ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিয়তমা স্ত্রীকে তাজউদ্দীনের সেই ঐতিহাসিক চিঠি

‘জোহুরা পারলে সাড়ে ৭ কোটি বাঙ্গালীর সাথে মিশে যেয়ো’

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৬ মার্চ ২০১৮

‘জোহুরা পারলে সাড়ে ৭ কোটি বাঙ্গালীর সাথে মিশে যেয়ো’

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ‘জোহুরা পারলে সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর সঙ্গে মিশে যেয়ো। ওই মতো ব্যবস্থা (দুই)’। তাজউদ্দীন আহমদের এই চিঠির কথা কত শুনেছি। বঙ্গতাজের ঐতিহাসিক সেই চিঠি এখন খুলনায় স্থাপিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম গণহত্যা ও নির্যাতন জাদুঘরে। একাত্তরের উত্তাল-অস্থির সময়ে তাজউদ্দীন আহমদ প্রিয়তমা স্ত্রী জোহরা তাজউদ্দীনকে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। মাত্র দুই লাইনে সে সময়ের জনপ্রিয় বক মার্কা সিগারেট (করহমঝঃড়ৎশ) এর প্যাকেটের গায়ে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন সেকান্দার আলী সেরানিয়াবাতের তিন সন্তান। স্বাধীনতার পর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সেকান্দর আলীকে তিন হাজার টাকার চেক প্রদান করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শহীদ তিন সন্তানের শেষ স্মৃতি হিসেবে সে চেকের টাকা আর উত্তোলন করেননি সেকান্দর। প্রায় পাঁচ দশক ধরে আগলে রেখেছেন সেই স্মৃতি। উড়ো চিঠি, হত্যার হুমকি, এখনকার মতো পাকিস্তান আমলেও প্রচলিত ছিল। ছয় দফার দাবিতে যখন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান উত্তাল, শেখ মুজিব গ্রাম থেকে গ্রাম চষে বেড়াচ্ছেন ছয় দফার সমর্থনে সেই অস্থির সময়ে শেখ মুজিবকে হত্যার হুমকি দিয়ে পাঠানো হয়েছিল উড়ো চিঠি। চেষ্টা করা হয়েছিল ছয় দফার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার। শেখ মুজিবকে ভয় দেখানোর। মুক্তিযুদ্ধের সেই সব স্মৃতি, সেই সব ইতিহাস সোমবার থেকে সাধারণের জন্য প্রদর্শিত হচ্ছে খুলনায় স্থাপিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম গণহত্যা ও নির্যাতন জাদুঘরে। শুধু এগুলো নয় একাত্তরের গণহত্যার আরও নানা স্মৃতিবহ স্মারক ‘আর্কাইভ ৭১’-এর নির্বাহী পরিচালক প্রণব সাহার সৌজন্যে। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোঃ সফিকুল ইসলামের পরিবারের সৌজন্যে ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরে স্থান পেয়েছে একাত্তরের স্মৃতি বিজড়িত একটি ট্রানজিস্টর। সীমান্তবর্তী হিলি থানায় কর্মরত এই পুলিশ কর্মকর্তা এই ট্রানজিস্টরে স্বাধীন বাংলা বেতার, বিবিসি ও কলকাতা থেকে প্রচারিত আকাশবাণীর বিভিন্ন তথ্য ও সংবাদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রদান করে সহায়তা করতেন। একাত্তরের গণহত্যাকে নানা মাধ্যমে সাধারণের সামনে দৃশ্যমান করার চেষ্টা করছে ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর, খুলনা। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাপচিত্র বিভাগের অধ্যাপক ও প্রখ্যাত শিল্পী রোকেয়া সুলতানার ৭টি শিল্পকর্ম প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে সোমবার বিকেল ৪টা থেকে গণহত্যা জাদুঘর প্রাঙ্গণে। এ উপলক্ষ্যে সোমবার বিকেল ৪টায় ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর প্রাঙ্গণে গণহত্যা নিয়ে শিল্পকর্ম ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের স্মারক/স্মৃতিচিহ্ন স্থানান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ট্রাস্টি সম্পাদক ও বিএমএ খুলনার সভাপতি ডাঃ শেখ বাহারুল আলম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন ট্রাস্টি চৌধুরী শহীদ কাদের।
×