ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগে ফের নিষেধাজ্ঞা কুয়েতের

প্রকাশিত: ০৭:৫৮, ৬ মার্চ ২০১৮

বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগে ফের নিষেধাজ্ঞা কুয়েতের

ফিরোজ মান্না ॥ বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের ওপর আবারও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কুয়েত। সম্প্রতি বাজারটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর দেশটিতে অবস্থানকারী বাংলাদেশীরা নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কিছু জানে না বলে জানিয়েছে। তবে গলফ নিউজ খবর দিয়েছে, বাংলাদেশী কর্মীদের একটি অংশ সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ায় কর্তৃপক্ষ এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সূত্র জানিয়েছে. গত ১৮ জানুয়ারি উপসাগরীয় দেশ কুয়েতে অবৈধভাবে বসবাসরত বিদেশীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ও নতুন করে কর্মী নিয়োগের ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এই ঘোষণায় ২৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশী কর্মী বৈধ হওয়ার আবেদনের সুযোগ পেয়েছেন। কুয়েত কর্তৃপক্ষ গত ২৯ জানুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল। নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ার পর আর কোন অবৈধ কর্মী দেশটিতে বৈধ হওয়ার সুযোগ পায়নি। বৈধ হওয়ার সুযোগ পাওয়ার পরও বেশকিছু কর্মী দেশটিতে অবৈধভাবে রয়ে গেছে। তারা নানা অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে দেশটিতে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বিষয়টি কুয়েত কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পরই বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সোমবার কুয়েতি দৈনিক আল জারিদার বরাত দিয়ে গালফ নিউজ খবর দিয়েছে, কুয়েতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ খালিদ আল জাররাহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার কর্মী নিয়োগ দিয়েছে কুয়েত। কর্মী নিয়োগে নানা অনিয়ম ও কর্মীদের অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার কারণে ২০০৭ সালে একবার কর্মী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এরপর ২০১৪ সালে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। কিন্তু নিরাপত্তা রিপোর্টে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে আবার ২০১৬ সালের মে মাসে পুরুষ কর্মী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেশটি। এই নিষেধাজ্ঞা ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে তুলে নেয়ার দেড় মাসের মাথায় আবার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশটিতে বাংলাদেশী প্রায় ৩ লাখ লোক বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন। এখান থেকে প্রতিবছরই কিছু লোক অবৈধ হয়ে পড়েন। তারা আবার কুয়েত সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে বৈধ হওয়ার সুযোগ পান। ২০১৭ সালে দেশটির সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা না করায় বহু লোককে দেশে ফিরতে হয়েছে। তবে এর আগের বছর দেশটির সরকার কর্মীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে ৩০ হাজারের বেশি কর্মী বৈধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। এক বছর বাদ দিয়ে এবার আবার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত ২৯ জানুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুযোগ দেয়া হয় অবৈধ বসবাসকারীদের জন্য। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশীরাও এই সুযোগ নিয়েছেন। দেশটিতে অবৈধভাবে থাকা ২৫ হাজারের বেশি কর্মী বৈধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবৈধ কর্মীরা বৈধ হওয়ার জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। তবে এবার সাধারণ ক্ষমার বিষয়ে নির্দিষ্ট জরিমানা দিয়ে বৈধ হতে হবে। জরিমানার বিষয়টি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বসবাস করার কারণে যারা দেশে ফিরতে পারছিলেন না তাদের বৈধ হতে কোন টাকা লাগবে না। কারণ তাদের বৈধ করে দেশে ফেরার সুযোগ দেয়া হবে। যারা দেশটিতে কাজের জন্য থাকতে চান তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে বৈধ হতে হবে। যাদের নামে আদালতে মামলা চলছে তারা এই সুযোগ পাবেন না। আবার যাদের ওপর কুয়েতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তারাও এ সুযোগ পাবেন না। সূত্র জানিয়েছে, সরকার ঘোষিত জরিমানার পরিমাণ ৬ শ’ কেডি (কুয়েতি দিনার)। বাংলাদেশী টাকায় এক লাখ ৬৬ হাজার ৩১৭ টাকা। ২০১৬ সালে সাধারণ ক্ষমায়ও জরিমানার পরিমাণ একই ছিল। যারা বৈধ হয়ে দেশে ফিরবেন তারা কুয়েতে নতুন ভিসা নিয়ে আসতে পারবেন। যারা অবৈধ থেকেই দেশে ফিরবেন তারা আর কুয়েতে যেতে পারবেন না।
×