ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভিয়েতনাম প্রেসিডেন্ট ঢাকায়, অভ্যর্থনা জানালেন রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৫ মার্চ ২০১৮

 ভিয়েতনাম প্রেসিডেন্ট ঢাকায়, অভ্যর্থনা জানালেন রাষ্ট্রপতি

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং রবিবার তিন দিনের সফর ঢাকায় এসেছেন। তার স্ত্রী গুয়েন থি হিয়েনও প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী হয়েছেন। গত ১৪ বছরে এটাই ভিয়েতনামের কোন রাষ্ট্রপ্রধানের বাংলাদেশে প্রথম সফর। রবিবার বিকেল ৪টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে নামলে দাই কুয়াংক দম্পতিকে অভ্যর্থনা জানান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও তার স্ত্রী রাশিদা খানম। বিমান থেকে নেমে আসার সময় ২১ বার তোপধ্বনিতে তাকে স্বাগত জানানো হয়। দুটি শিশু ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় ভিয়েতনামের রাষ্ট্র প্রধানকে। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টকে নিয়ে মঞ্চে আসার পর দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাকে গার্ড অব অনার দেয়। পরে সফররত রাষ্ট্রপ্রধান গার্ড পরিদর্শন করেন। গার্ড পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সবার সঙ্গে পরিচিত হন দাই কুয়াং। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, তিন বাহিনীর প্রধান, ডিপ্লোমেটিক কোরের ডিন ও ঢাকায় ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কাচেরি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, পররাষ্ট্রসচিব এম শহীদুল হক, পুলিশ মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। বিমানবন্দর থেকে দাই কুয়াংকে হোটেল সোনারগাঁওয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সফরে তিনি সেখানেই অবস্থান করবেন। সন্ধ্যায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সৌজন্য বৈঠক করেন। বৈঠকে ঢাকা-হ্যানয় দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেন তারা। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনার পর বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সফর শেষে আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকা ত্যাগ করবেন ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট। ২০১২ সালের নবেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিয়েতনাম সফর করেন। সে সময় ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেন তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টকে ঢাকা সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ঢাকায় এসেছেন। আজ সোমবার সকাল ৮টার দিকে ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে একটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সেখানে তিনি একটি গাছের চারা রোপণ করবেন এবং দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করবেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তিনি সাড়ে ৯টায় ধানম-িতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করবেন। একইদিন সকাল ১০টায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠক করবেন। বৈঠকে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বৈঠকের ফলাফল জানানো হতে পারে। কার্যসূচী অনুযায়ী সোমবার বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে তিনি জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্স পরিদর্শন করবেন। সেখানে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তার সঙ্গে একটি বৈঠক করবেন। এর আগে বেলা আড়াই টায় হোটের সোনারগাঁওয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম বিকেল ৩টায় ভিয়েতনামের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে তার সম্মানে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ প্রধানের সঙ্গে একটি সৌজন্য সাক্ষাত করবেন ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট। তিনি ভিয়েতনাম-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের একটি বৈঠকে যোগ দেবেন। পরে তিনি ‘ভিয়েতনাম কালচারাল ডেজ ইন বাংলাদেশ’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট মঙ্গলবার ঢাকা ছেড়ে যাবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাবেন। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। কেননা দুই দেশই দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সে কারণে উভয় দেশই দীর্ঘদিন ধরে একে অপরকে সহযোগিতা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ভিয়েতনাম সফর করেন। সে সময় বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর প্রতি জোর দেন। বাংলাদেশের রফতানির অন্যতম দেশ ভিয়েতনাম। ১৯৯০ সালে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য শুরু। দেশটিতে মূলত রফতানি হচ্ছে রাসায়নিক দ্রব্য, হিমায়িত খাদ্য, লেদার, কাঁচাপাট, কৃষিজাত দ্রব্য, পাটজাত দ্রব্য, তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার ইত্যাদি। আর ভিয়েতনাম থেকে চাল ছাড়াও আমদানি হচ্ছে, মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী, শাকসবজি, মিনারেল, ওষুধ ও সিরামিক পণ্য।
×