ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় বুদ্ধিজীবী মহল ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের প্রতিবাদ

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ৫ মার্চ ২০১৮

জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় বুদ্ধিজীবী মহল ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের প্রতিবাদ

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর জঙ্গী হামলার প্রতিবাদে সারাদেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে। ঢাকার পাশাপাশি সারাদেশেই বিক্ষোভ সমাবেশ এবং নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মুক্তিযুদ্ধে যারা বিরোধিতা করেছিল সেই অপশক্তি যখন এদেশে বিচরণ করছে। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা মাঠে নেমেছে। এই অপশক্তির দীর্ঘদিন বিচরণের ফল হচ্ছে জঙ্গীবাদ। রবিবার অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিবাদ সমাবেশ তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদ, বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, বাংলাদেশ থিয়েটার পরিষদের সাংঠনিক সম্পাদক আহমেদ গিয়াস, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য রফিকুল ইসলাম। সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, এই হামলাকারীরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। কারা এদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদা তৎপর। তাই বলে আমাদের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকার উপায় নেই। এদের প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই যথেষ্ট নয়। তার জন্য সকলকে সচেতন থাকতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটাতে হবে। আমাদের সন্তানদের মানবিক মূল্যবোধে গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে তাদের মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটবে, তারা বিপথগামী হবে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ॥ বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর জঙ্গী হামলার তীব্র নিন্দা করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। সংগঠনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যনির্বাহী পরিষদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের জনপ্রিয় লেখক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বরেণ্য অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের কাপুরুষোচিত হামলায় আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ। আমরা এই জঙ্গী হামলার তীব্র নিন্দা করি। বিবৃতি দাতারা হলেন, বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, অধ্যাপক অজয় রায়, কর্নেল (অব) আবু ওসমান চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, সাংবাদিক কামাল লোহানী, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, অধ্যাপক অনুপম সেন, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, স্থপতি রবিউল হুসাইন, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, ক্যাপ্টেন শিহাবউদ্দিন বীরউত্তম, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ বীরউত্তম, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অব), ডাঃ আমজাদ হোসেন, সমাজকর্মী নূরজাহান বোস, কবি রুবী রহমান, ড. নূরন নবী, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদজায়া সালমা হক, কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, সাংবাদিক চলচ্চিত্র নির্মাতা শামীম আখতার, অধ্যাপক আবুল বারক আলভী, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, সমাজকর্মী খোন্দকার আবদুল মালেক শহীদুল্লাহ, ড. ফরিদা মজিদ, সমাজকর্মী আরমা দত্ত, এ্যাডভোকেট জিয়াদ আল মালুম, এ্যাডভোকেট খন্দকার আবদুল মান্নান, অধ্যাপক আয়েশ উদ্দিন প্রমুখ। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ॥ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইতুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়েছে। প্রতিবাদলিপিতে বলা হয় প্রগতির গতিকে থামিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে অতীতেও জঙ্গীবাদী গোষ্ঠী বারবার মুক্তচিন্তার ধারক ও বাহক এবং অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যয়ে বিশ্বাসীদের ওপর হামলা করেছে। এভাবে পেছন থেকে কাপুরুষোচিত হামলা দেশের জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও প্রগতির পথকে রুদ্ধ করতে পারবে না। আমরা ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি এবং এর পেছনের মূলহোতাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন করবে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল জনকণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা মানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ওপর হামলা, প্রগতির ওপর হামলা, সৃজনশীলতার ওপর হামলা, পুরো শিক্ষক সমাজের ওপর হামলা। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবদা জানাই। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ ॥ ৪৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় পরিষদ এই ন্যক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা করছে এবং এর সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসীদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে। ইউজিসি চেয়ারম্যান এর নিন্দা ॥ জনপ্রিয় লেখক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও মুক্ত চিন্তার অগ্রপথিক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যাল, সিলেটের প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ॥ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংগঠনটি মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। কমিটির সভাপতি মেহেদী হাসান মানববন্ধনে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিরা দেশের অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধভাবে অরাজকতা সৃষ্টির করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে আসছে আর তারই ফলে জাফর ইকবাল ওপর হামলা হয়েছে। এ অপশক্তি চাই দেশের বর্তমান স্থিতিশীল অবস্থাকে বিনষ্ট করতে ও দেশে একটি অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করে নিজেদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে। জাফর ইকবালের বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের ওপর হামলার মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত করা। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ॥ প্রাণঘাতী হামলার প্রতিবাদ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বরিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মিহির কুমার রায়। সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাধব চন্দ্র দাশের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীন আখতার। চবি শিক্ষক সমিতি ॥ চবি শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। একই সঙ্গে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। জাফর ইকবালের ওপর হামলার প্রতিবাদে সারাদেশে মানববন্ধন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ॥ হামলার প্রতিবাদ এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাস্তির দাবি জানিয়েছে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়। জাবি ॥ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পশ্চিম পাশে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। ইবি ॥ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামের আয়োজনে বেলা সাড়ে ১১টায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। জবি ॥ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। খুলনা ॥ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে বেলা ১টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের হাদী চত্বরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। রাবি ॥ হামলায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন মানববন্ধন, বিক্ষোভ-মিছিল, সমাবেশ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। যশোর ॥ নৃশংস এ হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধনে করছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সুনামগঞ্জ ॥ হামলাকারী ফয়জুর রহমানের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের কলিয়ারকাপন এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করছে এলাকাবাসী। সিডনিতে মৌন মিছিল ॥ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে মৌন মিছিল করেছেন প্রবাসীরা। স্থানীয় সময় রবিবার বিকেলে সিডনির ল্যালাম্বা রেলওয়ে প্যারেডে এ মৌন মিছিল থেকে হামলাকারীদের শাস্তির দাবি জানানো হয়। সিডনিতে বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার বাংলাদেশীরা এ মৌন মিছিলে অংশ নেন।
×