ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খোলা বাজারে চাল বিক্রি শুরু

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৬ মার্চ ২০১৮

খোলা বাজারে চাল বিক্রি শুরু

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাজধানীসহ সারাদেশে রবিবার থেকে খোলা বাজারে (ওএমএস) চাল বিক্রি করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। রবিবারের পরিবর্তে সোমবার থেকে সারাদেশে খোলা বাজারে চাল ও আটা বিক্রি করা হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা এবং আটা ১৭ টাকা দরে বিক্রি করা হবে। তবে গত বৃহস্পতিবার থেকে অতি দরিদ্র পরিবারের মধ্যে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে খাদ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আরিফুর রহমান অপু বলেন, শুক্র ও শনিবার দুইদিন ছুটি থাকায় ডিলাররা ব্যাংকে টাকা জমা দিতে পারেনি। ফলে তাদের অনুকূলে চাল ও আটা জমা দেয়া সম্ভব হয়নি। এ কারণে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার থেকে খোলা বাজারে তা বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। তবে সোমবার থেকে পুরোদমে চাল ও আটা বিক্রি শুরু হবে। তিনি বলেন, ডিলাররা রবিবার ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে চাল ও আটা নেয়া শুরু করেছেন। অতিরিক্ত মহাপরিচালক আরও বলেন, আগের মতোই প্রতি কেজি ৩০ টাকা করে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ট্রাকে করে এই চাল বিক্রি করা হবে। এ ছাড়াও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় গত বৃহস্পতিবার থেকে অতিদরিদ্র ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা করে প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল দেয়া হচ্ছে। মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নবেম্বর এই পাঁচ মাস অতিদরিদ্র পরিবারের মধ্যে এ চাল বিতরণ করা হবে। এ কর্মসূচীর জন্য বছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার টন চাল দরকার হবে। সূত্র জানায়, খাদ্য অধিদফতর থেকে প্রত্যেক ডিলার ১ টন করে চাল বরাদ্দ পাবেন। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল কিনতে পারবেন। প্রতি কেজি চালের দাম ঠিক করা হয়েছে ৩০ টাকা। ওএমএসে ১৭ টাকা কেজি দরে আটা বিক্রি করা হবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম নতুন করে খোলা বাজারে সিদ্ধ চাল বিক্রির ঘোষণা দেন। খাদ্যমন্ত্রী জানান, ৪ মার্চ থেকে শুরু হয়ে বোরো ধান সংগ্রহ পর্যন্ত খোলা বাজারে চাল বিক্রি চলবে। বাজারে চালের দামের উর্ধগতির মধ্যে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ওএমএসে আতপ চাল বিক্রি শুরু করে সরকার। তখন প্রতি কেজি চাল ১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়। পরে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে চাল বিক্রি কার্যক্রম উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হয়। তবে ওএমএসে সিদ্ধ চালের পরিবর্তে আতপ চাল ও দাম দ্বিগুণ হওয়ায় ক্রেতাদের তেমন সাড়া মেলেনি। এর ওপর সরকারী খাদ্য মজুদের পরিমাণ কমে যাওয়ায় গত ডিসেম্বরে আতপ চাল বিক্রিও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে সরকারের গোডাউনে প্রায় ১১ লাখ ১৩ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ৩ লাখ ৬৮ হাজার টন গম মজুদ আছে বলেও খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। তবে খোলা বাজারে চাল ও আটা বিক্রি শুরুর প্রথম দিনেই কম চাল পাওয়ায় ক্ষুব্ধ রাজধানীর ডিলাররা। এ কারণে অনেকেই দেরি করে বিক্রি শুরু করেছেন। আবার অনেক জায়গায় খোলা বাজারে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম চোখে পড়েনি। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। সাধারণত ওএমএস-এ সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে চাল বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু এদিন ডিলাররা দেরিতে চাল বিত্রি শুরু করেন। কেউ কেউ সাড়ে ৯টা, কেউ ১০টা আবার কেউবা ১১টার সময়ও বিক্রি শুরু করেন। সরেজমিনে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে। ওএমএস ট্রাক সেল ডিলার সমিতির সভাপতি আলমগীর সৈকত বলেন, ‘চাল দেয়া হয়েছে এক টন এবং আটা দেয়া হয়েছে দুই টন করে। তবে চাল ও আটা দুটোই দুই টন করে দেয়ার কথা ছিল। চাল কম পাওয়ায় ডিলাররা ক্ষুব্ধ। তাই তারা দেরিতে বিক্রি শুরু করেন।’ চাল কম দেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন খাদ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আরিফুর রহমান অপু। তিনি বলেন, ‘চাল এক টন করে দেয়া হয়েছে। আটা দেয়া হয়েছে দুই মেট্রিক টন। মূলত বাজারে যাতে চালের দাম বেড়ে না যায় সেজন্যই চাল কম দেয়া হয়েছে।’ চালের সঙ্কট রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ১১ লাখ টনের বেশি চাল মজুদ রয়েছে। অতীতে কোনও সময়ে এত বেশি চাল সংগ্রহে ছিল না। দাবি করা হচ্ছে বাজারে চালের দাম বাড়ছে। আমরা মনে করি চালের দাম বাড়ছে না। তাই দাম যাতে না বাড়ে সেদিক লক্ষ্য রেখেই এভাবে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে।’ রাজধানীর পান্থপথে ট্রাকসেল শুরু হয়েছে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। দেরির কারণ জানতে চাইলে ডিলার স্বপনের ছোট ভাই সাব্বির বলেন, ‘চাল কম দেয়া হয়েছে। সেজন্য দেরি।’ কাঁঠালবাগান হাতিরপুল ট্রাকসেলের ডিলারের প্রতিনিধি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সাড়ে ৯টায় শুরু করেছি। আরও আগে শুরু করা যেত। চাল উঠাতে দেরি হয়েছে। দুই টন আটা দিলেও চাল দেয়া হয়েছে এক টন। চাল কম দেয়ায় অনেকেই চাল উঠাতে চাননি।’ তিনি বলেন, ‘দেড় ঘণ্টায় ৫৬ জন চাল আর ৫৯ জন আটা কিনেছেন। সাড়া ভাল, চাল কম হওয়ায় আমাদের সমস্যায় পড়তে হবে।’ এদিকে রাজধানীর আব্দুল গণি রোড, জাতীয় প্রেসক্লাবের কাছে ট্রাকসেলের কার্যক্রম দেখাই যায়নি। ট্রাকসেল ডিলার সমিতির সভাপতি আলমগীর সৈকত জানান, ১০২ জন ডিলার চাল উঠিয়েছেন। যদিও ১২০ জন ডিলারের রাজধানীতে খোলা বাজারে চাল ও আটা বিক্রির কথা ছিল।
×