ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এক রাতেই ১৮ জুয়াড়ি আটক

রাজশাহীতে থামছে না মাদকের আগ্রাসন

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৫ মার্চ ২০১৮

রাজশাহীতে থামছে না মাদকের আগ্রাসন

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নানামুখী তৎপরতায় রাজশাহী নগরীতে চুরি, ছিনতাইসহ বড় ধরনের অপরাধ প্রবণতা কিছুটা কমলেও মাদকের আগ্রাসন কমছে না। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জুয়ার প্রবণতা। রাজশাহী নগরীর মোড়ে মোড়ে এখন নতুন ‘ভাইরাস’ হয়ে দেখা দিয়েছে জুয়ার আসর। দ্রুত এসব জুয়ার আসর বন্ধ না হলেও আবারও বাড়বে চুরি, ছিনতাই বলে আশঙ্কা নগরবাসীর। তবে পুলিশ বলছে, নগরীতে মাদকের আগ্রাসন প্রতিরোধের পাশাপাশি জুয়ার বোর্ডেও হানা দেয়া শুরু হয়েছে। সর্বশেষ শনিবার রাতে নগরীর কয়েকটি জুয়ার আখড়াই অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। এর মধ্যে একটি আসর থেকেই আটক করা হয় ১৮জনকে। এ সময় নগদ টাকা এবং কয়েক সেট তাস উদ্ধার করা হয়। তবে ওই অভিযানের খবর পেয়ে সটকে পড়ে অন্য জুয়ার আসরের জুয়াড়িরা। রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার আল-আমিন জানান, শনিবার রাত ১০টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশ নগরীর দরিখরবোনা রেললাইনের পাশের জুয়ার আসরে অভিযান চালায়। এ সময় একসঙ্গে ১৮ জনকে আটক করা হয়। জুয়া খেলায় ব্যবহৃত কয়েক সেট তাস এবং নগদ ৩০ হাজার ৫০০ টাকা জব্দ করা হয়। রবিবার এসব জুয়াড়িদের আদালতে প্রেরণ করা হয়। এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি রাতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল নগরীর দরিখরবোনা এলাকা থেকেও একসঙ্গে ১৩ জন জুয়াড়িকে আটক করে। তবে পরের দিন আদালত থেকে ১৩ জুয়াড়িই জামিনে মুক্ত হয়। এরপর কয়দিন জুয়ার আসর বন্ধ থাকলেও আবারও বসছে জুয়ার আসর। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগর পুলিশ মাঝে মাঝে জুয়ার আসরগুলোতে অভিযান চালিয়ে জুয়াড়িদের আটক করলেও কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা অন্তত অর্ধশতাধিক জুয়ার আসরে প্রতিদিন অন্তত কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। রাজশাহী জেলা ক্রীড়া সংস্থা পরিচালিত হাউজি নামের প্রকাশ্যে চলা জুয়ার আসরেই প্রতিদিন অন্তত ৩০ লাখ টাকার অবৈধ লেনদেন হচ্ছে। এখানে প্রতিদিন সাইড খেলার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অন্তত ৩ লাখ টাকা। স্থানীয় নেতারা এই টাকাগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করছেন। কিছু টাকা যাচ্ছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের পকেটেও। একাধিক সূত্র জানায়, জেলা স্টেডিয়াম মার্কেটসহ রাজশাহী নগরীতে যেসব স্থানে জুয়ার আসর বসছে, তার সবকটি আসর থেকেই নিয়মিত মাসোহারা আদায় করছে নগরীর সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তারা। গোয়েন্দা পুলিশের সেকেন্ড অফিসার হাসান আলী এবং সংশ্লিষ্ট থানার ক্যাশিয়াররা নগরীতে বসা জুয়ার আসরগুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এতে কখনও কখনও অভিযান চালানোর আগেই জুয়াড়িদের কাছে খবর চলে যাচ্ছে। ফলে পুলিশী অভিযানও অধিকাংশ সময় ব্যর্থ হচ্ছে। জানা গেছে, নগরীর দড়িখরবোনা এলাকার জুয়ার আসরটি নিয়ন্ত্রণ করে রাসেল ইসলাম, উজ্জল হোসেন, তোজাম্মেল হোসেন টনি ও ইয়ার আলী। গত ৩১ জানুয়ারি এদের পুলিশ আটক করেছিল। কিন্তু কয়দিন পরে তারা আবারও একই স্থানে জুয়ার আসর বসিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। এছাড়া নগরীর শালবাগানে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বসছে এখানে জুয়ার আসর। পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া তথ্যমতে, রাজশাহী নগরীর অন্তত অর্ধশতাধিক পয়েন্টে এখন জুয়ার আসর বসছে প্রতিদিন। এতে নিঃস্ব হচ্ছে এক শ্রেণীর মানুষ। আর জুয়ার আসর বসিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করে রাতারাতি লাখোপতি বনে যাচ্ছেন অনেকেই। এদের অনেকেই বাড়ি-গাড়িরও মালিক এখন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরীর রাজপাড়া থানার গোবিন্দপুর এলাকার ওয়াপদা মাঠ, বন্ধগেট এলাকা, কোর্টবাজার কাঁচাবাজার, বুলনপুর, আলীর মোড়, রায়াপাড়া, ঘুঘুপাড়া, চারখুটার মোড়, বোয়ালিয়া থানার জেলা স্টেডিয়াম মার্কেট, দরিখরবোনা, শিরোইল বাসস্ট্যান্ড, উপশহর নিউমার্কেট এলাকা, মতিহারের শ্যামপুর, কাটাখালি, বিনোদপুর, শাহমখদুম থানার মালদা কলোনি, নওদাপাড়াসহ আরও বিভিন্ন স্থানে রমরমা জুয়ার আসর বসছে। আর রাজশাহী শহর এবং শহরের বাইরে থেকেও এসব আসরে যোগ হচ্ছে জুয়াড়িরা। এসব বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশে মুখপাত্র ইফতে খায়ের আলম বলেন, ‘আমাদের থানাগুলোকে নির্দেশ দেয়া আছে, কোন ধরনের জুয়ার আসর বসানো যাবে না। মাঝে মাঝে পুলিশ রেইডও দিচ্ছে। তারপরেও কিছু ঘটনা ঘটছে স্বীকার করে এ কর্মকর্তা জানান, মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এবার জুয়া প্রতিরোধে বড় ধরনের অভিযানে নামবে পুলিশ। . গাজীপুর স্টাফ রিপোর্টার গাজীপুর থেকে জানান, রাজেন্দ্রেপুরের শালবনের ভেতরে একটি জুয়ার আসরে শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে আগুন দিয়ে ও ভেঙ্গে তা গুড়িয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। গাজীপুরের এনডিসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বি,এম, কুদরত-এ-খুদা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রাসেল মিয়া ও মোঃ জুবের আলমের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত শনিবার রাতে ওই অভিযান পরিচালনা করেন। গাজীপুরের এনডিসি বি,এম, কুদরত -এ- খুদা জানান, গাজীপুর সদর উপজেলার রাজেন্দ্রেপুর এলাকার শালবনের ভেতরে অবৈধভাবে টিন দিয়ে বিশাল প্যান্ডেল তৈরি করে একটি জুয়ার আসর পরিচালনা করছে একটি মহল। এ সংবাদ পেয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরের নির্দেশে শনিবার রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় ওই আসর ভেঙ্গে দিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে তা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
×