, মেধাবী ও বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করে এমন আদর্শের সৈনিকরাই ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসবে। বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগ একটি অদৃশ্য সিন্ডিকেট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। এই সিন্ডিকেটের জন্য ছাত্রলীগে যোগ্য মেধাবী নেতৃত্ব উঠে আসছে না বলে অভিযোগ অনেক সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যোগ্য, মেধাবী, পরিচ্ছন্ন ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের তুলে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এবার ছাত্রলীগকে সিন্ডিকেট মুক্ত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ একটি অংশ। সেই সিন্ডিকেট থেকে ছাত্রলীগ মুক্ত হতে পারবে কিনা এমন প্রশ্ন এখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে।
×