ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে পানের দামে সর্বকালের রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ৭ মার্চ ২০১৮

বরিশালে পানের দামে সর্বকালের রেকর্ড

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ যেকোন অনুষ্ঠানে পান ছাড়া আতিথেয়তা পরিপূর্ণতা পায় না। ঝাল আর মিষ্টির মিশ্রণের কারণে দেশজুড়ে সমাদৃত বরিশালের পান। গত দুই মাস ধরে পানের পাইকারি মোকামগুলোতে সর্বকালের রেকর্ডমূল্যে পান বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে একটি পানই বিক্রি হচ্ছে পাঁচ থেকে ১০ টাকা। পাইকারি পান বিক্রেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশার কারণে পানের ফলনে এবছর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে চাহিদা অনুযায়ী বাজারে পানের যোগান কম থাকায় পানের বাজারের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ কারণেই পানের দাম বাড়তি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। পাইকারি ও খুচরা পান বিক্রেতারা জানান, আগামী এপ্রিল মাসের আগে পানের দাম নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ পানের মোকামের পাইকারি পান ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ভালমানের পানের প্রতি গাদি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৮ হাজার টাকা, যা আগে ছিল ২২ হাজার টাকা, মাঝারি মানের প্রতি গাদি পান বিক্রি হচ্ছে ২৪ হাজার টাকায়, যা আগে ছিল ১৩ হাজার টাকা ও ছোট পানের প্রতি গাদি বিক্রি হচ্ছে ছয় হাজার টাকা, যা আগে ছিল মাত্র ১৬শ’ টাকা। পান বিক্রেতাদের হিসাব অনুযায়ী প্রতি ৮০ পিস পানে এক বিড়া আর প্রতি ৮০ বিড়ায় এক গাদি পান হয়। নগরীসহ জেলার দশটি উপজেলার উল্লেখযোগ্য পানের মোকামের সবশেষ খুচরা বিক্রির তথ্য অনুযায়ী, ভালমানের পানের প্রতিবিড়া বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা, যা আগে ছিল ১২৫ থেকে ১৫০ টাকা, মাঝারি মানের প্রতিবিড়া পান বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়, যা আগে ছিল ১৪০ টাকা ও ছোট আকারের পানের প্রতিবিড়া বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, যা আগে ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা করে। ব্যবসায়ীরা জানান, শৈত্যপ্রবাহ ও প্রচ- কুয়াশার কারণে বরিশাল সদর, আগৈলঝাড়া, গৌরনদী, উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, মুলাদী, বানারীপাড়া, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ ও বাকেরগঞ্জ উপজেলায় পান চাষের প্রায় অর্ধেক ব্যাপকভাবে নষ্ট হয়েছে। এরমধ্যে যেসব চাষী বিভিন্নভাবে কিছু পান বাঁচাতে পেরেছেন সেসব পান এখন বাজারে আসছে। এই পান চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে বাজারে পানের দাম আকাশচুম্বি। সূত্রে আরও জানা গেছে, ফলন নষ্ট হওয়ায় আগের তুলনায় পানের আমদানি অনেক কম হচ্ছে। এ অবস্থা আরও দেড় মাস চলবে। এপ্রিলের ১৫ তারিখ নাগাদ নতুন পান বাজারে আসবে, তখন থেকে দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। নগরীর বাজার রোডের খুচরা পান বিক্রেতা দুলাল রায় বলেন, মান অনুযায়ী পানের দাম বিড়া প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এতো দামে পান আগে কখনও বিক্রি হয়নি। নগরীর বিবির পুকুরপাড়ের খুচরা পান বিক্রেতা জসিম উদ্দিন জানান, বাজারে পানের দাম বাড়লেও কাস্টমার বাড়তি টাকা দিতে চায় না। চার টাকায় কেনা এক পিস পান সুপারি, জর্দ্দা, চুন দিয়ে পাঁচ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এক মাস ধরে তিনি পান বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। উজিরপুর সদরের পানচাষি গৌরাঙ্গ লাল জানান, নিয়মানুযায়ী নতুন করে পাতা উৎপাদন না হওয়ায় মাঘ মাস থেকে পানের যোগান কমে গেছে। অল্পদিনের মধ্যেই বাজারের অবস্থা স্বাভাবিক হবে। সর্বকালের সবচেয়ে বেশি দামে পান বিক্রি হওয়ার কথা উল্লেখ করে গৌরনদীর এলাহী পান আড়তের মালিক আলহাজ মোঃ নুরুজ্জামান ফরহাদ জানান, গেলো শীতে অতিরিক্ত কুয়াশার কারণে পান বরজের সব পান ঝরে গেছে। ফলে বতর্মানে পানের দাম আকাশচুম্বি।
×