ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাবের প্যাকেজ ঘোষণা

বেসরকারী হজযাত্রীদের এবার ব্যয় ৩ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৮ টাকা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৬ মার্চ ২০১৮

বেসরকারী হজযাত্রীদের এবার ব্যয় ৩ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৮ টাকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এ বছর হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর দাবি জানিয়ে বেসরকারী হজযাত্রীদের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে হজ এজেন্সিস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। সোমবার সকালে নয়াপল্টনের নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। এছাড়া বেসরকারীভাবে হজে যেতে ইচ্ছুক হজযাত্রীদের জন্য আজ (মঙ্গলবার) থেকে নিবন্ধন শুরু হচ্ছে। এ সময় হজযাত্রীদের জন্য বিমান ভাড়া কমানোর দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এবারের এই প্যাকেজ সম্পর্কে বলা হয়, বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় এবার সর্বনিম্ন খরচ জনপ্রতি ৩ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৮ টাকা। লিখিত বক্তব্যে হাব মহাসচিব এম শাহাদাত হোসেন তসলিম জানান, আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে প্যাকেজের সমুদয় টাকা পরিশোধ করতে হবে। ঘোষিত সর্বনিম্ন প্যাকেজের বাইরে হজযাত্রীদের নিজস্ব অর্থায়নে (৫০০ রিয়েল) পশু কোরবানি করতে হবে। প্রতিটি হজ এজেন্সিকে কমপক্ষে দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করতে হবে। তবে কেউ সর্বনিম্ন প্যাকেজের চেয়ে কম টাকা নিতে পারবে না। বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স হজযাত্রীদের কাছ থেকে অযৌক্তিকভাবে ভাড়া বেশি নিচ্ছে অভিযোগ করে প্রয়োজনে থার্ড ক্যারিয়ার খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে শাহাদত হোসাইন তসলিম বলেন-এ বছর প্রত্যেক হজ যাত্রীর জন্য অতিরিক্ত ৭৫ ডলার বৃদ্ধি করার প্রস্তাব সরকার মেনে নিয়েছে। এ হিসেবে এ বছরের ১ লাখ ২৭ হাজার হজযাত্রীর অর্ধেক যদি বিমান বহন করে তাহলে ৮৩ টাকা ডলার হারে বড়জোর ৪০ কোটি টাকা অতিরিক্ত লাভ করবে। কিন্তু নির্বাচনকে সামনে রেখে এই সামান্য কটা টাকার জন্য সরকারের সমালোচনা যে হারে দেখা দেবে তা আদৌ কাম্য নয়। নির্বাচনে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে। বিমানের এই ৭৫ ডলার বাড়ানোর কোন যৌক্তিকতা নেই দাবি করে তসলিম বলেন, বর্তমানে সাধারণ যাত্রীর জন্য ঢাকা-জেদ্দা রিটার্ন ভাড়া ৩৬ থেকে ৪০ হাজার টাকা, ওমরাহর ভাড়া ৪৮ থেকে ৫২ হাজার। এ হিসেবে হজের সময় তা বড়জোর দ্বিগুণ (১ লাখ টাকা) হতে পারে, যেহেতু ফিরতি ফ্লাইট খালি আসে। নতুন ৭৫ ডলার বাড়ানোর ফলে সেই টিকেটের দাম পড়বে ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি। এটা কিছুতেই মেনে নেয়ার মতো নয়। যদিও বিমান যুক্তি দেখিয়েছে হজ ফ্লাইট ফেরার সময় খালি আসে,নতুন করে তেলের দাম বেড়েছে। এই যুক্তি হাস্যকর। কেননা-ঢাকা জেদ্দা রুটে বিমানের প্রতিটি ফ্লাইটের আসন গড়ে অর্ধেক খালি যায়। অথচ হজের সময় সব আসন পূর্ণ থাকে। টিকেটের টাকাও অগ্রিম নেয়া হয়। এসব বিষয় বিবেচনায় নিলে কিছুতেই বিমানের ভাড়া বাড়ানো উচিত হয়নি। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাব এ বিমানভাড়ার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সোচ্চার ছিল। কিন্তু বিমান মন্ত্রণালয় সেটা আমলেই নেয়নি। এজন্য হাব ও ধর্ম মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ। আমরা এটা এখনও মেনে নিতে পারছি না। সরকারপ্রধানের উচিত এটা অন্য কোনভাবে হলেও সমন্বয় করা। হাব মহাসচিব এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি বা ভ্যাট প্রয়োগের অজুহাতে যদি হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে সাধারণ যাত্রী ও ওমরাহ যাত্রীদের ক্ষেত্রে বিমান ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়নি কেন; এটাই আমাদের প্রশ্ন। এতে প্রতীয়মান, হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া বৃদ্ধি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বিমান কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে সঠিক তথ্য সরবরাহ করেনি, এটা আমাদের বিশ্বাস। হজযাত্রীদের বর্ধিত বিমান ভাড়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী পুনর্বিবেচনা করবেন বলে আমরা এখনও দৃঢ় আশাবাদী। জেদ্দা, মক্কা ও মদিনায় হজযাত্রীদেরকে নানা অবহেলা ও অযতেœর বিষয়ে হাব কিভাবে সহযোগিতা করবে জনকণ্ঠের এমন প্রশ্নের জবাবে তসলিম বলেন, সেখানে আসলে বাংলাদেশী ব্যবস্থাপনার কোন কর্তৃত্ব থাকে না। ওই প্রান্তের সব ধরনের সেবার দায়িত্বে থাকে মোয়াসসাসার ওপর। তারপরও হাব গতবছর কয়েকটি এজেন্সি কর্তৃক হাজীদের চরম মানবেতর জীবনের মুখে ঠেলে দেয়ার ঘটনায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশে ফেরার পর এ জন্য কয়েকটি এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনের বলা হয়- প্রতিবছর সরকারী অব্যবহৃত কোটা বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় স্থানান্তরে বহুবিধ বিড়ম্বনাসহ অহেতুক সময়ক্ষেপণ হয়। এসব অব্যবহৃত কোটা প্রাপ্তির জন্য রাজকীয় সৌদি সরকারের অনুমোদন নিতে হতো এবং অনেক সময় হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার সন্ধিক্ষণে অনুমোদন পাওয়া যেত। ফলে এজেন্সিসমূহকে এ কোটায় হজযাত্রী অন্তর্ভুক্ত করার জন্য হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক কার্যাদি সম্পন্নে জটিলতা সৃষ্টি হতো। এ বছরই প্রথম হাবের প্রস্তাবে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় হজ চুক্তির সময় অব্যবহৃত সরকারী কোটা বেসরকারী ব্যবস্থায় স্থানান্তর করা হয়। এতে হজ ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হয়েছে। হাবের প্রস্তাব ও নিরলস প্রচেষ্টায় হজ নীতিমালায় পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের বিষয়টিও বাতিল করা হয়েছে। শুভেচ্ছা বক্তব্যে হাব সভাপতি আবদুস ছোবহান ভূঁইয়া চলতি বছর অনুষ্ঠিতব্য পবিত্র হজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে মিডিয়াকর্মীদের কাছে অতীতের মতো সহায়তা কামনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে হাব সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি ও মাওলানা ফজলুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় হাব নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গত ১ মার্চ থেকে সরকারীভাবে হজে যেতে ইচ্ছুক হজযাত্রীদের নিবন্ধন শুরু হয়েছে। আগামী ১১ মার্চ পর্যন্ত এই নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে। আগামী ১৪ জুলাই বাংলাদেশ থেকে প্রথম হজ ফ্লাইট সৌদি আরবের পথে রওনা হবে।
×