ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভার্চুয়াল জগত ফোবিয়া...

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৫ মার্চ ২০১৮

ভার্চুয়াল জগত ফোবিয়া...

রাকিব (ছদ্মনাম) একটি নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। একাডেমিক পড়াশোনার কাজে কিংবা এসাইনমেন্ট এবং প্রেজেন্টেশন এর জন্য অনলাইনে ভার্চুয়াল জগতে বেশ কিছু সময় কাটতে হয়। কিন্তু ইন্টারনেটে প্রবোদ করলেই প্রয়োজনীয় কাজের চেয়ে বেদী সময় চলে যায় তার। তাছাড়া সোস্যাল সাইটগুলোতে দিনের বেশিটা সময় চ্যাট করতে ভাল লাগে তার। সকালের শুরুটা হয় ফেসবুকের টাইমলাইন দেখে আর সুমোতে ফয় অনলাইনে চ্যাট করতে করতে। আড্ডা বলতে বন্ধুদের সাথে গ্রুপ চ্যাটই যেন তার কাছে বেশি আনন্দের। বিভিন্ন বিষয়ের লিংক দেয়ার, অনলাইন ট্রল এগুলোই গ্রুপ চ্যাটের মুখ্য বিষয়। কোথাও এক সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া কিংবা আড্ডা দেয়া হয় না তার। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও তেমন একটা গল্প হয়না। গল্পের মাধ্যমে যেন শুধুই সোস্যাল সাইটে চ্যাট করা। তার মতে একদিনও অনলাইন ছাড়া কাটানো অসম্ভব। শুধু রাকিবই নয়। এই ইন্টারনেট জ্বর এ ভুগছে গোটা সমাজ। শুধু তরুণরাই নয়, নানান বয়সের মানুষের কাছে এই ভার্চুয়াল জগত দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন। ইন্টারনেটও এখন অনেকটাই সহজলভ্য। তাই সময়ে অসময়ে, প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে ভার্চুয়াল জগতে ঢুঁ মারা এখন নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে আমাদের। ফলে বাস্তব জগত থেকে ক্রমশ আমরা দূরে সরে পড়ছি এখন আর ক্লাস শেষে বন্ধুদের আড্ডা তেমন চোখে পড়ে না। অথচ একটা সময় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে দেখা যেত দলবেঁধে আড্ডা। খেলার মাঠের অভাব কিংবা ভার্চুয়ালে জগৎকে ঘিরে গড়ে ওঠা কিশোর তরুণদের আজ আর খেলার মাঠে তেমন খেলতে দেখা যায় না। অনলাইন গেমগুলো তার বদলে জায়গা করে নিচ্ছে আমাদের মাঝে। অজকাল বন্ধু বান্ধবের দল একত্রিত হলেও আড্ডা ঘিরে যেন প্রাধান্য পায় সোস্যাল সাইটগুলো নিয়ে কথা, অনলাইন গেম নিয়ে আলোচনা, পাশাপাশি বসেও মানুষগুলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন, যে যার মতো স্মার্টফোনে ভার্চুয়াল জগৎ নিয়ে ব্যস্ত। চায়ের কাপে ঝড় তোলা আড্ডা কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে, সোশ্যাল সাইটে আমরা। মানবতা নিয়ে লিখে বিশ্বজয় করে ফেলছি। অথচ নিজ পরিবারের সদস্যের খোঁজ নিতেও আমরা ভুলে যাচ্ছি। যদিও তথ্য প্রযুক্তির উপকারিতা অস্বীকার করার সাধ্য আমাদের নেই। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তির উপকারিতা অস্বীকার করার সাধ্যা আমাদের নেই। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে. প্রযুক্তির সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখো এগিয়ে যাওয়া আমাদের আবশ্যক। এবং তার জন্য ভার্চুয়াল জগতে পদচারণা করা আমাদের প্রয়োজন। কিন্তু তবুও যেহেতু আমরা মানুষ। তাই মানবিক দিকগুলো যেন হারিয়ে না যায় সেদিকে আজ আমাদের সজাগ হবার সময় এসেছে। স্মার্টফোনের মাধ্যমে আমরা আবেগ ছড়িয়ে দিচ্ছি ঠিকই কিন্তু বাস্তবজগতে আমরা আবেগশূন্য হয়ে পড়ছি। পাশাপাশি বসে থাকা মানুষ, পরিবারের সদস্য সব্ইা যেন আমরা বিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট আসক্তি, সোশ্যাল সাইটগুলোতে অতিরিক্ত চ্যাট আমাদের বাস্তব জীবনের আবেগকে কেড়ে নিচ্ছে। প্রয়োজনীয় কাজে ইন্টারনেটে আমরা ঢুকার পর সোশ্যাল সাইটের অ্যাপসগুলোতে আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ফলে মূল কাজটি করতে ইন্টারনেটে যতক্ষণ থাকার কথা তার চেয়ে বেশি সময় অতিবাহিত করছি। নির্দিষ্ট সময় ইন্টারনেটে কাটানোর পর বাস্তব জীবনের মানবিক চাহিদাগুলো। পরস্পর অনুভ’তি আদান প্রদানে আমাদের সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। নয়তো একটা সময় মানবতা পুরোপুরি ভার্চুয়ালা জগতে আবদ্ধ হয়ে পড়বে। যাপিত ডেস্ক
×