ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শেকৃবির ছাদে স্পিরুলিনা চাষ

প্রকৃতির আশ্চর্য খাবার পুষ্টিতে অনন্য- দূর করে ক্লান্তি

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৭ মার্চ ২০১৮

প্রকৃতির আশ্চর্য খাবার পুষ্টিতে অনন্য- দূর করে ক্লান্তি

বশিরুল ইসলাম ॥ প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ প্রকৃতির আশ্চর্য খাবার স্পিরুলিনা। সামুদ্রিক শৈবাল নামেই এর বেশি পরিচিতি। নীলাভ সবুজ রং থাকার কারণে স্পিরুলিনায় রয়েছে নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধের উপাদান। নিয়মিত সেবন করলে দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে পুষ্টিহীনতা, রক্তশূন্যতা, রাতকানা, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, আলসার, বাত, হেপাটাইটিস ও ক্লান্তি দূর হবে। পৃথিবীর অনেক দেশে কৃত্রিম জলাশয়ে এটা চাষ হলেও ছাদে প্রথম শুরু করে থাইল্যান্ড। এখন রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সফলভাবে ছাদে চাষ হচ্ছে স্পিরুলিনা। যা বাংলাদেশের আবহাওয়ায় ছাদে চাষ হওয়া প্রথম। সামুদ্রিক শৈবাল উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তিটি বাংলাদেশে এনেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ফ ম জামাল উদ্দিন। তার এই সাফল্য বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও থাইল্যান্ডের এনারজিয়ার যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো স্পিরুলিনা পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদে ছাদে ডামে কৃত্রিম উপায়ে এ চাষ চলছে। এ বিষয়ে জামাল উদ্দিন বলেন, স্পিরুলিনা চাষের জন্য সূর্যের আলোর প্রয়োজন, তাই সাধারণত বাড়ি বা অফিসের ছাদেও এটি চাষের জন্য উপযুক্ত জায়গা। কৃত্রিম উপায়ে বাড়ির ছাদেও এটির উৎপাদন করেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। তবে খাদ্যের পাশাপাশি উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যজীবী চাষীদের বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে শৈবাল চাষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে। অধ্যাপক ড. আ ফ ম জামাল উদ্দিন জানান, স্পিরুলিনা নামক শ্যাওলা অতি উচ্চমাত্রার প্রোটিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি এই শ্যাওলা দিয়ে ট্যাবলেট তৈরি করে উচ্চমূল্যে বাজারজাত করছে। চিকিৎসকদের রোগীর ব্যবস্থাপত্র স্পিরুলিনা উল্লেখ করতে উৎসাহিত করা হয়। আর বয়স্ক মহিলা রোগীদের ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে স্পিরুলিনা একটি গতানুগতিক আইটেম। তিনি আরও জানান, প্রোটিন ও লিপিডের সমন্বয়ে গঠিত ফাইকোসায়ানিন অত্যন্ত আকর্ষণীয় রং তৈরি করে। ফলে এ রং প্রসাধনী সামগ্রী ওষুধ, পানীয় ও খাবার ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। যার দাম প্রতিকেজি প্রায় ৮ লাখ টাকা। স্পিরুলিনা মানুষ, মুরগি, গরু, ছাগলের খাদ্যেও বিকল্প হিসেবে ৭৫ শতাংশ ব্যবহার করা সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে, মাছের খাদ্যে ৭৫ শতাংশ মাছের মিলের পরিবর্তে স্পিরুলিনা ব্যবহারে ভাল ফল পাওয়া গেছে। পৃথিবীতে একক খাদ্য হিসেবে সবচেয়ে বেশি পুষ্টি উপাদান যেসব খাবারে পাওয়া যায়, স্পিরুলিনা তাদের মধ্যে অন্যতম। স্পিরুলিনায় যেসব উপাদান রয়েছে, তা নানাভাবে আমাদের শরীরের উপকারে আসে। এতে আছে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন এবং আরও ১০টি ক্যারোটেনয়েডের বিপুল ভা-ার যা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার ও টিউমারের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। এটি ইনসুলিন হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করার কারণে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়া স্পিরুলিনা অন্ত্রে হজমশক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এইডস প্রতিরোধেও সহায়ক। স্পিরুলিনায় হৃদরোগ, ব্রেনস্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি শরীর থেকে বের করে দেয় দিনের পর দিন জমে ওঠা ক্ষতিকর সব বিষাক্ত পদার্থ। আমাদের দেশেও দিন দিন এ খাদ্য জনপ্রিয় হচ্ছে। বর্তমানে রুটি, আলু ভর্তা, নুডলস, শরবত, হালুয়া ইত্যাদিতে স্পিরুলিনা মিশিয়ে নানা ধরনের খাবার তৈরি করে বাজারজাত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে খাবার তৈরি করার সময় অবশ্যই পরিমাণমতো স্পিরুলিনা মেশাতে হবে।
×