ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জানুয়ারি মাসে গড় লেনদেন ৯৮০ কোটি টাকা

এক মাসেই সক্রিয় হিসাব কমেছে ৩ লাখ

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ৭ মার্চ ২০১৮

এক মাসেই সক্রিয় হিসাব কমেছে ৩ লাখ

রহিম শেখ ॥ দ্রুততম সময়ে এক স্থান হতে অন্য স্থানে টাকা পাঠানোর অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম মোবাইল ব্যাংকিং। বর্তমানে এ সেবা ব্যবহার করেই মানুষ তাদের পরিবার পরিজন ও নিকটাত্মীয়ের কাছে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন। সর্বশেষ হিসাব মতে, দেশে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহক সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫ কোটি ৯০ লাখ। জানুয়ারি শেষে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৭ লাখ। ডিসেম্বরে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ১০ লাখ। এক মাসের ব্যবধানে সংক্রিয় হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৩ লাখ বা ১ দশমিক ৪ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হিসাব খোলা ও পরিচালনায় কড়াকড়ি আরোপের ফলে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা কমেছে। জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী, কোন এ্যাকাউন্ট থেকে টানা তিন মাস কোন ধরনের লেনদেন না হলে তা ইন-এ্যাকটিভ বা নিষ্ক্রিয় এ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। আর তিন মাসের মধ্যে একটি লেনদেন হলেই তা সক্রিয় হিসেবে বিবেচিত। অবশ্য বড় কোন অনিয়ম না পাওয়া গেলে এ্যাকাউন্ট বন্ধ করে না ব্যাংক। কিন্তু সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় অপব্যবহার ঠেকাতে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে হিসাব খেলা ও পরিচালনা এবং লেনদেনে আরও বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়, এখন একজন ব্যক্তি একটি সিম দিয়ে যে কোন মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় একটি মাত্র হিসাব চালু রাখতে পারবেন। ওই নির্দেশনার পর যাদের একাধিক হিসাব ছিল তা বন্ধ করা হয়। চলমান রয়েছে, তা দ্রুত বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এই অবস্থায় জানুয়ারি মাস শেষে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৭ লাখ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বন্ধ হিসাবের সংখ্যা মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, নতুন নির্দেশনার আলোকে মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তথ্য হালনাগাদ করায় নিষ্ক্রিয় বা বন্ধ হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে। সাময়িক সময়ের জন্য সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা কমলেও ভবিষ্যতের জন্য এটা ভাল দিক বলে তিনি মনে করেন। মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল কাদির জনকণ্ঠকে বলেন, আগে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় একাধিক হিসাব চালু রাখতে পারতেন গ্রাহকরা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি একটি সিম দিয়ে যে কোন মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় একটি মাত্র হিসাব চালু রাখতে পারবেন। নির্দেশনা মোতাবেক মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তথ্য হালনাগাদ করায় নিষ্ক্রিয় হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে। তিনি বলেন, বন্ধ হিসাবের সংখ্যা বাড়লেও দৈনিক গড় লেনদেন কমেনি;বরং আগের তুলনায় বেড়েছে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে ৯৮০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। যদিও এ লেনদেনের পরিমাণ আগের মাসের তুলনায় ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে সক্রিয় হিসাব কমেছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে জানুয়ারি মাসে কিছুটা বেড়েছে মোট নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা। ডিসেম্বরে মোট ৫ কোটি ৮৮ লাখ নিবন্ধিত মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব থাকলেও জানুয়ারি মাসে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৯০ লাখ। আলোচ্যসময়ে মোট লেনদেন হয়েছে ৩০ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এই সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মোট এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৪৯২। বর্তমানে মোট ১৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত আছে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, জানুয়ারি মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ। ক্যাশ ইন ট্রানজেকশন হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন হয়েছে ১১ হাজার ৬৪৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। পিটুপি ট্রানজেকশন হয়েছে ৪ হাজার ৬৫১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ৪৭৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। বিভিন্ন বিল পরিশোধ করা হয়েছে ১৯১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার। এই সময়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নগদ প্রদান করা হয়েছে ৪১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সরকারী বিভিন্ন দফতরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করা হয়েছে ১১৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলারে চলতি মাসের জানুয়ারি থেকে একজন মোবাইল গ্রাহক তার ব্যক্তিগত হিসাবে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকার স্থিতি রাখতে বলা হয়েছে। এর আগে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের (এমএফএস) গ্রাহকরা তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল হিসাবে ৩ লাখ টাকার বেশি স্থিতি রাখা যেত। এর আগে গত বছরের ১১ জানুয়ারি মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) এর অপব্যবহার রোধে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়, একজন ব্যক্তি যে কোন মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় একটি মাত্র হিসাব রাখতে পারবেন। যাদের একাধিক মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব চলমান রয়েছে, তা দ্রুত বন্ধ করে দিতে হবে। কোন মোবাইল হিসাবে ৫ হাজার টাকা বা তার তদুর্ধ নগদ অর্থ জমা বা উত্তোলনে গ্রাহককে পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ডের ফটোকপি প্রদর্শন করতে হবে, যা এজেন্ট তার রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করবেন। এমনকি রেজিস্ট্রারে গ্রাহকের স্বাক্ষর বা টিপসই সংরক্ষণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোন এজেন্ট এই ধরনের কার্যাদি যথাযথভাবে সম্পন্ন না করলে বা গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে এজেন্টশিপ বাতিল করারও নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া ঐ নির্দেশনায় মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় দৈনিক ও মাসিক লেনদেনের সীমা আরও কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়। ঐ নির্দেশনা অনুসারে, একজন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক একবারে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। পূর্বে এই হার ছিল ২৫ হাজার টাকা। এখন থেকে গ্রাহক দৈনিক দুই বার এবং মাসে ১০ বার এই সেবা নিতে পারবেন, যা আগে ছিল দৈনিক তিন বার এবং মাসে ১০ বার। একইসঙ্গে দৈনিক জমার সীমাও পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে এখন থেকে দিনে সর্বোচ্চ দুই বারে ১৫ হাজার টাকা করে পাঠানো যাবে। যা মাসে সর্বমোট ২০ বারে এক লাখ টাকার বেশি হতে পারবে না। আগে দিনে পাঁচ বারে ২৫ হাজার টাকা এবং মাসে সর্বোচ্চ ২০ বারে দেড় লাখ টাকা করে জমা করা যেত। এছাড়া একটি মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে টাকা জমার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঐ হিসাব থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকার বেশি নগদ উত্তোলন করা যাবে না। নতুন সার্কুলারে এসব নির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে বলেও জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, অবৈধ আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত থাকায় মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের দুই হাজার ৮৮৭টি এজেন্টের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে এক হাজার ৮৬৩টি গ্রাহক হিসাব বন্ধেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এছাড়া সম্প্রতি হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্সের অর্থ এনে তা সারা দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়ার অভিযোগে বিকাশের আটটি এজেন্টকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ অনুসন্ধান বিভাগ (সিআইডি)।
×