ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মালিন্দোর ফ্লাইটে হিংস্র আচরণ করা যুবককে মানসিক ভারসাম্যহীন দাবি

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৬ মার্চ ২০১৮

মালিন্দোর ফ্লাইটে হিংস্র আচরণ করা যুবককে মানসিক ভারসাম্যহীন দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মালয়েশিয়া থেকে ঢাকায় আসার সময় মালিন্দো এয়ারের ফ্লাইটে বসে নগ্ন হয়ে হিংস্র আচরণ করা যাত্রীকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবি করেছেন তার পরিবার। দিদার আলী মাহমুদ নামের ওই যাত্রীকে বর্তমানে রাজধানীর বারিধারার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গত শনিবার মালিন্দো এয়ারের ওডি-১৬২ ফ্লাইটের ভেতরে থাকা কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকায় আসার সময় দিদার তার পরনের জামাকাপড় খুলে ল্যাপটপে উচ্চ শব্দে পর্নো ভিডিও দেখেন। আশপাশের কাউকে ডিস্টার্ব না করেই মাথা নিচু করে সে এ কা- ঘটায়। তবে হঠাৎ ফ্লাইটের টয়লেটের সামনে এক গৃহবধূকে হয়রানি করে বলে অভিযোগ ওঠে। এতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নামার পর দিদারকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-এপিবিএন’র হাতে সোপর্দ করে মালিন্দো এয়ার। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে থানা থেকে দেয়া হয় পরিবারের কাছে। এ ঘটনা মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় দেশ বিদেশে আলোচিত-সমালোচিত হয় বিষয়টি। এতে অনেকে মালিন্দোর ক্রু’দের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এর প্রেক্ষিতে নিজেদের ফেরিফাইড ফেসবুক পেজে মালিন্দো এয়ার একটি পোস্ট দেয়। পোস্টে লেখা হয়-ফ্লাইটে যে কোন ধরনের বিপর্যয় (অপ্রীতিকর ঘটনা) এড়াতে এবং যাত্রীদের বিরক্ত করা থেকে বিরত রাখতে কেবিন ক্রু’রা ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর’ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তবে তার পরিবারের দাবি- দিদার খুবই মেধাবী ছাত্র। সে মাইলস্টোন কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ-৫। তারপর মালয়েশিয়ার সাইবারজায়া ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতক পড়ছিলেন দিদার আলী মাহমুদ (১৯)। কিন্তুু শনিবার ঢাকায় ফেরার সময় কেন যে সে এমন কা- ঘটিয়েছে তা বলা মুশকিল। এটা অনাকাক্সিক্ষত। অবশ্য পড়াশোনার চাপে দুই বছর আগ থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন। তার এক আত্মীয় জনকণ্ঠকে বলেন, যদিও মালিন্দো এয়ারের অভিযোগের ভিত্তিতে শাহজালাল বিমানবন্দর থানায় তাকে আটকে রাখা হয়। পরে চিকিৎসার জন্য ছেড়ে দেয়া হয়। বর্তমানে সে বারিধারার ‘প্রমিসেস-সেন্টার ফোর ডি-এ্যাডিকশন এ্যান্ড ডিপ্রেশন এ চিকিৎসাধীন। এ বিষয়ে দিদারের বাবা ফারুক আল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন- নিজের ইচ্ছাতেই ২০১৬ সালে সাইবারজায়া ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যায় দিদার। সেখানেই সে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরে। খবর পেয়ে আমি নিজে গিয়ে তাকে কেপিজে হাসপাতালে চিকিৎসা করাই। এরপর সে কিছুটা সুস্থ হয়। সে সুস্থ ছিল বলেই বিশ্ববিদ্যালয় তাকে রেখেছিল। গত ১ বছর পড়াশোনার চাপে দিদার মাইন্ড ডিপ্রেশনের (বিষণœতা) শিকার হয়। এরই ফলশ্রুতিতে প্লেনে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাটি ঘটে। আমার সন্তান মদ্যপ ছিল না। তিনি বলেন, তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় দিদার। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় মগ্ন থাকত, ভাল ফলাফল করত। এসএসসি-এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়ায় পরিবারের সিদ্ধান্তে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে কুয়ায়ালামপুরে পাঠানো হয়। সেখানে গিয়ে দুর্ভাগ্যবশত এমন অসুখ হয় তার। এ বিষয়ে শাহজালাল বিমানবন্দর থানার দারোগা আল-আমিন বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন দাবি করে চিকিৎসার কাগজপত্র দেখায় পরিবার। এরপর ম্যাজিস্ট্রেট দিদারকে হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশনা দিলে পরিবারের পক্ষ থেকে প্রমিসেসে যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে লোকজন এসে দিদারকে নিয়ে যায়। দিদারের বাবা বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে ৩ দফা দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি সৌদি আরবের একটি জনশক্তির রফতানিকারক ট্রাভেল এজেন্সির মালিক। ছেলের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ছেলে মাদকাসক্ত নয়। অতিরিক্ত পড়াশোনার কারণে আজ তার এই অবস্থা। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আযম বলেন,তাকে প্রসিকিউশন দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন উল্লেখ করে হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমানে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদিকে মালিন্দো এয়ারলাইন্সের একজন কর্মকর্তা জানান, পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে রেখেই দিদারকে প্লেনের ভেতর সামলানো হয়। এতে বড় ধরনের কোন অনাকাক্সিক্ষত কিছু ঘটেনি। এ নিয়ে যাত্রীরা কিছুটা বিস্মিত হলেও সবাই স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছে।
×