ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘জেলে যেতে প্রস্তুত’

গ্র্যান্ডজুরির সমন প্রত্যাখ্যান ট্রাম্পের সাবেক সহযোগীর

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ৭ মার্চ ২০১৮

গ্র্যান্ডজুরির সমন প্রত্যাখ্যান ট্রাম্পের সাবেক সহযোগীর

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্তের অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক নির্বাচনী সহযোগী স্যাম নুনবার্গকে শুক্রবার গ্র্যান্ডজুরির সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য সমন জারি করা হলে তিনি তা মানতে অস্বীকৃতি জানান। শুধু অস্বীকৃতি জানিয়েই নুনবার্গ ক্ষান্ত হননি। তিনি গত সোমবার বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রদত্ত সাক্ষাতকারে বিচার বিভাগ নিযুক্ত বিশেষ উপদেষ্টা রবার্ট মুলারের প্রতি প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘এ জন্য যদি সে (মুলার) আমাকে গ্রেফতার করতে চায়Ñতাহলে করতে পারে।’ -খবর ওয়াশিংটন পোস্ট। নুনবার্গের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ উক্তি রীতিমতো বিদ্রোহের শামিল। গত সোমবার সারাটা বিকেল নুনবার্গের কথাবার্তা নিয়েই মার্কিন মিডিয়াগুলো সোচ্চার ও সরব ছিল। নুনবার্গ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতই মুলারের এই তদন্ত প্রক্রিয়াকে উইচ হান্ট বা প্রকৃত অপরাধীকে না ধরে অন্য কাউকে লক্ষ্যবস্তু বলে অভিহিত করেছেন। তার কথা শুনে প্রথমে মনে হতে পারে যে, নুনবার্গ ট্রাম্পের একনিষ্ঠ সমর্থক বা ভক্তÑকিন্ত তার সাক্ষাতকারের মাঝামাঝি এসে তিনি বলেন, পৃথিবীতে এমন কোন ব্যক্তি নেই যে আমার চেয়ে বেশি ট্রাম্পকে ঘৃণা করে। সে তো (ট্রাম্প) একটা বোকার হদ্দ-তা না হলে কেউ ওভাল অফিসে বসে রাশিয়ানদের কাছে রাষ্ট্রের অতি গোপন তথ্য ফাঁস করে? আমি মনে মনে চেয়েছিলাম লোকটি যাতে নির্বাচনে হেরে যায়Ñ কিন্তু আমার চাওয়ায় তো কিছু হবে নাÑ এখন তা কৌতুকের মতো শুনাবে। নুনবার্গ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তার বিষোদগার ও অন্যান্য বিষয় সিএনএন ও এমএসএন বিসি চ্যানেলে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। সাক্ষাতকারে নুনবার্গ বলেন, মুলারের পক্ষ থেকে জারি করা সমনপত্রে তার কাছে হোয়াইট হাউস থেকে সদ্য পদত্যাগী জনসংযোগ কর্মকর্তা হোপ হিকস, স্টিফেন কে, ব্যানন, ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মিশেল কোহেন, লিউওয়ানডোস্কি, স্টোন, পল ম্যানাফর্ট ও রিক গেটস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে কাজে লাগবে এমন ধরনের ই-মেইল ও যোগাযোগ বার্তা। ইনভয়েস ও টেলিফোন লগ, ক্যালেন্ডার ও অন্যান্য যে কোন নথিপত্র নিয়ে গ্র্যান্ডজুরির সম্মুখে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। সাক্ষতকারের এক পর্যায়ে নুনবার্গ বলেন, এই সমন জারির আগে মুলারের পাঠানো তদন্ত দলের সদস্যগণের সঙ্গে কথাবার্তায় আমার মনে হয়েছে যে, রবার্ট মুলার ট্রাম্পকে রিচার্ড কনডনের ‘দি মাঞ্চুরিয়ান ক্যানভিডেট’ উপন্যাসের বিদেশীদের ব্রেন ওয়াশ করা নায়কের উপযোগী করে এ মামলাটি সাজাতে চাইছেন। অর্থাৎ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজের অজান্তেই বিদেশীদের (রাশিয়া) স্বার্থরক্ষায় কাজ করে চলেছেন। সাক্ষাতকারের এক পর্যায়ে নুনবার্গকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, তবে কী তার মনে হয় নির্বাচনে রুশ কারসাজি মিথ্যা, নুনবার্গের স্পষ্ট জবাব ছিলÑরাশিয়ানরা ট্রাম্পের সঙ্গে কোন গোপন ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল না। কারণ পুতিন এতটাই স্মার্ট বা বুদ্ধিমান যে, তিনি ট্রাম্পের মতো (বোকা) মানুষের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে জড়াবেন না। এই সাক্ষাতকারের পর হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা তার বিশ্বাসযোগ্যতা ও মানসিক স্থিরতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, ট্রাম্প তার নির্বাচনী তৎপরতার সময়ই নুনবার্গকে ২০১৫ সালে বরখাস্ত করেন। তাই ট্রাম্পের ওপর নুনবার্গের ক্রোধ বা ক্ষোভ থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে সচরাচর যা হয়- সে ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। কেননা, নুনবার্গ তার প্রতিশোধ স্পৃহা চরিতার্থ করার জন্য দ্বিগুণ উৎসাহে আমন্ত্রিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুলারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারতেন। প্রকৃত পক্ষে পুরো সাক্ষাতকারে নুনবার্গকে অস্থিরচিত্ত ও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে দেখা গেছে। একবার তিনি ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, তিনি ব্লুমবার্গ টিভি চ্যানেলের সরাসরি অনুষ্ঠানে তার প্রতি জারিকৃত সমনটি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করবেন। এ নিয়ে একজন উপস্থাপক তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কী তাহলে কারাগারে যেতে প্রস্তুত। তখন অস্থিরচিত্ত নুনবার্গকে দ্বিধান্বিত দেখা গেল-মনে হলো যে, শেষ পর্যন্ত তিনি তার সিদ্ধান্ত বদলে মুলারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে রাজী হলেও হতে পারেন।
×