ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

১৯ বছরেও চিহ্নিত হলো না উদীচী হত্যার খলনায়করা

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৬ মার্চ ২০১৮

১৯ বছরেও চিহ্নিত হলো না উদীচী হত্যার খলনায়করা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ আজ ৬ মার্চ নৃশংসতম উদীচী হত্যাযজ্ঞের ১৯তম বার্ষিকী। ১৯৯৯ সালের এই দিন গভীর রাতে যশোর টাউন হল মাঠে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পর পর দুটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন ১০ জন। আহত হন আড়াই শতাধিক নিরীহ মানুষ। নৃশংস এই হত্যাকান্ডের ১৯ বছর পার হলেও বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি মূল ঘাতকদের। এমনকি বাস্তবে কারা এই জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছিল তাও উদ্ঘাটন হয়নি আজো। ঘাতকদের হত্যার বিচার চাইতে চাইতে হতাশ হয়ে পড়েছেন নিহতের স্বজন, আহত ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। তবে সরকারি কৌশুলীর প্রত্যাশা শীঘ্রই উচ্চ আদালতে মামলাটির কার্যক্রম শুরু হবে। প্রতিবছর এই দিনে শহীদদের স্মরণে আলোচনা, স্মরণসভা, শহীদ স্মারকে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন আর বিচারের একই দাবি করে আসছেন স্বজন বন্ধু ও সাংস্কৃতিক কর্র্মীরা। উদীচী ট্র্যাজেডিতে নিহত নূর ইসলাম, নাজমুল হুদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম, বুলু, রতন রায় এবং রামকৃষ্ণের পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে। এতবড় একটি বর্বর ঘটনার বিচার এবং ঘাতকদের শাস্তি না হওয়ায় এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন বোমা হামলায় আহতরা। উদীচী ও আদালত সূত্র জানায়, সিআইডির ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিটের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে আদালত থেকে খালাস পেয়ে যায় এই মামলার সব আসামি। পরে সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। কিন্তু এরপর মামলাটির আপিল শুনানি আর হয়নি। আটকে আছে আইনের বেড়াজালে। বিচারের এই দীর্ঘ বিড়ম্বনায় ক্ষুব্ধ যশোরের মানুষ এখন দ্রুত এ মামলার কার্যক্রম চালু করার দাবি জানান। অর্ধাহারে দিন কাটে বৃদ্ধ হরেণ বাউলের যশোরে উদীচীর ১২তম সম্মেলনে বোমা হামলায় ১০ সাংস্কৃতিক কর্মী মারা যান। আহত হন শতাধিক। আহতদের একজন হরেণ গুসাই। যশোরের চৌগাছা উপজেলার পাতিবিলা গ্রামের নিতাই পদ অধিকারীর সন্তান। তিনি একজন বাউল শিল্পী। দুই পায়ের হাটুর নিচ থেকে সম্পূর্ণ কেটে ফেলতে হয়েছে তার। দুটি প্লাস্টিকের পায়ের অংশ আর হাতে লাঠি ভর করে নিজের কাজটুকু সারেন। উদীচী ট্রাজেডির ১৯ বছর পরও হরেণ বাউলের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। পাননি সরকারি কোন অর্থ সহায়তা। তার ষাটোর্দ্ধ স্ত্রী পার্বতী অধিকারীও পাননা কোন ভাতা। ৬ মাস পরপর মাসে ৭শ’ টাকা হারে যে প্রতিবন্ধী ভাতা পান তাই দিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটান তিনি। গত ৪ মার্চ রবিবার সোনালী ব্যাংকের চৌগাছা শাখায় এসেছিলেন ৬ মাসের প্রতিবন্ধী ভাতা নিতে। এদিন ভাতার টাকা দেয়ার দিন না হলেও ব্যাংক কর্মচারী আনোয়ারের সহানুভুতিতে নিয়ে গেলেন ৬ মাসের ভাতার চার হাজার ২শ’ টাকা। সেখানেই কথা হয় তার সাথে। হরেণ বাউল বলেন, দুটি ছেলে ছিল তার। বড় ছেলে অরবিন্দ অধিকারী। সে মারা গেছে বেশ কয়েক বছর আগে দু’ ছেলে ও স্ত্রী রেখে। ছোট ছেলে বিদ্যুৎ অধিকারীর স্ত্রী ও তিন ছেলে। এরপরও ছোট ছেলের সহায়তায় তিনি বড়ছেলের বিধবা স্ত্রী আর সন্তান নিয়ে কোন রকমে সংসার চালাতেন। সম্প্রতি ট্রাক চালক ছোট ছেলে বিদ্যুৎ চট্টগ্রামে গিয়ে হার্ট এ্যাটাকে মারা যান।
×