ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরায় গীতাঞ্জলির ব্যতিক্রমী আয়োজন

প্রকাশিত: ০৭:০২, ৬ মার্চ ২০১৮

উত্তরায় গীতাঞ্জলির ব্যতিক্রমী আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকাকেন্দ্রিক সংস্কৃতি চর্চার বলয় ভেঙ্গে দেশের শিল্প সংস্কৃতি সমৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রাখছে উত্তরার সাংস্কৃতিক চর্চা ও বিকাশকেন্দ্র গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমি। শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা ও প্রসারে নিবেদিতভাবে এই সংগঠনটি গত ১৫ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে। বছরব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে সংস্কৃতি অবকাঠামো শূন্য উত্তরা অঞ্চলের নাগরিকদের দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি উদ্বুদ্ধ চিত্ত বিনোদনের কাজে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে চলছে। বাংলা নববর্ষ, ভাষা শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস, বিজয় দিবসসহ নানা দিবসে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে বছরব্যাপী নানা কর্মসূচী পালন করে এই সংগঠনটি। সংগঠনের বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে সংস্কৃতিবাণ মানুষ তৈরি ভূমিকা রাখছে এই সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আমীন মিঠুর দক্ষ নেতৃত্বে এই সংগঠনটি উত্তরায় বিভিন্ন কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে সংস্কৃতিমনা মানুষদের সুদৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছে। স্বনামধন্য সাংস্কৃতিক চর্চারকেন্দ্র গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমি বছরব্যাপী নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনের ধারাবাহিকতায় ফেব্রুয়ারি মাসে গত ২৩ এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি দুই দিনব্যাপী ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধার্থে বিশেষ পথনাট্যোৎসবের আয়োজন করে গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমির অন্যতম শাখা সংগঠন থিয়েটার অঙ্গন। একুশের কবিতার রচিয়তা মাহবুবুল আলম চৌধুরীকে উৎসর্গকৃত উৎসবের উদ্বোধনী দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক মোঃ মোখলেসুর রহমান বিপিএম (বার)। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন একুশের প্রথম কবিতার রচিয়তা মাহবুব উল আলম চৌধুরীর স্ত্রী জওশন আরা রহমান। জওশন আরা রহমান অনুষ্ঠানে আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলে এ ধরনের আয়োজন উত্তরায় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একুশের চেতনা জাগ্রত ও সংস্কৃতি চর্চার প্রতি উদ্বুদ্ধ হতে ব্যাপক সহযোগিতা করবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহা পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান পিপিএম বলেন, উত্তরায় গীতাঞ্জলি ও থিয়েটার অঙ্গন সারা বছর যে আয়োজনগুলো করছে তাতে সংস্কৃতির এ মরুময় এ অঞ্চলে বিশেষভাবে প্রাণের সঞ্চার করেছে। এতে তরুণ সমাজ দেশের শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। যা আমাদের আলোকের পথে জয়যাত্রাকে বেগবান করছে। উত্তরা অঙ্গনের কেন্দ্রীয় এ সাংস্কৃতিক সংগঠনটি ভবিষ্যতে আরও বর্ণাঢ্য পরিসরে এ ধরনের আয়োজন করবে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। উৎসবের সমাপনী দিন শনিবার আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মোঃ আতিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ভূইয়া শফিকুল ইসলাম এবং নাট্যজন মান্নান হীরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ একাডেমি উপদেষ্টা ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও থিয়েটার অঙ্গন সভাপতি মাহবুব আমিন মিঠু। সমাপনী দিনে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এবং ঢাকা সিটি উত্তরের মেয়র প্রার্থী মোঃ আতিকুল ইসলাম তার বক্তব্যে অত্র অঞ্চলে সাংস্কৃতিক বেশ কিছু উন্নয়নে তিনি কার্যকরী ভূমিকা পালন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। নদী ও পরিবেশ রক্ষার ওপর নির্মিত করে থিয়েটার অঙ্গনের প্রযোজনা ‘ফুলেশ্বরীর কাব্যগাঁথা’ নাটকটি উপস্থিত দর্শকদের সঙ্গে বসে তিনি উপভোগ করেন। সকলকে নাটক দেখার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান। তিনি গীতাঞ্জলি ও থিয়েটার অঙ্গনের সামগ্রিক এই আয়োজন ও বিভিন্ন কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করে তার বক্তব্য শেষ করেন। উৎসবের সভাপতি দেশ বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও গীতাঞ্জলির উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন তখনই হবে যখন এর সাংস্কৃতিক উন্নয়ন সাধিত হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে ব্যক্তি উদ্যোক্তাদেরও এ ধরনের আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসতে হবে। দু’দিনের উৎসবে স্বাগত বক্তব্য রাখেন গীতাঞ্জলির প্রধান নির্বাহী ও থিয়েটার অঙ্গন সভাপতি মাববুব আমীন মিঠু। তিনি তার বক্তব্যে বলেন বিগত ২০ বছর ধরে এই অঞ্চলেন সাংস্কৃতিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি তার বক্তব্যে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ, সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি নানা সুবিধা ও সীমাবদ্ধতার কথা বর্ণনা করেন। সংস্কৃতি চর্চা ও বিকাশে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি উৎসবে সম্পৃক্ত সকলকে ভবিষ্যতে এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখার মধ্য দিয়ে অত্র অঞ্চলের নাগরিকদের শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি সম্পৃক্ত করতে আরও অবদান রাখবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। দুই দিনের পথনাট্যোৎসবে বিপুল সংখ্যক দর্শক সমাগমের মধ্য দিয়ে প্রায় ১১টি নাট্য সংগঠন তাদের পরিবেশনা তুলে ধরে। এই বিশেষ আয়োজন উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে। উত্তরাসহ দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ আয়োজনে সরব উপস্থিতিতে আয়োজকদের বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করে।
×