ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কারাগারকে সংশোধনাগারে রূপান্তরে প্রকল্প গ্রহণ

জেলে প্রত্যেক বন্দীর জন্য একটি করে বালিশ ও মশারি দেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৫ মার্চ ২০১৮

 জেলে প্রত্যেক বন্দীর জন্য একটি করে বালিশ ও মশারি দেয়া হচ্ছে

মশিউর রহমান খান ॥ ‘জেলখানার সম্বল, থালা বাটি কম্বল’ কারাগারে প্রবেশ করেছেন এমন কোন বন্দী নেই যিনি এই প্রবাদটির সঙ্গে পরিচিত নন। এর বাইরেও কারাগার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এমন মানুষজনও বিষয়টি সম্পর্কে বেশ ভাল করেই জানেন। এছাড়া কারাভ্যন্তরে মশার কামড় খায়নি এমন কোন বন্দী পাওয়া যাবে না। বন্দীর শাস্তি কার্যকরের স্থানই কারাগার শত শত বছরের এমন ধারণা বদলে দিয়ে প্রথমবারের মতো কারাগারকে সংশোধনাগারে পরিণত করতে কারা কর্তৃপক্ষ প্রতিটি বন্দীর জন্য একটি করে শিমুল তুলার বালিশ, দুটি বালিশের কভার ও একটি মশারি প্রদানের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আটক বন্দীর কল্যাণের কথা চিন্তা করে বন্দীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও মশার কামড় থেকে বাঁচতে এবং আটককালীন স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ করতেই এই বিশেষ উদ্যোগ হাতে নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ জনকণ্ঠকে এমনটাই জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। সূত্র জানায়, কারাগারে নতুন কোন বন্দী প্রবেশ করার পর তার পরিচয় শেষেই থাকা ও খাওয়ার জন্য হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় তিনটি কম্বল, একটি থালা ও একটি বাটি। একটি কম্বল গায়ে দেয়ার, একটি বিছানোর জন্য অপরটি ভাঁজ করে মাথায় দেয়ার বালিশ হিসেবে ব্যবহার করতে দেয়া হয়। তবে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী ও হাসপাতালে ভর্তিকৃত বন্দীরা আগে থেকেই বালিশ ও মশারি ব্যবহার করতে পারতেন। এ উদ্যোগের ফলে কারাগারে আটক সকল শ্রেণীর বন্দীই ব্যবহারের জন্য বালিশ ও মশারি বরাদ্দ পাবেন। প্রতিটি কভারসহ বালিশের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪শ ৮৩ টাকা। আর মশারির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ শ ৫০ টাকা। বন্দীরা আগামী জুন মাস থেকেই বালিশ ও মশারি পাবেন । বাংলাদেশের কারাগারের বন্দীর জন্য বরাদ্দকৃত প্রাথমিক সামগ্রী হিসেবে বরাদ্দকৃত জিনিসপত্রের ২ শ ২৮ বছরের ইতিহাস ভঙ্গ করে বন্দীকে ২ টি কম্বল ও একটি শিমুল তুলার উন্নতমানের বালিশ দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সঙ্গে প্রতিটি বন্দীর জন্য একটি করে মশারি থাকবে। মূলত কারাগারকে শুধু শাস্তি কার্যকরের স্থানই নয় বন্দীকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার একের পর এক উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, বর্তমানে সারাদেশের ৬৮ কারাগারে প্রায় ৭৯ হাজার কারাবন্দী রয়েছেন। প্রতিটি বন্দীকে তিনটি কম্বলের পরিবর্তে ২ টি ও অপর একটি কম্বলের পরিবর্তে শিমুল তুলার উন্নতমানের বালিশ প্রদান করা হবে। কারা কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার বালিশ ক্রয়ের জন্য টেন্ডার আহ্বান করেছে। এজন্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। দেশের কিছু কারাগার ছাড়া প্রায় সকল কারাগারে মশক নিধনের জন্য কার্যকরী তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে কারাগারে প্রবেশ করলেই বন্দীকে বাধ্যতামূলকভাবে মশার কামড় খেতে হয়। অনেকেই মশার কামড়ে না ঘুমিয়ে সারারাত সজাগ থেকেই কাটিয়ে দেন এমন অসংখ্য নজির রয়েছে। একদিন দুদিন নয় মাসের পর মাস এমন ঘটনাও ঘটে কোন কোন বন্দীর ক্ষেত্রে। ফলে মশার কামড়েও নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হন বন্দীরা। কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, কারাবন্দীদের মধ্যে ৭ হাজার ১শ ৩৮ জন বন্দীই নানা রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে ১শ ১৫ জন (যক্ষ্মা) টিবি, ১ হাজার ২শ ৭৫ জন হাঁপানি বা এ্যাজমা রোগে আক্রান্ত। কোন প্রকার মশারি না থাকা ও মেঝেতে রাত কাটাতে হয় বিধায় চিকিৎসকদের মতে, ঠা-া ও মশার কামড় থেকে উপরোক্ত দুই ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই কারাবন্দীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে তাদের জন্য বালিশ ও মশারি কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত বছরের জুন মাসে দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ছিল ৭৩ হাজার ১শ ৭৭ জন। বর্তমানে তা প্রায় ৭৯ হাজার। এসব বন্দীদের জন্য অতিরিক্ত হিসেবে গড়ে মোট ৭০ থেকে ৮০ হাজার পিস শিমুল তুলার বালিশ ও উন্নতমানের মশারি কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ কোটি ৬৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে ব্যয় কিছুটা কমবেশি হতে পারে।
×