ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যয় কমেছে ৬ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা

১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৭ মার্চ ২০১৮

১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (আরএডিপি) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এক্ষেত্রে মূল এডিপি থেকে কমে গেছে ৬ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের শুরুতে নেয়া এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। সংশোধিত এডিপিতে সরকারী তহবিলের অর্থ না কমলেও বৈদেশিক সহায়তা এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে বরাদ্দ কমেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় পরিকল্পনা সচিব মোঃ জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব মোঃ মফিজুল ইসলামসহ পরিকল্পনা কমিশনের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ব্রিফিং এ জানানো হয়, এডিপির বরাদ্দের বিপরীতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ৬২ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা; যা মোট বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশের বেশি। অর্থাৎ শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করতে আগামী চার মাসে ব্যয় করতে হবে প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকা। আরএডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিলের (জিওবি) বরাদ্দ অপরিবর্তিত রয়েছে, যার পরিমাণ ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ কমিয়ে করা হয়েছে ৫২ হাজার ৫০ কোটি টাকা। মূল এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৫৭ হাজার কোটি টাকা, যা থেকে কমেছে ৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৯ হাজার ২১৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে মূল বরাদ্দ ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা থেকে বাদ গেছে ১ হাজার ৫৪০ কোটি ১৯ লাখ টাকা। মূল এডিপি থেকে বিদেশী সাহায্যের বরাদ্দ কমিয়ে আনার কারণ হিসেবে মন্ত্রী বলেন, মূলত হলি আর্টিজান ট্র্যাজেডির কারণে বিদেশী সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পগুলোর অর্থছাড় ও বাস্তবায়নে কিছুটা দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছিল। যদিও সেই জটিলতা বর্তমানে কেটে গেছে। বর্তমানে বিদেশী অর্থায়নের প্রকল্পগুলোর কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে বর্তমানে ইতিবাচক পরিবেশ বিরাজ করছে। রফতানি, রেমিটেন্স ও রাজস্ব খাত গত বছরের নেতিবাচক প্রবণতা থেকে বেরিয়ে ভাল অবস্থায় রয়েছে। এ ধারা অর্থবছরের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে অর্থনীতির জন্য এটি ভাল একটি বছর হবে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, গত বছর নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। এবার অর্থনীতির সবগুলো সূচক আমাদের অনুকূলে। রেকর্ড ব্যয়ের সংশোধিত এডিপির বাস্তবায়নও অনেক বাড়বে। তাই এবারের প্রবৃদ্ধি বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি। উল্লেখ্য, চলতি বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রকল্প যাতে ঘন ঘন সংশোধন করা না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে গুণগত মান যাতে নিশ্চিত হয় এবং অপচয় রোধ করা যায় সেটি খেয়াল রাখতে হবে। প্রকল্পের সর্বোচ্চ তদারকি নিশ্চিত করতে আইএমইডির তরফে ১৮ দফা সুপারিশও করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এসব সুপারিশ বাস্তবায়নসহ আরও কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সর্বোচ্চ বরাদ্দ পরিবহন, বিদ্যুত ও পল্লী উন্নয়নে ॥ সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পরিবহন খাতে, ৩৭ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। এছাড়া বিদ্যুত খাতে দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ২২ হাজার ৪১০ কোটি টাকা এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাত, ১৬ হাজার ৭৯৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সংশোধিত এডিপিতে অন্যান্য কয়েকটি খাতের উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ হচ্ছে- ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাত; ১৫ হাজার ২১৩ কোটি টাকা, শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ১৪ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৯ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৫ হাজার ২৮৩ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৬৫৮ ॥ মূল এডিপিতে প্রকল্প ছিল ১ হাজার ৩০৮টি। কিন্তু সংশোধিত এডিপিতে এসে মোট প্রকল্প সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৫৮টিতে। ফলে মূল এডিপির তুলনায় সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প বেড়েছে ৩৫০টি। মোট প্রকল্পের মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ৩৬৫টি, কারিগরি প্রকল্প ১৪৩, জেডিএফ প্রকল্প তিনটি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব প্রকল্প ১৪৩টি। এছাড়া সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দহীনভাবে সংযুক্ত অনুমোদনহীন প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ২৭টি। বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির সুবিধার্তে অনুমোদন ও বরাদ্দহীনভাবে ২৬৮টি প্রকল্প যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া পিপিপির (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনাশিপ) প্রকল্প রয়েছে ৩০টি। এছাড়া ৩০০টি প্রকল্প সমাপ্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সভায় গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের এডিপির মূল্যায়ন প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রে এডিপিতে বরাদ্দ খরচ করতে না পারায় কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করে আইএমইডি। এগুলো হচ্ছে-জমি অধিগ্রহণের জটিলতা, কর্ম পরিকল্পনা ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করা, অর্থছাড়ে বিলম্ব, দরপত্র মূল্যায়নে দীর্ঘসূত্রতা, সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ, দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবলের অভাব, উন্নয়ন সহযোগীদের প্রকিউরমেন্ট গাইডলাইন অনুসরণ করে মালামাল ও ক্রয়কার্য সম্পন্ন করতে অসুবিধা, ঠিকাদারদের পেশাদারিত্বের অভাব, ভৌত নির্মাণ কাজের ধীরগতি ও চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি ছাড়াই কার্যক্রম চালু রাখা এবং প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরিতে দ্রব্যের মান ও মূল্য নির্ধারণে অদূরদর্শিতা।
×