ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নজরদারি বৃদ্ধি ও পৃথক তালিকা তৈরির নির্দেশ পুলিশ প্রশাসনের

নানা ছলনায় আফ্রিকান প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৫ মার্চ ২০১৮

নানা ছলনায় আফ্রিকান প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা

গাফফার খান চৌধুরী ॥ বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশীদের মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশের নাগরিকদের প্রতারণাসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। কারাগারে থেকেও তারা সংশোধন হচ্ছেন না। জামিনে বেরিয়ে আবার জড়িয়ে পড়ছেন অপরাধে। শনিবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাতে এক নাইজিরিয়ান ও এক বাংলাদেশী প্রতারক গ্রেফতারের পর আবারও বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। এদিকে কারাবন্দী এবং কারাগারের বাইরে থাকা আফ্রিকা মহাদেশের নাগরিকদের ওপর বিশেষ নজরদারি এবং তাদের পৃথক তালিকা করার নির্দেশ জারি করেছে পুলিশ সদর দফতর। নজরদারি চললেও অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি। নাইজিরিয়ানরা কারাগারে বসেই নানা প্রতারক চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। গত শুক্রবার ঢাকার তেজগাঁও থেকে পিবিআই প্রতারণার দায়ে নাইজিরিয়ার নাগরিক হেনরি ইসিকা (৪০) ও বাংলাদেশী প্রতারক ইসমাইল হোসেনকে (৪৮) গ্রেফতার করে। পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, হেনরি ফুটবলার হিসেবে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। সে বিভিন্ন মোবাইল নম্বর, ফেসবুক আইডি সংগ্রহ করে। তারা ফেসবুক আইডি হ্যাক করতেও পারদর্শী। অনলাইনে করা বিভিন্ন আবেদন পত্রের কপি হ্যাক করে তারা প্রতারণার কাজটি করে আসছিল। এরপর ফেসবুকে বা টার্গেটকৃত ব্যক্তির ই-মেইলে দামী গিফট পেয়েছে বলে জানাত। এসব গিফট ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য কাস্টমসকে টাকা দেয়ার নাম করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। চক্রটির সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীরাও জড়িত। কারণ প্রতারণার টাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারী ব্যাংকে জমা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বশির আহমেদ জানান, সালাহ উদ্দিন ও আকরাম মুন্সী নামে দুই ব্যক্তির এ্যাকাউন্টে প্রতারণার টাকা জমা হওয়ার তথ্য মিলেছে। চক্রের সদস্য গ্রেফতারকৃত ইসমাইল হোসেন ও পলাতক আসামিরা প্রতারণার টাকার নিয়মিত ভাগ পেত। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছিল কারাগারে। কারাগারে বসেই তারা এমন প্রতারণার ফাঁদের পরিকল্পনা করে। ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, অপরাধে জড়িয়ে পড়া বিদেশীদের অধিকাংশই বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। এজন্য অবৈধ অভিবাসীদের তালিকা প্রস্তুতির কাজ চলছে। তদন্তে দেখা গেছে, বিমানবন্দর হয়ে বৈধভাবেই প্রবেশ করেন আফ্রিকানরা। হয়ত পাসপোর্টে উল্লেখিত সময় বৈধভাবেই বসবাস করেন। এরপর তারা ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন না করেই অবৈধভাবে বসবাস করতে থাকেন। অনেক আফ্রিকান বাংলাদেশে প্রবেশ করেই পাসপোর্ট বা বৈধ কাগজপত্র গায়েব করে ফেলেন। যে কারণে তাদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। জামিন পাওয়ার পর সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকায় আফ্রিকানদের দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয়।
×