ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাঙ্গামাটি পাহাড়ের কচি গাছ যাচ্ছে ইটভাঁটিতে

প্রকাশিত: ০৪:২১, ৬ মার্চ ২০১৮

রাঙ্গামাটি পাহাড়ের কচি গাছ যাচ্ছে ইটভাঁটিতে

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গামাটি, ৫ মার্চ ॥ গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবুজ পাহাড়ে শুরু হয়েছে কঁচি চারা গাছ নিধনের মহোৎসব। দাঁড়িয়ে সবাই এই উৎসব দেখছে। প্রতিকারের কেউ না থাকায় দিনের পর দিন সবুজ পাহাড় ন্যাড়া হয়ে যাচ্ছে। রাঙ্গামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলা থেকে দিনে রাতে প্রতিদিন শতাধিক টন চারা গাছের লাকড়ির গাড়ি পার্শ্ববর্তী জেলা চট্টগ্রামের ইটভাঁটিতে পাচার করা হচ্ছে। কাঠের লাকড়ি সস্তায় পাওয়া যায় বিধায়। রাঙ্গামাটি ও জেলার পার্শ্ববর্তী এলাকার ইটভাঁটিগুলো কয়লার পরিবর্তে এই চারা গাছের লাকড়ি দেদার ব্যবহার করা হচ্ছে। সন্ধ্যার পর বন আইন অনুসারে বৈধ বা অবৈধ কোন ধরনের কাঠ সড়ক দিয়ে স্থানান্তর না করার আইন থাকলেও এর কোন প্রয়োগ নেই। কিন্তু রক্ষক ভক্ষক হয়ে যাওয়ায় এক শ্রেণীর কর্মকর্তার যোগসাজশে পাহাড়ী সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত টনে টনে লাকড়ি সড়ক ও নদী পথে ইটভাঁটিতে চলে যাচ্ছে। প্রতি চাঁদের গাড়ি বা ট্রাকের চাঁদার টোকেন কর্তাদের কাছে জমা হওয়ার পর গাড়িগুলো ফ্রি চলাচলের অনুমতি পেয়ে যায়। প্রতি সড়কের ধারে অথবা নদীর পাশে বনজ শুল্ক ফাঁড়ি থাকলেও টোকেন দেখানোর পর ওরা নীরব দর্শক হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে এই পদ্ধতি চালু থাকায় পার্বত্যাঞ্চলের শ্যামল পাহাড়গুলো দিনে দিনে ন্যাড়া মাথার রূপ ধারণ করছে। কথায় আছে কাজীর গরু কেতারে আছে গোয়ালে নেই। পার্বত্য এলাকার বনজ সম্পদের বেলায়ও তাই। পাহাড়ে অশ্রেণীভুক্ত বনাঞ্চলের বেলায় তাই হয়েছে। বন ও পরিবেশ অধিদফত থেকে ইটভাঁটি করার জন্য কিছু শর্ত আরোপ করা আছে। ইটভাঁটির মালিকেরা তা কোন সময় মেনে চলে না। কিছু চালাক মালিক ইটভাঁটি প্রবেশ মুখে কিছু কয়লা স্তূপ করে রাখে। যাতে কোন কারণে প্রশাসনের লোকজন গেলে তা দেখানো যায়। শুধু পাহাড়ের কাঠ পোড়ানের সুবিধার জন্য চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনের ধারে গড়ে উঠেছে। কয়েক শত ইটভাঁটি। এইগুলোর অধিকাংশ রয়েছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, রাউজান সাতকানিয়া, রামু, কাউখালী, মানিকছড়ি, রাজস্থলী আলিকদম, প্রভৃতি উপজেলায়। এসব উপজেলার ইটভাঁটিগুলোতে লোক দেখানো অভিযানও মাঝে মধ্যে চালানো হয়ে থাকে। রাত হলে অবৈধ কাঠের গাড়ি চলাচলে সরব হয়ে উঠা সড়কগুলো। রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম, কাপ্তাই চট্টগ্রাম, রাস্থলী চন্দ্রঘোনা, বান্দরবান বাঙ্গালহালিয়া, খাগড়াছড়ি রামগড়, খাগড়াছড়ি চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীছড়ি ফটিকছড়ি, বাগানবাজার ফটিকছড়ি কাউখালী রানীর হাট বর্মাছড়ি নানুপুর সড়ক দিয়ে কাঠ পাচার হয়ে থাকে এছাড়া নদী পথগুলোর মধ্যে রয়েছে, কর্নফুলী, ইছামতি, ধুরং হালদা নদী ইত্যাদি। এই সব স্থানের সড়কগুলো রাত হলে কাঠ পাচারকারীদের দখলে চলে যায়। যা দেখার কেই নেই। এক শ্রেণীর লোভি ব্যসায়ীর কারণে সরকারী বেসরকারী বনবাগান থেকে শুরু করে ব্যক্তি মালিকেনা বাগান পর্যন্ত রক্ষা হচ্ছে না। পাচারকারীরা এতই বেপরোয়া যে কোন কোন ক্ষেত্রে বাগান মালিককে ভয় দেখিয়ে কচি গাছ নামে মাত্র মূল্যে কেটে নিয়ে যায়। প্রশাসনের একটি মহল পাচারকারীদের কাছে সুবিধা পায় বিধায় অনেক সময় মাস্তানদের ভয়ে নিরহ মানুষের সৃজিত বাগান পানির ধরে লাকড়ি হিসেবে বিক্রি করতে বাধ্য হয়ে যায় ।তারা কোথাও গিয়ে তেমন কোন প্রতিকারও পায় না বলে ভুক্তভুগীরা জানায়। এই অবস্থার উত্তোরণ করা না হলে পাহাড়ে আবারো গত ১৩ জুনের মতো ভয়াভহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
×