ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কোটি কোটি টাকার সরকারী রাজস্ব বকেয়া;###;বকেয়া আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সব সচিবকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নির্দেশ

টাকার অভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কাজ হচ্ছে না!

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৬ মার্চ ২০১৮

টাকার অভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কাজ হচ্ছে না!

তপন বিশ্বাস ॥ শুধু বিদ্যুত বিল ও ভূমি উন্নয়ন কর বাবদ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বকেয়া রয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পাওনা প্রায় এক হাজার ৫শ’ কোটি টাকা এবং বিদ্যুত বিভাগ সরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে পাবে প্রায় ১ হাজার ১শ’ কোটি টাকা। অথচ টাকার অভাবে এ মন্ত্রণালয় দুটি অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারছে না। কোটি কোটি টাকার সরকারী রাজস্ব বকেয়া থাকলেও তা আদায়ের উদ্যোগ কাজে আসছে না। গত সচিব সভায় বিষয়টি সবিস্তারে আলোচনা হয়েছে এবং বকেয়া আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সব সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে ভূমি সংস্কার বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বকেয়া পরিশোধে তাগিদ দিয়েছি। তারা বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছেন। আশা রাখছি এ বছরই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর পেয়ে যাব। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) বাবদ যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪শ’ ২০ কোটি, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কাছে ৫শ’ ৮৩ কোটি, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৭৮ লাখ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ কোটি ৬৩ লাখ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ২ কোটি ৯৯ লাখ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছে ৬ কোটি ৩৪ লাখ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে ৯ কোটি ২৭ লাখ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কাছে ১৯ কোটি ১৪ লাখ, শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে ১২ কোটি ৩৫ লাখ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ১২ লাখ, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩১ কোটি ৩৯ লাখ, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কাছে ২০ কোটি ৪১ লাখ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৬ কোটি ৭৫ লাখ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ কোটি ৭১ লাখ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪ কোটি ২৪ লাখ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ কোটি ১২ লাখ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৮৯ লাখ ২৬ হাজার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪০ লাখ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে ৭ লাখ ৫৮ হাজার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪ কোটি ২১ লাখ, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ৬ লাখ ৯৭ হাজার, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে ৭৬ হাজার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৮৭ হাজার, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে ১০ লাখ ৩৪ হাজার, তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ২৮ লাখ ৬৩ হাজার, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪১ হাজার, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে ৮ লাখ ৯৬ হাজার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩ লাখ ২১ হাজার, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩ লাখ ৬৫ হাজার, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ লাখ ৪২ হাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ লাখ ৭৮ হাজার এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে ৭ লাখ ৬১ হাজার টাকা পাবে ভূমি মন্ত্রণালয়। ভূমি সংস্কার বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, সবচেয়ে বেশি বকেয়া পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কাছে। যা প্রায় ৫৮৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। তারপরই রয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অবস্থান। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাওনা ৪২০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এদিকে সাধারণ গ্রাহকরা বিদ্যুত বিল সময়মতো পরিশোধ করলেও খোদ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে প্রায় ১১শ’ কোটি টাকার বকেয়া বিদ্যুত বিল পাবে বিদ্যুত বিভাগ। প্রতি বছরই এ বিল আদায়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে বিদ্যুত বিল আদায়ে বিভিন্ন বিভাগ মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোয় চিঠি দিলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সরকারী অফিসগুলো বিদ্যুত বিল পরিশোধে উদাসীন। এদিকে দফায় দফায় চিঠি দিয়েও বকেয়া বিদ্যুত বিল আদায় করতে পারছে না পাঁচটি বিদ্যুত বিতরণ সংস্থা। বিতরণ কোম্পানিগুলো সূত্র জানায়, সরকারী, আধা-সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পাঁচটি বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানি প্রায় সাড়ে ১১শ’ কোটি টাকা বিদ্যুত বিল বকেয়া পড়েছে। যার মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বকেয়া চারশ’ ৯৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিইআরবি) বকেয়া ৪১ কোটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) বকেয়া চারশ’ ৩৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) বকেয়া ৮৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) বকেয়া ৮৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এদিকে মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুত বিল বকেয়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রায় ৫৭০ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে পাওনা ৫৭০ দশমিক ৯৭ কোটি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত ১২৫ দশমিক ১০ কোটি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ৯৭ কোটি ১২ লাখ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ৬১ কোটি ৩৫ লাখ, স্বরাষ্ট্রে ৩৬ কোটি ৭৬ লাখ, শিক্ষাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৪২ কোটি ৬৪ লাখ, ধর্ম মন্ত্রণালয়ে ১৯ কোটি ৩৭ লাখ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে ৪৩ কোটি ৯৮ লাখ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১২ কোটি ৯০ লাখ, প্রতিরক্ষায় ১৬ কোটি ২২ লাখ, জনপ্রশাসনে ১১ কোটি ৯০ লাখ, ডাক ও টেলিযোগাযোগে ৬ কোটি ৯৮ লাখ, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে ৬ কোটি ৫১ লাখ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ৫ কোটি ৩৯ লাখ, আইন ও বিচার বিভাগে ৫ কোটি ৫৭ লাখ, কৃষি মন্ত্রণালয়ে ৫ কোটি ৫৩ লাখ, তথ্য মন্ত্রণালয়ে এক কোটি ৬৫ লাখ, যুব ও ক্রীড়ায় পাঁচ কোটি ১২ লাখ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয়ে ৮ কোটি ৯৯ লাখ, ভূমি মন্ত্রণালয়ে তিন কোটি ৩০ লাখ, পানি সম্পদে তিন কোটি ৯৮ লাখ, সুপ্রীম কোর্টে দুই কোটি ৭৭ লাখ, শিল্প মন্ত্রণালয়ে ২৭ কোটি ৫৫ লাখ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে দুই কোটি এক লাখ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে এক কোটি ৮ লাখ, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে এক কোটি ৩০ লাখ, সমাজ কল্যাণে এক কোটি ৩০ লাখ, পরিবেশ ও বনে এক কোটি ২১ লাখ, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনে ৮৬ লাখ, অর্থ বিভাগে তিন কোটি ৭৫ লাখ, নৌপরিবহনে তিন কোটি ৩৮ লাখ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে ২৯ লাখ, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এক কোটি ১২ লাখ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৪৮ লাখ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে এক কোটি ৭৯ লাখ, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ২৯ লাখ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ২৭ লাখ, পরিকল্পনা বিভাগে ১৩ লাখ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সাত লাখ, সরকারী কর্মকমিশন (পিএসসি) ১৬ লাখ, নির্বাচন কমিশনে ২১ লাখ, পরিসংখ্যান বিভাগে ৬ লাখ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ৯ লাখ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান আট লাখ, সেতু বিভাগ চার লাখ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই কোটি তিন লাখ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ৪৭ লাখ টাকা।
×