ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গণপরিবহনে ৯৪ ভাগ নারী যৌন হয়রানির শিকার

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৭ মার্চ ২০১৮

গণপরিবহনে ৯৪ ভাগ নারী যৌন হয়রানির শিকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের গণপরিবহনে ৯৪ শতাংশ নারী কোন না কোন সময় মৌখিক, শারীরিক এবং অন্যান্য যৌন হয়রানির শিকার হন। এর মধ্যে ৬৬ শতাংশ নারী জানান, ৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের দ্বারাই নারীরা বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার হন। মঙ্গলবার (৬ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবে ব্র্যাকের ‘নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এ তথ্য উঠে আসে। গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন- ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস এ্যান্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচীর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর হোসনে আরা বেগম ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গবর্ন্যান্স এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) রিসার্চ এ্যাসোসিয়েট কবিতা চৌধুরী। গণপরিবহনে নারী নির্যাতনে কারণ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না থাকা, বাসে অতিরিক্ত ভিড়, যানবাহনে পর্যাপ্ত আলো না থাকা, তদারকির অভাবে নারীদের ওপর যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে। গবেষণা প্রতিবেদনটিতে সংখ্যাগত ও গুণগত ৪১৫ জন নারী অংশগ্রহণ করেন। নিম্ন ও নিম্ন-মধ্য আয়ের পরিবারের নারীদের সড়ক ও পরিবহন ব্যবহারের অভিজ্ঞতার আলোকে গবেষণাটি করা হয়েছে। সমীক্ষায় উঠে এসেছে সড়কে হাঁটাচলার চেয়ে গণপরিবহনে যৌন হয়রানির ঘটনা বেশি ঘটে। সড়কে হাঁটাচলার সময় নারীদের মৌখিক হয়রানি হতে হয়। তাদের দিকে তাকিয়ে সেক্সি ইত্যাদি টিটকারি ছুড়ে দেয়; তাদের উদ্দেশে শিস দেয়া, চুম্বন বা অশালীন শব্দ ব্যবহার; ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে মোবাইল নম্বর, ফেসবুক, টুইটারের ঠিকানা চাওয়া; পীড়নমূলক ভাষা প্রয়োগ করে তাদের সঙ্গে কথা বলা; তাদের পোশাক দৈহিক বৈশিষ্ট্য বা চেহারা নিয়ে খারাপ মন্তব্য করা; তাদের বান্ধবী হওয়ার প্রস্তাব দেয়া, যৌন জীবন নিয়ে প্রশ্ন করা বা যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে চাওয়া। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গণপরিবহন ব্যবহারকারীদের উত্তরদাতারা বলেন, শারীরিক যৌন হায়রানির মধ্যে রয়েছে ইচ্ছাকৃত স্পর্শ করা, চিমটি কাটা, কাছে ঘেঁষে দাঁড়ানো, আস্তে ধাক্কা দেয়া, নারীদের চুল স্পর্শ করা, কাঁধে হাত রাখা, হাত, বুক বা শরীরের অন্যান্য অংশ দিয়ে নারীর শরীর স্পর্শ করা ইত্যাদি। এসব ঘটনায় ৮১ শতাংশ নারী চুপ থাকেন। ৭৯ শতাংশ আক্রান্ত হওয়ার স্থান থেকে সরে আসেন। অনুষ্ঠানে বক্তরা বলেন, নারীদের শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আগের চেয়ে অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেলেও কর্মক্ষেত্রে এখনও তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাই গবেষণা সুপারিশের ভিত্তিতে তারা এ ব্যাপারে জনসচেতনতা পাশাপাশি আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের ওপর জোর দাবি জানান। ব্রাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচীর ডিরেক্টর আহমেদ নাজমুল হুসেইন বলেন, টেকসই উন্নত লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) নারীর জন্য নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এজন্য এসডিজি বাস্তবায়নে নারীর জন্য যৌন হয়রানি মুক্ত সড়ক ব্যবস্থা রাখতে হবে। গণপরিবহনে নারীরা ‘যাত্রী’ দ্বারা বেশি নির্যাতিত হয়। যৌন হয়রানি কমাতে গণপরিবহনে নারী চালক রাখার ব্যবস্থা করলে এ ধরনের ঘটনা কমবে এমটাই মনে করেন তিনি। ব্র্যাক নারী চালক তৈরি করতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেছে বলেও জানান নাজমুল হুসেইন।
×