ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আগামীতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ আসছে

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৬ মার্চ ২০১৮

আগামীতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ আসছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বর্তমান সময়ের চেয়েও আগামীতে ব্যাংকাররা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তবে এই চ্যালেঞ্জ শুধু বাংলাদেশেই নয়। সারাবিশ্বের ব্যাংকারদের জন্যই আগামীতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। তাই এখনই ব্যাংকারদের সচেতন হতে হবে। নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে তাদের ভাল জ্ঞান থাকতে হবে। ব্যাংকিং ব্যবসায় নতুন নতুন মডেল তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি দেশের সরকারী-বেসরকারী কোন ব্যাংকেরই পরিচালক নিয়োগের কোন নীতিমালা নেই। যে কোন ব্যক্তিই পুঁজি বিনিয়োগ করে বেসরকারী ব্যাংকের পরিচালক হয়ে যাচ্ছেন। এটিকে দেশের ব্যাংকিং খাতের সুশাসনের অন্তরায় হিসেবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতি উন্নয়নে পরিচালক নিয়োগের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের পাশাপাশি প্রশিক্ষণের প্রস্তাব করছেন তারা। রবিবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটরিয়ামে দু’দিনব্যাপী আঞ্চলিক ব্যাংকিং সম্মেলনের সমাপনী দিনে বক্তারা এসব কথা বলেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে খেলাপী ঋণের সর্বনি¤œ হার এ মুহূর্তে নেপালের। দেশটির ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণের হার ১ দশমিক ৭১ শতাংশ। বিআইবিএমের সম্মেলনের সমাপনী দিনের বড় অংশজুড়ে আলোচনা ছিল খেলাপী ঋণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নেপালের কৌশল নিয়ে। সম্মেলনে নেপাল সানিমা ব্যাংকের সিইও ভুবন কুমার দাহাল জানান, খেলাপী ঋণ নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার ও নেপাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক যৌথভাবে কাজ করছে। ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপীদের পাসপোর্ট জব্দ করার পাশাপাশি দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে গ্রাহকরা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করছে। তিনি জানান, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য পরিচালকদের বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি ব্যাংকের নিট মুনাফার ৩ শতাংশ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা এস কে সুর চৌধুরী। তার কাছে, প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশে ব্যাংক পরিচালকদের প্রশিক্ষণের কোন উদ্যোগ নেয়া হবে কি না? জবাবে তিনি বলেন, পরিচালকদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবেচনাধীন রয়েছে। এক্ষেত্রে বিআইবিএম এগিয়ে আসতে পারে। সম্মেলনের শেষ দিনের প্রথম সেশনে সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর মুহাম্মাদ এ (রুমী) আলী। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ের চেয়েও আগামীতে ব্যাংকাররা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তবে এ চ্যালেঞ্জ শুধু বাংলাদেশেই নয়। সারাবিশ্বের ব্যাংকারদের জন্যই আগামীতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। তাই এখনই ব্যাংকারদের সচেতন হতে হবে। নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে তাদের ভাল জ্ঞান থাকতে হবে। ব্যাংকিং ব্যবসায় নতুন নতুন মডেল তৈরি করতে হবে। ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক মঈনুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের দেশের ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে খেলাপী ঋণ। ভারতে সাধারণ খেলাপী থেকে ইচ্ছাকৃত খেলাপীদের পৃথক করা হয়ে তাকে। আমাদের দেশের ইচ্ছাকৃত খেলাপীদেরও পৃথক করা উচিত। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছাতে প্রযুক্তির কোন বিকল্প নেই। মোবাইল ব্যাংকিং এবং এজেন্ট ব্যাংকিংসহ নতুন নতুন সেবার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবার বাইরের মানুষকে ব্যাংক সেবার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, আগামীতে ব্যাংকের ঝুঁকি সংক্রান্ত যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে তা মোকাবেলায় পরিচালনা পরিষদকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব বিধি-বিধান রয়েছে তা সঠিকভাবে মেনে চললে ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে। কিন্তু অধিকাংশ পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের এ সম্পর্কে সম্মক জ্ঞান নেই। তিনি বলেন, ব্যাংকের প্রধান ঝুঁকি কর্মকর্তাদের (সিআরও) কার্যক্রম সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। এ কারণে সঠিকভাবে ঝুঁকির বিষয়টি উঠে আসে না। আগামী দিনে যে ঝুঁকি তৈরি হবে এই ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যাংকে যোগ্যতাসম্পন্ন পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিচালকদের একটা ফিট লিস্ট তৈরি করতে হবে। এ ধরনের ফিট লিস্ট থাকলে অযোগ্য ব্যক্তিরা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বসতে পারবে না। একই সঙ্গে বোর্ডকে নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। তা না হলে ঝুঁকি মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, পরিচালকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হলে সরকারের উদ্যোগ প্রয়োজন।
×